ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গুচ্ছ পদ্ধতিতে এবার সাজানো হচ্ছে একুশে গ্রন্থমেলা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

গুচ্ছ পদ্ধতিতে এবার সাজানো হচ্ছে একুশে গ্রন্থমেলা

মনোয়ার হোসেন ॥ চলছে বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির দ্বিতীয় পক্ষ। আর ১১ দিন পেরুলেই আসবে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। নতুন সংযোজন হিসেবে ১৫টি গুচ্ছে সাজানো হচ্ছে এবারের মেলা। এই প্যাভিলিয়নকেন্দ্রিক গুচ্ছগুলোকে কেন্দ্র করেই মেলার একাংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বসবে সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থাসমূহের স্টল। এবার একাডেমি প্রাঙ্গণের পরিবর্তে এখানেই থাকবে শিশু কর্নার। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ১৫ জন শহীদের নামে হবে গুচ্ছগুলো। মেলার আরেক অংশ বাংলা একাডেমি আঙিনায় থাকবে সররকারী-বেসসরকারী প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের স্টল। বাঙালীর মননের প্রতীক হয়ে ওঠা বইমেলাকে ঘিরে চলছে আয়োজক বাংলা একাডেমির কর্মতৎপরতা। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি একাডেমি ও উদ্যানে স্টলের কাঠামো নির্মাণে কাজ চলছে তুমুল গতিতে। ইতোমধ্যেই মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা সংস্থা, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যম সংস্থাকে স্টল বরাদ্দ সম্পন্ন হয়েছে। এখন মেলা সফল করার কর্মযজ্ঞ চলছে গ্রন্থমেলার দুই আঙিনা বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এবারের মেলার আরেক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বড় পরিসরে আয়োজন। সেই সূত্রে দুই অংশের প্রায় ৫ লাখ বর্গফুটজুড়ে অনুষ্ঠিত হবে একুশের বইমেলা। মেলায় এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে উদ্যানের উন্মুক্ত মুক্ত মঞ্চ। একাডেমির ভেতরে মূল মঞ্চের পাশাশাপাশি এখানে প্রতিদিন থাকবে পথনাটকসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মেলা প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান জনকণ্ঠকে বলেন, এবারের গ্রন্থমেলা সাজবে নতুন আঙ্গিকে। পরিসর বাড়ানোর পাশাপাশি নান্দনিক পরিবেশ রাখতে উদ্যান অংশের মেলাকে সাজানো হবে ১৫টি গুচ্ছে। এই গুচ্ছগুলোর নামকরণ করা হচ্ছে ১৫ জন ভাষাশহীদ ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামে। যাঁদের নামে গুচ্ছগুলো হচ্ছে তাঁদের মধ্যে কয়েকজন হলেনÑ শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী, সুরস্রষ্টা আলতাফ মাহমুদ, ভাষাসংগ্রামী বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিন, সাংবাদিক সিরাজউদ্দীন হোসেন, জ্যোর্তিময় গুহ ঠাকুরতা, আলীম চৌধুরী, ড. ফজলে রাব্বি প্রমুখ। এছাড়া গুচ্ছের ভেতরে থাকা শিশু কর্নারটি উৎসর্গ করা হচ্ছে ফয়েজ আহমদ ও রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের নামে। শামসুজ্জামান আরও বলেন, এবার গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিন ৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব। এতে অংশ নেবেন পৃথিবীর নানা প্রান্তের ১২টি দেশের কবিরা। মেলার আয়োজক একাডেমি সূত্র জানায়, নিরাপত্তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে গ্রন্থমেলার পরিসর। নব আঙ্গিকে বেশ খোলামেলা পরিবেশে প্রায় ৫ লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে সাজবে মেলা। এ কারণে ঘিঞ্জি পরিবেশের পরিবর্তে মেলায় আসা পাঠক ও দর্শনার্থীরা পাবেন স্বস্তিকর পরিবেশ। এই প্রথম মেলার শোভা বাড়াতে স্টলগুলোকে ভাগ করা হচ্ছে ১৫টি গুচ্ছে। এবার উদ্যানের ভেতরে থাকছে শিশু কর্নার। বই কেনার পাশাপাশি শিুশুদের মন রাঙাতে এই কর্নারে থাকবে নানা মজার অনুষঙ্গ। গুচ্ছ পদ্ধতিতে স্টলের স্থান নির্ধারণের লটারি অনুষ্ঠিত হয় মঙ্গলবার। প্যাভিলিয়নগুলোকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের নির্ধারিত স্থান। মেলার মূল আকর্ষণ সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থাগুলো থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমগুলোর স্টল থাকবে একাডেমি প্রাঙ্গণে। উদ্যান অংশে দর্শনার্থীদের ঢোকার জন্য থাকছে চারটি প্রবেশদ্বার। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট গেট, শাহবাগের চারুকলার উল্টোদিকের ছবির হাট গেট, টিএসসির উল্টোপাশের গেট ও কালি মন্দিরের ফটক দিয়ে মেলায় প্রবেশ করবেন দর্শনার্থীরা। একইভাবে মেলা থেকে বেরুনোর জন্যও থাকবে চারটি প্রবেশদ্বার। এবার ১৩টি প্রকাশনা সংস্থাকে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল), মাওলা ব্রাদার্স, আগামী প্রকাশনী, অনুপম প্রকাশনী, সাহিত্য প্রকাশ, অবসর, পাঠক সমাবেশ, অন্যপ্রকাশ, অনন্যা, সময় প্রকাশন, কাকলী প্রকাশনী, অন্বেষা প্রকাশন ও পাঞ্জেরি পাবলিকেশনস্্ লিমিটেড। ১৮টি প্রকাশনা সংস্থাকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে চার ইউনিট করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, নবযুগ, শোভা প্রকাশনী, বিশ্বসাহিত্য ভবন, প্রথমা, অনিন্দ্য প্রকাশ, পার্ল পাবলিকেশন, তাম্্রলিপি ও কথা প্রকাশ। ১৪৯টি প্রকাশনা সংস্থাকে এক ইউনিট, ১০৮টি প্রকাশনা সংস্থাকে দুই ইউনিট ও ৩৩টি প্রকাশনা সংস্থাকে তিন ইউনিট করে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মেলায় অংশ নেয়া সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা হচ্ছে ৩২১। এর পাশাপাশি একাডেমির অংশে ২০টি সরকারী প্রতিষ্ঠান, ২১টি বেসরকারী সংস্থা ও ২৪টি গণমাধ্যম সংস্থাকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, এবার আমরা নান্দনিক ও গুণগত মানসম্পন্ন একটি মেলার আয়োজন করতে চাই। সে লক্ষেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। ২০ জানুয়ারি গুচ্ছের ভেতরে থাকা স্টলের স্থান নির্ধারণের লটারির ফল প্রকাশের পরদিন অর্থাৎ ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে স্টলসজ্জার কাজ শেষ করতে হবে। বাকি দিনগুলো বাংলা একাডেমি মেলার শোভা বর্ধনের কাজ করবে। ফলে এবার মেলা আগের চেয়ে অনেক বেশি গোছানো হবে। তিনি আরও বলেন, এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চটিও মেলার অংশ হবে। এখানে মাসব্যাপী পথনাটক প্রদর্শনী হবে। আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে একাডেমি প্রাঙ্গণের মূল মেলামঞ্চে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে স্টলসজ্জা : এবারের মেলায় প্রকাশনা সংস্থাগুলোর স্টল বরাদ্দ দেয়া হবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে। মোট ১৫টি গুচ্ছে এবারের মেলা সাজবে। প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পাওয়া ১৩টি প্রকাশনা সংস্থা ও বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়নকে কেন্দ্র করে ১৪টি গুচ্ছ হবে। যাতে একটি করে প্যাভিলিয়ন ছাড়া এক বা দুইটি চার ইউনিটের স্টল, ৩ বা ৪টি তিন ইউনিটের স্টল, ৭ বা ৮টি দুই ইউনিটের স্টল এবং ৮ থেকে ১২টি এক ইউনিটের স্টল দিয়ে সাজানো হবে। শুধুমাত্র শিশুতোষ প্রকাশনা নিয়ে সজ্জিত হবে একটি গুচ্ছ। যেখানে প্যাভিলিয়নের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গায় শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য থাকবে নানা অনুষঙ্গ। এছাড়া পাঠকদের চলাচলের সুবিধার্থে মেলার অভ্যন্তরেও থাকবে সুপ্রশস্ত রাস্তা। স্টল বিন্যাসে পরিবর্তন : এবার স্টল বিন্যাসেও পরিবর্তন আনছে বাংলা একাডেমি। দুই পাশেই উন্মুক্ত থাকবে এবারের স্টলগুলো। ফলে ১ ইউনিটের স্টলগুলো আগের আয়তনের চেয়ে অনেক বেশি স্থান পাবে। এছাড়া প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে চৌচালা ঘরের মতো করে স্টল তৈরি করে দেয়া হবে। ফলে বৃষ্টি হলেও স্টলের ভেতরে পানি ঢোকার সুযোগ কমে যাবে। এছাড়া প্রতিটি স্টলে বাধ্যতামূলকভাবে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র রাখতে হবে।
×