ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সবজি মেলা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

সবজি মেলা

বছরের শুরুতেই দারুণ সুসংবাদ। সবজি উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ভারত-চীনের পরেই রয়েছে আমাদের সবজি চাষী। তাদের জানাই অভিনন্দন। স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি নেই। একদিন আমরাই হবো গ্রহের সেরা সবজি উৎপাদনকারী। রাজধানীতে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত তিনদিনব্যাপী ‘জাতীয় সবজি মেলা ২০১৬’ ও ‘সবজি প্রদর্শনী’ দেশের সবজি চাষীদের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে। দেশের ইতিহাসে সবজি নিয়ে এমন বৃহৎ আয়োজন এবারই প্রথম। ‘হরেক রকম সবজি চাষে, সারা বছর অভাব নাশে’ প্রতিপাদ্যে শুরু হওয়া জাতীয় সবজি মেলা ও প্রদর্শনীতে ১৫৭ রকমের সবজি প্রদর্শিত হয়েছে। প্রতিবছর অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন, নদী ভাঙ্গন ও লবণাক্ততার কারণে হ্রাস পাচ্ছে শতকরা ১ ভাগ হারে কৃষি জমি। তারপরও দেশে চালের উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি, গমের উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ, সবজির উৎপাদন বেড়েছে পাঁচগুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। বছরে ১০ লাখ টন আম উৎপাদন করে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ আম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় রয়েছে নবম স্থানে। ৯৬ লাখ টন আলু উৎপাদন করে পৃথিবীর শীর্ষ আলু উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় রয়েছে ১০ম স্থানে। কৃষিতে যথেষ্ট উন্নতি করেছে বাংলাদেশ কৃষকদের জন্যই। পৃথিবীর প্রায় ৫০টি দেশে বাংলাদেশ থেকে সবজি রফতানি হচ্ছে। কৃষিক্ষেত হেসে ওঠে কৃষকেরই সৌজন্যে। অথচ বছরের কিছু কিছু সময়ে অনেক কৃষকের মুখে হাসি থাকে না। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন কৃষক। ফলে অর্থাভাবে তাদের জীবনমান নেমে আসে। অপরদিকে কৃষিপণ্য নিয়ে যারা ব্যবসা করেন তাদের অবস্থা পোয়াবারো। বাড়তি মূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি করে আসল লাভবান হন তারাই। মুনাফাই যাদের নীতি, বাজে অজুহাত দিতে তাদের বাধে না। যেমন দেশে সব ধরনের সবজির দাম আকস্মিকভাবেই বেড়ে যায় গত বছর। অর্থাৎ পরিকল্পিতভাবেই দাম বাড়ানো হয়ে থাকে। আশার কথা হলো, কৃষি উন্নয়ন ও কৃষকের স্বার্থরক্ষাকে প্রাধান্য দেয়ার সুফল দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। প্রতিবছরই বাম্পার ফলন হচ্ছে। ষোলো কোটি মানুষের দেশটিতে নানা কারণে প্রতিবছর কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পেলেও মাটির উর্বরতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে কুশলী কৃষকরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতার দিকে নিয়ে গেছেন। সরকারের নীতি এক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়েছে। বীজ ও সারের কোন সঙ্কট নেই। কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। ফলন বেশি হলে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে সরবরাহে ঘাটতি থাকবে না। সেক্ষেত্রে ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার একটা আশঙ্কাও উঁকি দিয়ে যায়। আবার আমদানিকৃত ফসল, বিশেষ করে চাল তুলনামূলক কম দামে বাজারে সরবরাহ করা হলে সেক্ষেত্রেও কৃষকের ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বলাবাহুল্য, কৃষকদের স্বার্থরক্ষাকারী কৃষিবান্ধব সরকার এসবের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখে। সিন্ডিকেট চক্র তথা মধ্যস্বত্বভোগীর কারসাজির কারণে কখনও কখনও সবজির বাজার চড়া হয়। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি বন্ধের পাশাপাশি কৃষকবান্ধব নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের আবশ্যকতা অস্বীকার করা যাবে না। কৃষকের অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় কৃষি আদালত গঠনের কথাও উচ্চারিত হচ্ছে। আমরা মনে করি আধুনিক এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরী যাতে করে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কেউই নিয়মমাফিক স্ব-স্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হয়। এক্ষেত্রে পণ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থারও আধুনিকায়ন জরুরী।
×