ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ফখরুল

গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই এখন বিএনপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই এখন বিএনপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮০তম জন্মবার্ষিকী পালন করেছে বিএনপি। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা শেরেবাংলা নগর জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই এখন বিএনপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে সকালে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা জিয়ার মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পর জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনায় অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত। জিয়ার মাজারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফখরুল বলেন, বর্তমান নিষ্ঠুর শাসকগোষ্ঠী বিরোধী দল, ভিন্ন মত ও সমালোচনাকে সহ্য করতে পারছে না। এজন্য সরকার নানাবিধ সহিংসতার পাশাপাশি গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে বিরোধী দলের অস্তিত্বকে শূন্য করে দেয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হলে জনগণের ভোটের অধিকার, বাকস্বাধীনতা, জনগণের সংগঠন করার স্বাধীনতাসহ মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। আর এটাই এখন বিএনপির সবচেয়ে বড় কাজ। তিনি বলেন, আজ এই দিনে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার জিয়াউর রহমানের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সেই সঙ্গে তার আদর্শকে অনুসরণ করে দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের মুক্তির জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাব। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জিয়াউর রহমানের মাজারে এসে আমরা সেই শপথ গ্রহণ করছি। এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র নির্বাসিত হওয়ায় দেশ এখন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা উত্তরণের জন্য আমরা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে ক্ষান্ত ছিলেন না, দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করেছিলেন। পরবর্তীতে জনগণ তাকে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি রাষ্ট্রকে দ্রুত বিনির্মাণ করার জন্য সমগ্র জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে উন্নয়নের রাজনীতি শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধা, সৈনিক ও রাজনীতিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী। দেশের চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে আবির্ভূত হন তিনি। দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে তিনি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন এবং দেশকে সামনের দিকে নিয়ে গেছেন। মানুষের হারানো অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনর্প্রতিষ্ঠা করেন। তার জাতীয়তাবাদী দর্শনেই আমাদের জাতিসত্ত্বার সঠিক স্বরূপটি আবিষ্কৃত হয়, যা আমাদের ভৌগোলিক জাতিসত্ত্বার সুনির্দিষ্ট পরিচয় দান করে। আর তার বহুমত ও পথের লালন ও পরিচর্যা এবং দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদার আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। আজ আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করে গণতন্ত্র উদ্ধারের শপথ নিয়েছি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ সংগ্রামে আমরা জয়ী হব। ফখরুল বলেন, বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়নের ধারাবাহিক অংশ হিসেবে সোমবার নারায়ণগঞ্জের আদালতে মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করতে গেলে সোনারগাঁও থানা ও পৌর বিএনপির ৩৭ জন নেতাকর্মীকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ধরনের অমানবিক কাজের মাধ্যমে বিএনপিকে ধ্বংস করার চক্রান্ত কোনদিনই সফল হবে না। জিয়ার মাজারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, জিয়াউর রহমানের মাজার সরানোর চেষ্টা প্রসঙ্গে সরকারী দলের নেতারা যে বক্তব্য দিচ্ছেন তাকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। তবে তারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে জনগণের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেন। জিয়ার মাজার সরানো যাবে না মন্তব্য করে সরকারী দলের নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এ ধরনের বক্তব্য থেকে দূরে থেকে দেশের সঙ্কট নিরসনে এগিয়ে আসুন। সর্বদলীয় কনফারেন্সের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভা ॥ জিয়াউর রহমানই দেশে গণতন্ত্রের প্রবক্তা বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তার আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। জিয়াউর রহমানের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এ কথা বলেন। ফখরুল বলেন, সরকারের মতলব ভাল না। কারণ তারা ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করে এখন বলছে উন্নয়ন আগে গণতন্ত্র পরে। এটি তাদের মতলবের কথা। তিনি বলেন, সরকার জাতিকে বিভক্ত করতে চায়। কিন্তু জাতিকে বিভক্ত করে প্রকৃত উন্নয়ন হবে না। এতে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, সরকার মুখে উন্নয়নের কথা বলছে। আসলে তারা গণতন্ত্রের লেবাস পরে একদলীয় শাসন কায়েম করতে চায়। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের চিন্তা-চেতনা ও আদর্শকে ধারণ করে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। একই সঙ্গে তার নতুন ধারার উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতিকেও এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা এম এ হালিম প্রমুখ।
×