ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার

ব্যয় বাড়ল ৪৪৬ কোটি, সময় ’১৭ সালের জুন

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

ব্যয় বাড়ল ৪৪৬ কোটি, সময় ’১৭ সালের জুন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই বাড়ল মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। অবশেষে মূল ব্যয় ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা থেকে ৪৪৬ কোটি ২০ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় দাঁড়াল এক হাজার ২১৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অন্যদিকে বাস্তবায়নের সময় দুই বছর বাড়িয়ে করা হচ্ছে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া আরও নয়টি প্রকল্পও অনুমোদন দেয়া হয়েছে এ সভায়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। অনুমোদিত সব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয হবে মোট চার হাজার ৮৩০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৬০৩ কোটি ৩৮ লাখ, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭৭৬ কোটি ১৭ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৫১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। অন্যদিকে মগবাজার মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণে আর সময় না বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের জুনের মধ্যেই এটি সমাপ্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে নির্মাণ কাজ যাতে গুণগত মানসম্পন্ন হয়, সেজন্য তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন জনদুর্ভোগ যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে তেজগাঁও শিল্প এলাবকায় আর কোন কারখানা স্থাপন না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেননা এটি শিল্প এলাকা হলেও এখন থেকে শুধু অফিস বা অন্য কোন স্থাপনা তৈরি করা গেলেও সরকারী কিংবা বেসরকারী কোন শিল্প কারখানা আর স্থাপন করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর অপর নির্দেশনা হচ্ছে, রংপুরে বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেখানে পিডিবি আছে সেখানে পিডিবিই কাজ করবে আর যেখানে আরইবি আছে সেখানে আরইবি কাজ করবে। কেউ কারও সঙ্গে যুক্ত হবে না। তাছাড়া বালিতে খনিজ সম্পদ অনুসিন্ধানের ক্ষেত্রে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ও যৌথভাবে কাজ করবে এবং বিচারপতিদের জন্য নির্মিতব্য সুউচ্চ আবাসিক ভবন প্রকল্প এলাকায় সুইমিং পুল তৈরি করা যায় কিনা এবং কক্সবাজার বিমানবন্দর এলাকার ৪ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। একনেক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আযম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা সচিব কানিজ ফাতেমা, আইএমইডি সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, জিইডির সদস্য ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য গোলাম ফারুক, শামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরীসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন, রংপুর জোন, বাস্তবায়নে ব্যয় হবে এক হাজার ৩৩৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশের নদীবক্ষের বালিতে মূল্যবান খনিজের উপস্থিতি নির্ণয় ও অর্থনৈতিক মূল্যায়ন, ব্যয় হবে ৩৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এলইডি লাইন (সিকেডি এ্যাসেমব্লিং প্ল্যান্ট ইন ইটিএল, ব্যয় হবে ৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সুপ্রীমকোর্টের মাননীয় বিচারপতিগণের জন্য সুউচ্চ আবাসিক ভবন নির্মাণ, ব্যয় হবে ১৭৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। নীলফামারী-জলঢাকা সড়ক উন্নয়ন, ব্যয় হবে ৬৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ইস্টাবলিস্টমেন্ট অব শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ এ্যান্ড ৫০০ বেডের মেডিক্যাল কলেজ হসপিটাল এট সিরাজগঞ্জ, ব্যয় হবে ৬৩৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। মান্দা শহীদ কামরুজ্জামান টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপন, ব্যয় হবে ৭৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সহায়তা (দ্বিতীয পর্যায়), ব্যয় হবে ৬৪ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় হবে এক হাজার ১৯৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, মগবাজার-মৌচাক প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানোর কারণ হচ্ছে, প্রকল্প এলাকায় সেবা প্রদানকারী সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রম থাকায় ফ্লাইওভারের কাজ চলমান অবস্থায় স্থানভিত্তিক, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিটি পাইল ও ফাউন্ডেশন ডিজাইন পৃথক পৃথকভাবে করায় সার্বিকভাবে প্রকল্পের পাইল সংখ্যা ১৯৬টি, পাইল লেনথ ১৭ হাজার ৯১৫ মিটার ও পাইল ক্যাপের সাইজ বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ ইউটিলিটি পরিষেবা অক্ষুণœ রেখে প্রতিটি ফাউন্ডেশনের ডিজাইন কাস্টমাইজ করা হয়। ফলে কাজের সময় ও ব্যয় উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে ভূমিকম্পের প্রকোপ ও মাত্রা বেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্প হওয়ায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনোলজির (বুয়েট) পরামর্শে অধিকতর ভূমিকম্প সহনের জন্য ফ্লাইওভারে পট বেয়ারিং এবং এসটিইউ সংযোজন করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০০০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে যৌথ বিনিয়োগে ফ্লাইওভার নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী মগবাজার-মৌচাক (সমন্বিত) ফ্লাইওভার তৈরিতে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য জরিপ করা হয়। জরিপ পরবর্তীতে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট হতে আর্থিক সহায়তায় এবং সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থে মোট ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে (এর মধ্যে সরকারী তহবিলের ২০০ কোটি ৫৭ লাখ ও সংস্থা দুটির ঋণ সহায়তা থেকে ৫৭২ কোটি ২৩ লাখ টাকা) এ ফ্লাইওভার নির্মাণের মূল প্রকল্পটি ২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেকে অনুমোদন লাভ করে। এ সময় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয় ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর পর দুই পর্যায়ে প্রকল্পটির মেয়াদ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এ সময় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণে পরামর্শক ব্যয় এবং বেতন ভাতার ব্যয় সমন্বয়ের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রকল্পটির মোট ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে আন্তঃখাত ব্যয় সমন্বয় করে। পরবর্তীতে প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। ২০১৫ সালের ১৭ নবেম্বর প্রকল্পটির ওপর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার বেশকিছু সুপারিশ প্রতিপালন করা হলে একনেক অনুমোদনের সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশন। এরপরই অনুমোদন দেয়া হলো সংশোধনী প্রস্তাব।
×