ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে সড়ক নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জনতা

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

কক্সবাজারে সড়ক  নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে  কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জনতা

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ অপরিকল্পিতভাবে ও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে দায়সারাভাবে সড়কের কাজ করা হচ্ছে দেখে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এ কাজটিতে পুকুরচুরির অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। গত বছরের ডিসেম্বরে ১০ কোটি ১১লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারের খুরুস্কুল- চৌফলদ-ি- ঈদগাঁও সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু হয়। কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওয়ের সঙ্গে জেলা শহরের দূরত্ব কমে যাওয়া, কৃষিপণ্যের সহজ বাজারজাতকরণ এবং আর্থসামাজিক অবস্থা ও জীবন-জীবিকার ব্যাপক উন্নয়নের লক্ষ্যে খুরুস্কুল ও চৌফলদ-ির মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া খুরুস্কুল-চৌফলদ-ি-ঈদগাঁও সড়ক নির্মাণের দাবি ছিল এলাকাবাসীর। প্রায় ১৯ কিলোমিটার সড়কটি প্রশস্ত ও সংস্কার না থাকায় কাক্সিক্ষত সুবিধা পাচ্ছিল না জেলাবাসী। সূত্রে জানা গেছে, সড়কটি দু’পাশে চার ফুট করে আট ফুট প্রশস্তকরনসহ সংস্কারের কাজটি দুই ভাগে ভাগ করা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে (দরপত্রনং-৩০৪-৯৫, ১০/১০/২০১৫ইং) কক্সবাজারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উদয়ন ও চট্টগ্রামের আবদুল হাকিম জয়েন্টভেঞ্চারে কাজটি পায়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ১০ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে ছয় কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কার্যাদেশে সিলকোট দেয়ার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না ওই নিয়ম। অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। রোলার করার কথাও মানছে না তারা। ঠিকাদার এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে চলছে এই অনিয়ম। কক্সবাজার জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ও খুরুস্কুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা রফিক উদ্দিন, আওয়ামী সমবায় লীগ জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার, ৪নং ওয়ার্ড আ’লীগ সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মিনু, উপজেলা কৃষক লীগ সভাপতি সঞ্জিত চক্রবর্তীসহ অনেকে বলেন, সড়কটি যে পরিমাণ প্রশস্ত করার কথা ছিল সিডিউলমতে সে পরিমাণ প্রশস্ত করা হচ্ছে না। সড়কটি প্রশস্ত করতে গিয়ে রাস্তার পাশে মাটি কেটে খনন করে নিচে ২২ ইঞ্চি ও প্রস্থ চার ফুট করার কথা, তাও করছে না। খোয়ার সঙ্গে বালি মেশানোর নিয়ম থাকলেও এখন বালির সঙ্গে খোয়া মেশানো হচ্ছে। কাজে এফএম বালি ২-৩ বার দেয়া ও ১২শ’ কেজি ওজনের রোলার গাড়ি ব্যবহার করা এবং পানি ছিটানোর নিয়ম থাকলেও সওজের কতিপয় কর্মকর্তার অভয় পেয়ে তাও মানা হচ্ছে না এখানে। ৩-১ ইঞ্চি খোয়া দিয়ে রোলার গাড়ি দ্বারা চাপা দিতে হয় ছয় ইঞ্চি ও সাব-বেইজ ছয় ইঞ্চি করার নিয়ম থাকলেও ঠিকাদাররা তা না মানায় এলাকাবাসী ঠিকাদারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন জেলা প্রশাসক বরাবর। শুক্রবার স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা প্রতিবাদ করায় ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছে। স্থানীয় প্রভাষক ফিরোজ আহমদ, মাস্টার আলী হোসেন, ব্যবসায়ী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, খুরুস্কুল-চৌফলদ-ি ও ঈদগাঁও সড়কের সংস্কারকাজ চলছে, কিন্তু যেদিকে ভাল সেদিকে দায়সারাভাবে কাজ হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে খারাপ জায়গাগুলোতে কাজ না করে বিল উত্তোলন করার চেষ্টা করছে ঠিকাদাররা। যেভাবে ভয়াবহ দুর্নীতি আর অনিয়ম হচ্ছে, কাজ বুঝিয়ে দেয়ার আগেই সেই আগের অবস্থায় ফিরে যাবে- তাতে কোন সন্দেহ নেই। ওই প্রকল্পে খুরুস্কুল ইউনিয়ন অংশে দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করা না হলে এলাকাবাসী মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের হটানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। খুরুস্কুল ইউপি চেয়ারম্যার মাস্টার আবদুর রহিম বলেন, সড়কটি যেহেতু আমার এলাকার সেহেতু এটার কাজ ভালভাবে হোক আমিও চাই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনিয়ম করায় আমি দাঁড়িয়ে থেকে কাজ আদায় করেছি। সাব-ঠিকাদার বজল আহম্মদ জানান, সড়কটি আরও ২-৩ বছর পর প্রশস্তকরণের কাজ করতে হতো। সড়কটি যেহেতু বালুমাটির ওপর সেহেতু বাজেটে অবশ্যই গাইডওয়াল, পানি নিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণের বরাদ্দ থাকতে হতো। কিন্তু এখানে তা নেই। সিডিউলমতে কাজ হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স উদয়ন কনস্ট্রাকশনের মালিক ঠিকাদার আবুল কাশেম সিকদার বলেন, টেন্ডার নিয়ে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত প্রায় এক কোটি টাকার কাজ করে ফেলেছি। সওজ কর্তৃপক্ষ এ কাজে সন্তুষ্ট। আমাদের শুধু ইটের খোয়া ও বালি দিয়ে প্রশস্তকরণ কাজ চলছে। সড়ক প্রশস্তকরণে গর্ত ভরাটসহ সিডিউলমতে কাজ চলছে। এখানে কোন দুর্নীতি হচ্ছে না, সড়ক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কাজের তদারকি করছেন। তাই দুর্নীতি করারও কোন সুযোগ নেই। কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া বলেন, এখানে কোন দুর্নীতি হচ্ছে না। এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন জানান, কাজে অনিয়ম হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়েছি। যদি তা সঠিক হয় তাহলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×