ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ জামালের ১১ ফুটবলার তুলে নিল তিন ক্লাব

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

শেখ জামালের ১১ ফুটবলার তুলে নিল তিন ক্লাব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গভীর ষড়যন্ত্র চলছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ফুটবল ক্লাব শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেডের বিরুদ্ধে। শেখ কামাল টুর্নামেন্টে তাদের নিমন্ত্রণ করা হয়নি, দলটি এএফসি কাপ বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এশিয়ার অন্যতম সেরা ক্লাব হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে। ফলে ঈর্ষাপরায়ণ হয়েই কয়েকটি ক্লাব গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে গত কয়েক মাস ধরে। তাদের ইন্ধন জুগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কিছু কর্মকর্তা। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ উপলক্ষে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নিয়ম অনুযায়ী শেখ জামাল, শেখ রাসেল, ঢাকা আবাহনী ও চট্টগ্রাম আবাহনীসহ অন্য ক্লাবগুলোর কাছে তাদের খেলোয়াড় বুঝে নিয়ে ক্যাম্পে পাঠিয়েছিল। কথা ছিল বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ শেষ হলে বা বাংলাদেশ দল বিদায় নিলে বাফুফে সব ক্লাবগুলোর কাছে তাদের খেলোয়াড়দের বুঝিয়ে দেবে। সেটা বাফুফে করেছে ঠিকই, কিন্তু এখানে শেখ জামালের বিরুদ্ধে করা হয়েছে বিমাতাসুলভ আচরণ! তাদের ১১ ফুটবলারকে ফেরত দেয়া হয়নি। বরং তাদের বেশিরভাগ খেলোয়াড়কে দলবদলের জন্য তুলে নিয়ে যায় অন্য তিনটি ক্লাবের কর্মকর্তারা। এতে সহায়তা করেন বাফুফের কিছু কর্মকর্তা। তার আগে বাফুফের সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ শেখ জামালের খেলোয়াড় চাওয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে জানান, এমন কোন নিয়ম নেই! আগামী মার্চে এএফসি কাপের মূলপর্বে খেলবে শেখ জামাল। বাংলাদেশের কোন ক্লাব এবারই প্রথম এমন কৃতিত্ব দেখালো। এ আসরে অংশ নিতে ইতোমধ্যেই জামালের হয়ে খেলতে বাংলাদেশে চলে এসেছেন বিদেশিরা। এ কারণেই জাতীয় দল থেকে নিজেদের খেলোয়াড়দের ক্লাবে ফেরত নিতে চেয়েছিল শেখ জামাল। কিন্তু তাদের কোন খেলোয়াড় দেয়া হয়নি নানা অজুহাতে। সব মিলিয়ে এ জন্য বাফুফের ওপর স্বভাবতই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শেখ জামাল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাত। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। জাতীয় দলের টিম হোটেলে (পূর্বাণীতে)। পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাতে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের পরিচালক শেখ ইকবাল খোকন নিজের ফুটবলারদের নিয়ে যেতে আসেন। কিন্তু তিনি সফল হননি। বাফুফে তাকে বাধা দেয় এবং পুলিশ ডেকে আনে! মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় এ প্রেক্ষিতে ঘটনার আরও ডালপালা বিস্তৃত হয়। হোটেল পূর্বাণী থেকে সরাসরি বাফুফে ভবনে নিয়ে আসা হয় জাতীয় দলের ফুটবলারদের। কিন্তু সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন বিভিন্ন ক্লাবের কর্মকর্তারা। উদ্দেশ্য নিজ নিজ খেলোয়াড়দের ক্লাবে নিয়ে যাওয়া। ক্লাব কর্মকর্তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় ভবনে। কিন্তু তাতেও যেন কাজ হচ্ছিল না। ফুটবলারদের সঙ্গে টানা-হ্যাঁচড়ার অবস্থায় চলে যায় পরিস্থিতি। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে ফুটবলারদের সঙ্গে সভায় বসেন জাতীয় দলের ম্যানেজার ইলিয়াস হোসেন ও দলনেতা আজমল আহমেদ তপন। বাফুফে থেকে দেয়া একটি আবেদনে অধিনায়ক মামুনুল ইসলামসহ প্রায় অধিকাংশ ফুটবলারই ভবন থেকে সরাসরি বাড়ি যাওয়ার জন্য আবেদন করেন। সাবেক তারকা ফুটবলার ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ফুটবল কমিটির কো-চেয়ারম্যান আবদুল গাফফার অন্য কর্মকর্তাদের নিয়ে উপস্থিত হন বাফুফেতে। লক্ষ্য ক্লাবের আগের চুক্তিবদ্ধ ১১ ফুটবলারকে নিয়ে যাওয়া। এরা হলেন ঃ মামুনুল ইসলাম, রায়হান হাসান, শহীদুল আলম সোহেল, সোহেল রানা, শেখ আলমগীর কবির রানা, ইয়াসিন খান, ইয়ামিন মুন্না, জামাল ভুঁইয়া, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সাখাওয়াত হোসেন রনি ও মোনায়েম খান রাজু। শেখ জামালের সঙ্গে এরা চুক্তিবদ্ধ বলে ১১ জনকে নিয়ে যেতেই ক্লাব কর্মকর্তারা বাফুফেতে উপস্থিত হন। একই সঙ্গে আবাহনীর সত্যজিৎ দাস রুপু, শেখ রাসেলের সালেহ জামান সেলিম এবং চট্টগ্রাম আবাহনীর শাকিল মাহমুদ চৌধুরীও উপস্থিত হন। ফলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। তখন জাতীয় দলের ম্যানেজার ইলিয়াস হোসেন বলেন, ক্লাব কর্মকর্তাদের সবাইকে নিচে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। ফুটবলাররা যেখানে যেতে চায়, তাদের সেখানেই পাঠানো হবে পুলিশী প্রহরায়। পরে তাদের সঙ্গে ক্লাব কর্মকর্তারা যোগাযোগ করবেন।’ এরপরই ভবনের কনফারেন্স রুমে থাকা ফুটবলারদের জন্য তৃতীয় তলায় পুলিশী প্রহরা বাড়ানো হয়। গাফ্ফার বলেন, ‘আমাদের ক্লাবের সঙ্গে ওই ১১ জনের চুক্তি নবায়ন হয়েছে। অতএব তারা আমাদেরই খেলোয়াড়।’ বিভিন্নভাবে ক্লাব কর্মকর্তারা তাদের ফুটবলারদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। অনেকেই সফল হন। শেষ পর্যন্ত আবাহনীর ফুটবলাররাও চলে যান সত্যজিৎ দাস রুপুর সঙ্গে। বেরিয়ে যাওয়ার সময় আবদুল গাফফার ও রুপুর মধ্যে কিছুটা বাদানুবাদও হয়। অবশেষে খালি হাতেই বেরিয়ে যান গাফফার। আর বলে যান, ‘এটা শেখ জামালের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। হ্যাটট্রিক শিরোপা বঞ্চিত করার জন্যই এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।’ জাতীয় দলের ম্যানেজার ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘এগার প্লেয়ার নিরাপত্তা চেয়েছে আমাদের কাছে। তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার জন্য সবধরনের সহযোগিতা বাফুফে করবে। কোন ক্লাবে নয়, এখন আমাদের জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা উন্মুক্ত। কেননা এখনও দলবদল শুরু হয়নি। তাই ওই ১১ জন এখন কোন ক্লাবের খেলোয়াড় নন। তাদের কোন ক্লাবে পৌঁছানোর দায়িত্ব আমরা নেব না। কেবল বাড়ি যেতে চাইলে বাফুফে নিরাপত্তা দিবে। নতুন মৌসুমে তারকা ফুটবলারদের নয়া ঠিকানা (সম্ভাব্য) ॥ ঢাকা আবাহনী : জাহিদ হাসান এমিলি, ইয়াসিন খান, তপু বর্মণ, শহীদুল আলম সোহেল, জুয়েল রানা, ওয়ালী ফয়সাল, নাবিব নেওয়াজ জীবন ও হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস; চট্টগ্রাম আবাহনী : মামুনুল ইসলাম, রায়হান হাসান, সোহেল রানা, ইয়ামিন মুন্না, নাসির উদ্দিন চৌধুরী; শেখ রাসেল : সাখাওয়াত হোসেন রনি, জামাল ভুঁইয়া, মোনায়েম খান রাজু, আতিকুর রহমান মিশু, শেখ আলমগীর কবির রানা, নাসিরুল ইসলাম ও রাসেল মাহমুদ লিটন।
×