ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মেঠোপথ এখন ব্যস্ত সড়ক

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

মেঠোপথ এখন ব্যস্ত সড়ক

হারুনুর রশিদ আমার এক বন্ধু ২০০৫ সালে সৌদি আরব যায়। প্রায় দশ বছর পর ২০১৫ সালে সে বাংলাদেশে আসে। গ্রামের বাজার থেকে সে তার বাড়ি যাওয়ার পথ দেখে চমকে ওঠে। গ্রামের বাড়িতে এক সপ্তাহ থাকার পর প্রথমত সে দুটি বিভাগে, বিশেষ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দারুণ পরিবর্তন দেখাতে পায়। একটি হলো বিদ্যুত আরেকটি হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় গত সাত বছরে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে একাত্তর পরবর্তী ত্রিশ বছরেও এত উন্নয়ন হয়নি। আমার শৈশবের একটা বড় অংশ কেটেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে। আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার মেঠোপথগুলো কতটা চলাচলের অনুপযোগী ছিল। উঁচু-নিচু গর্তে ভরা কাঁচারাস্তা দিয়ে আমাদের বই হাতে করে স্কুলে যেতে হতো। আর বর্ষকালে মূল রাস্তায় হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি থাকত। পায়ের জুতা খুলে এক হাতে জুতা আরেক হাতে বই নিয়ে স্কুলে যেতাম। গত দুই বছর আগে শৈশব কাটানো সেই সব গ্রামে গিয়ে বর্তমান রাস্তাগুলো দেখে তো ঠিক চিনতেই পারলাম না। এই সেই রাস্তা যার ওপর দিয়ে আমাদের চলাচল করতে অনেক সমস্যা হতো। আর এখন তো দেখছি তিন চাকার সিএনজি আর চার চাকার মাইক্রোবাসগুলো ডানা মেলে দেদার চলছে। আর গত সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি রাজবাড়ী জেলায় বাস করি। গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া, নাটোর ও রাজশাহীসহ আরও যতস্থানে গিয়েছি রাস্তা-সড়ক-মহাসড়কের ব্যাপক উন্নয়ন চোখে পড়েছে। রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানীবহ ইউনিয়নে এত রাস্তা পাকাকরণ হয়েছে যে, চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করা যাবে না। প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রোডস এ্যান্ড হাইওয়ে প্রকল্পের একটি সড়ক আমাদের বানীবহ ইউনিয়ন করা হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের গত সাত বছরে। মফস্বলের ছোট ছোট মেঠোপথগুলো এখন আর মেঠো পথ নেই তা এখন সড়কে পরিণত হয়েছে। গ্রামের কৃষকরা মাঠে বিভিন্ন রকমের ফসল উৎপাদন করে এখন দ্রুতই তা বিক্রির জন্য বাজারে আনতে পারছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে আনতে এখন আর কাঁচা রাস্তা দিয়ে ভ্যান গাড়ি ঠেলতে হচ্ছে না। সেই মেঠো পথ দিয়ে ইঞ্জিন ও ব্যাটারিচালিত গাড়িতে করে সহজেই বাজারে নিয়ে আসতে পারছে। রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানীবহ ইউনিয়নের বাড়িগ্রাম থেকে বানীবহ বাজার পর্যন্ত একটি পাকা রাস্তা হয়েছে। যা বেশ কিছু জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে। আপনাদের বিশ্বাসই হবে না যে গ্রামের মানুষ পার্শ¦বর্তী গ্রামের স্কুলে যাওয়ার সময় মেঠোপথে হাঁটু সমান কাদার কারণে পরনের প্যান্ট হাতে করে স্কুলে যেত। তারপর স্কুলের কাছে গিয়ে কোন পুকুরে হাত-পা ধুয়ে প্যান্ট শার্ট পরে স্কুলে ঢুকত। সেই গ্রামের মানুষ এখন সেই জীর্ণ মেঠোপথ দিয়ে ডিসকভারি মোটরসাইকেল চালিয়ে বাজারে আসে। গত বছরের শারদীয় দুর্গা পুজোর সময় মন্দির দেখতে গিয়ে মেঠোপথগুলো সড়কে পরিণত হওয়ার বাস্তব দৃশ্য দেখে রীতিমতো পুলকিত হয়েছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কগুলো উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বর্তমান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেনে পরিণত করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে সরকার এক লাখ ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সড়ক-মহাসড়কগুলোর উন্নয়নে যে অভূতপূর্ব বিপ্লব ঘটিয়েছে তা আমাদের আঞ্চলিক কানেকটিভিটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আর সেই দিনটি আমাদের খুব কাছে। রাজেন্দ্র্র্র কলেজ, ফরিদপুর থেকে
×