ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজত্ব শুধুই মেসি-রোনাল্ডোর

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

রাজত্ব শুধুই মেসি-রোনাল্ডোর

সেই ২০০৭ সালে কাকা জিতেছেন ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার। এর পর গত আট বছর গৌরবময় এই পুরস্কার ভাগাভাগি করে নিয়েছেন সময়ের দুই সেরা তারকা লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। এই লম্বা সময়ে আর কোন ফুটবলার হানা দিতে পারেননি মেসি ও রোনাল্ডোর রাজত্বে। বর্তমানে যে অবস্থা তাতে অদূর ভবিষ্যতেও এই সম্ভাবনা কম। ২০১৫ সালেও ফিফা ব্যালন ডি’অর জিতেছেন মেসি। এবার সেরা তিনে প্রথমবারের মতো জায়গা পান ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক নেইমার। তবে আগামী কয়েক বছর মেসি ও রোনাল্ডোর কাছ থেকে মুকুট নেয়া যেকোন ফুটবলারের জন্যই কঠিন বলে মনে করেন ফুটবল প-িতরা। গত আট বছরে অনেক ফুটবলারের আবির্ভাব হয়েছে। তবে সেসব চমক খুব বেশিদিন থাকেনি। যে কারণে কেউই মেসি ও রোনল্ডোর জায়গা দখল করতে পারেননি। ২০০৮ সালে ‘মেসি-রোনাল্ডো’ রাজত্ব শুরু করেন সি আর সেভেন। এরপরের চার বছর (২০০৯-১২) বর্ষসেরার মুকুট জয় করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে রোনাল্ডো পুনরুদ্ধার করেন ট্রফি। এবার ২০১৫ সালে আবারও সেরা হয়েছেন মেসি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেকর্ড আর নিজের নামটি যেন সমার্থকে পরিণত করেছেন; খেলছেন রেকর্ড ভাঙ্গাগড়ার খেলা। মূলত গোলের গৌরবময় রেকর্ডই ঝুলিতে ভরছেন মেসি। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে চলতি মৌসুমেও এগিয়ে চলেছেন দুরন্ত গতিতে। আর নতুন বছরটা তো শুরু করেছেন সোনায় মোড়ানো সাফল্য দিয়ে। ১১ জানুয়ারি মেসি প্রত্যাশিতভাবে জিতে নিয়েছেন ২০১৫ সালের ফিফা ব্যালন ডি’অর এ্যাওয়ার্ড। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার (ফিফা) সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের জুরিখে চোখ ধাঁধানো আলো ঝলমলে অনুষ্ঠানে নতুন ইতিহাস গড়েন ২৮ বছর বয়সী মেসি। বিশ্বের একমাত্র ও প্রথম ফুটবলার হিসেবে আগেই জিতেছেন টানা চতুর্থবার ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের মুকুট। এবার জিতে পাঁচবার এই অনন্য কৃতিত্ব দেখালেন তিনি। যেখানে আপাতত দু’চোখ মেলে তাকানোর দুঃসাহস আর কারও নেই। ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল। টানা চতুর্থবার গৌরবময় এ খেতাব জিতেছিলেন বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন তারকা। কিন্তু পরের দুই বছর (২০১৩ ও ২০১৪) মেসি মুকুট হারান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর কাছে। এবার সেই সি আর সেভেনকে পেছনে ফেলেই পঞ্চমবারের মতো ফিফা সেরা হয়েছেন বার্সা ডায়মন্ড। ২০১৫ সালটা স্বপ্নের মতো কেটেছে বার্সিলোনার। এই বছরে পাঁচটি শিরোপা জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠা ক্যাটালানদের অসাধারণ সাফল্যের প্রধান স্থপতি যথারীতি মেসি। নিজে গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা। আর দলকে ভাসিয়ে দিয়েছেন আনন্দের জোয়ারে। তার পুরস্কারই পেয়েছেন আরেকবার ফিফা সেরা হয়ে। ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার আর বিখ্যাত ফুটবল ম্যাগাজিন ফ্রান্স ফুটবলের ব্যালন ডি’অর একীভূত হয়ে ২০১০ সাল থেকে দেয়া হচ্ছে ফিফা ব্যালন ডি’অর পুরস্কার। চোটের কারণে গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রায় দুই মাস ময়দানী লড়াইয়ে ছিলেন না মেসি। তবু ২০১৫ সালে বার্সার জার্সিতে ৪৮ গোল করেন। গত মৌসুমে স্প্যানিশ লা লীগা, কোপা ডেল রে আর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতে ইউরোপের প্রথম ক্লাব হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রেবল জয়ের আনন্দে ভাসে বার্সা। আর বছরের হিসেবে ক্যাটালানরা ২০১৫ সালে জিতেছে রেকর্ড পাঁচটি ট্রফি। প্রতিদ্বন্দ্বী রোনাল্ডোর ব্যক্তিগত সাফল্যও অবশ্য কম ছিল না। গত বছর মেসির চেয়েও বেশি, ৫৪ গোল করেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ তারকা। তাও মাত্র ৫২ ম্যাচে। তবে স্পেনের সফলতম ক্লাবকে একটি শিরোপাও এনে দিতে পারেননি সি আর সেভেন। তাই তো তাকে দুই বছর পর হারাতে হলো সিংহাসন। সংক্ষিপ্ত তালিকার তৃতীয় ফুটবলার নেইমারের অবদানও কম নয় বার্সার অসাধারণ সাফল্যের পেছনে। ২০১৫ সালে ৪১ গোল করেন ব্রাজিলের এই মহাতারকা। এবার না পারলেও আগামীতে নেইমারই ব্যালন ডি’অরে রাজত্ব করবেন বলে ধারণা করছেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। ইতিহাসের প্রথম ও একমাত্র ফুটবলার হিসেবে পাঁচবার ফিফা ব্যালন ডি’অর জয়ের পরও বার্সিলোনার তারকার আক্ষেপ আছে। সেটি হচ্ছে, জাতীয় দল আর্জেন্টিনার হয়ে বলার মতো কিছু করতে না পারা। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপ ও ২০১৫ সালে কোপা আমেরিকায় তীরে এসে তরী ডোবান তিনি। এ কারণেই হয়ত আক্ষেপের সুরে মেসি জানিয়েছেন, এই পাঁচটি ব্যালন ডি’অরের বদলে যদি একটি বিশ্বকাপ ট্রফি জেতা যেত। এরপরও যে কীর্তিগাথা রচনা করেছেন মেসি তাতে তিনি তৃপ্ত হতেই পারেন। এ কারণেই ব্যালন ডি’অর পুনরুদ্ধার করার পর মেসি সাক্ষাতকারে বলেছেন, এই সাফল্য স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। আগের দুইবার জুরিখের মঞ্চেই দর্শকের আসনে বসে রোনাল্ডোর শ্রেষ্ঠত্ব দেখেছিলেন। টানা দুইবার ব্যালন ডি’অর জেতা সি আর সেভেনকে এবার পেছনে ফেলে মুকট পুনরুদ্ধারের আনন্দে ভাসছেন আর্জেন্টিনার এই ফরোয়ার্ড। এবার মেসি পেছনে ফেলেছেন বার্সিলোনা সতীর্থ নেইমারকেও। সুইজারল্যান্ডের জুরিখে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে পুরস্কার হাতে নিয়ে মেসি বলেন, দর্শকের সারিতে বসে ক্রিশ্চিয়ানোকে জিততে দেখার পর আবার আরেকটি ব্যালন ডি’অর জেতা, আবার এখানে এই মঞ্চে ফিরে আসা -এটা আমার জন্য খুবই বিশেষ একটা মুহূর্ত। পঞ্চমবারের মতো সোনার বলটি হাতে নেয়ার আনন্দে বার্সা ডায়মন্ড বলেন, এটা আমার পঞ্চম, অবিশ্বাস্য। এবারের ব্যালন ডি’অরের মাহাত্ম্যই আলাদা। এটা আমার দেখা স্বপ্নের চেয়েও অনেক বেশি।
×