ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বগুড়ায় ইটভাঁটির নারী শ্রমিক

‘তাগেরে থোতা মুখ ভোঁতা হয়া গেছে’

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

‘তাগেরে থোতা মুখ ভোঁতা হয়া গেছে’

সমুদ্র হক ॥ গাঁয়ের নারী শুধু ঘর গেরস্থালি আর ফসলের মাঠে নয়, এখন ইটভাঁটিতেও কাজ করছে। কাছের অতীতে ইটভাঁটিতে মেয়েরা কাজ করতে চাইলে তারা শক্ত ও কঠিন কাজ করতে পারবে না এই অজুহাতে ফিরিয়ে দেয়া হতো। বর্তমানে চিত্রটি এতটাই পাল্টে গেছে যে ইটভাঁটির মালিকরা পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে নারী শ্রমিককে অগ্রাধিকার দেয়। উত্তরাঞ্চলের ইটভাঁটিগুলোতে এখন নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। বগুড়ার ইটভাঁটিগুলোতে বাইরের জেলার নারী শ্রমিকরা এসেও কাজ করছে। পরিবেশ সুরক্ষায় ইটভাঁটিগুলোতে এখন অধিক উচ্চতার চিমনি স্থাপিত হয়েছে। দ্রুত ইট বানানোর জন্য বিদ্যুতে চালিত অটো ব্রিক প্লেট আবিষ্কৃৃত হয়েছে। ইট বানানোর এই যন্ত্র খুবই তাড়াতাড়ি মাটি ছেনে ১০ থেকে ২০টি ইটের প্লেট বের করে দেয়। নারী শ্রমিকরা এই প্লেট বিশেষ কায়দায় সংগ্রহ করে। তারপর ইটগুলোকে আলাদা করে প্রথমে সাজিরে রাখে। পরে ইট পোড়ানোর জন্য ভাঁটিতে নেয়। বিদ্যুত ঠিকমতো থাকলে একেকজন নারী শ্রমিক দৈনিক রোজগার করে আড়াই শ’ থেকে ৩শ’ টাকা। বগুড়া সদরের বেজারা ভাটকান্দি সুলতানগঞ্জ শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা এলাকার ২৬টি ইটভাঁটির প্রতিটিতেই নারী শ্রমিকদের ইট বানাতে দেখা যায়। এক ইটভাঁটির সুপারভাইজার বললেন, আগে আশপাশের গ্রামের মহিলারা কাজ করত। তাদের কাজ দেখে মালিক সিদ্ধান্ত নেয় নারী শ্রমিকদের বেশি নেবে। বর্তমানে প্রত্যেক ইটভাঁটিতে বগুড়ার আশপাশের গ্রামের নারী ছাড়াও নওগাঁ গাইবান্ধা সিংড়া চলনবিলের গ্রামগুলো থেকে নারী এসে কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে জয়পুরহাট নওগাঁর উপজাতি সম্প্রদারের মেয়েরাও আছে। চাঁচাইতারা গ্রামের আলাল মিয়া বললেন, নারী শ্রমিকদের ইট বানানো দেখে অবাক হয়েছেন। পুরুষরা যে কাজ করতে হিমশিম খায় সেই কাজ নারী শ্রমিক কি দক্ষতার সঙ্গে করছে। মনেই হয় না আগে এই কাজ করেনি। জয়পুরহাটের নারী শ্রমিক আশা রানী ও স্বপ্না রানী বললেন, মেশিন থেকে ১০টি ইটের প্লেট কয়েকজনে ধরে মাটিতে নামানোর পর কেটে ভাগ করতে সময় লাগে মাত্র কয়েক মিনিট। ইটের ভারি প্লেট নামাতে যা কষ্ট। তারপর শুকানোর জন্য খাঁড়ি করে সাজিয়ে রাখতে তেমন কষ্ট নেই। চাঁচাইতরা গ্রামের শ্রমিক জাহান আরা বললেন ‘হামরা গতর খাট্যে কাম করি। আগে যারা কছিল ইটভাঁটির কাম পারমো না তাগেরে থোতা মুখ ভোঁতা হয়া গেছে।’ এই এলাকার ইটভাঁটিগুলোতে পরিবেশ অধিদফতরের মাপের চিমনি বসানো হয়েছে। তবে ইট বানানোর জন্য জমির টপ সয়েল ব্যবহার এখনও বন্ধ হয়নি। নারী শ্রমিকরা এ নিয়ে মাথা ঘামায় না। তাদের কথা : রোজগার করে জীবনমান তো উন্নত হয়েছে। নিজের তৈরি ইটের ওপরে টিনের ছাউনিতে ঘর বানাতেও পারছে।
×