ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু

ঢাকাকে বসবাস উপযোগী করতে মেয়রদের বিশেষ ভূমিকা জরুরী

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২০ জানুয়ারি ২০১৬

ঢাকাকে বসবাস উপযোগী করতে মেয়রদের বিশেষ ভূমিকা জরুরী

গত বছর (২০১৫) বিশ্ব ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) বসবাসের দিক বিবেচনা করে বিশ্বের বিভিন্ন শহরের ওপর যে জরিপ চালায় তাতে দেখা যায়, বিশ্বে বসবাসের জন্য সবচেয়ে অনুপযোগী শহর হিসেবে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে উক্ত সংস্থার জরিপ অনুযায়ী বসবাসের দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে অযোগ্য শহর নির্বাচিত হয়েছিল। আবার ২০১৩ সালে ওই সংস্থার জরিপে বসবাসের দিক থেকে গোটা বিশ্বে ঢাকার অবস্থান খারাপের দিক থেকে ছিল দ্বিতীয়। এ ধরনের খবরগুলো দেশের সচেতন সকলের জন্যই উদ্বেগের। আর এর মূল কারণ যে রাজধানী ঢাকার ধ্বংসাত্মক উন্নয়ন নীতি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার ধ্বংসাত্মক উন্নয়ন নীতির বিষয়টি আজ হতে বহুকাল পূর্বেই হয়ত গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস আঁচ করতে পেরেছিলেন। আর তাই তো তিনি বলেছিলেন, ‘ভাই সব, তোমরা প্রাচুর্য, সম্পদ আহরণের জন্য এত কঠোর পরিশ্রম করে প্রত্যেকটি ইট, পাথর উলটিয়ে আঁচড়ে দেখছ; কিন্তু যাদের জন্য তোমাদের সমস্ত জীবনের কঠোর শ্রমের ফল রেখে যাবে, সেই সন্তানদের যথার্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য কতটুকু সঠিক পরিকল্পিত নগরায়ন করেছ।’ আসলেই তো তাই। রাজধানী ঢাকার ধ্বংসাত্মক উন্নয়ন নীতির দিকে দৃষ্টিপাত করলে গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিসের কথার বা বক্তব্যের শতভাগ মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। এ কথা সকলেরই জানা আছে যে, আঞ্চলিক বৈষম্যের সূত্র ধরে স্বাধীন বাংলাদেশের রূপরেখা রচিত হয়েছিল। আজ সেই স্বাধীন দেশেই আঞ্চলিক বৈষম্য লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে দেখতে ৪৫ বছর পার হয়ে যাচ্ছে, অথচ দেশটিতে সুষম উন্নয়ন এখন পর্যন্ত বাস্তবে রূপলাভ করেনি। এ কথা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে, বিপদ-আপদ, দুর্ঘটনা, ভূমিকম্প, সুনামির ওপর কারও হাত নেই এবং রোধ করাও সম্ভব নয়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে একটু সচেতন হলে সরকার ও জনগণ কর্তৃক জলাশয় ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ, অপরিকল্পিত ফ্যাক্টরি-কারখানা নির্মাণ করে একটি শহরের ওপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি করা, একটি শহরকে জ্বলন্ত চুল্লিতে পরিণত করা, এক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে পুরো একটি শহরকে পানির নিচে তলিয়ে দেয়া, একই রাস্তা বার বার খোঁড়াখুঁড়ি করে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলা, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে দুর্গন্ধময় পরিবেশ তৈরি করা, যানজট, ধুলা-বালি, ধোঁয়া আর মশার উপদ্রবকে জনগণের নিত্যসঙ্গী বানানো, পানি-বিদ্যুত-গ্যাস সঙ্কটে শহরবাসীকে ভোগান্তির হাত থেকে তো অন্তত রক্ষা করা যেতে পারে। আমাদের দেশের রাজধানী ঢাকাকে আতঙ্কিত ও অপ্রস্তুত শহর হিসেবে প্রায়ই উল্লেখ করা হয় এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও কম হয় না। কিন্তু বিষয়টি ‘বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে’-এর মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ ও যানজটমুক্ত করতে নানা পরিকল্পনার কথা শোনা গেছে। সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে নিত্যনতুন পরিকল্পনাও তৈরি হয়। আবার এসব বিষয় নিয়ে প্রায়ই সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেসব পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার কোন উদ্যোগ দেখা যায় না। যেহেতু রাজধানী ঢাকাকে নিয়ে বলা হচ্ছে, সেহেতু রাজধানী ঢাকার কিঞ্চিৎ ইতিহাস এখানে আলোচনা করা খুব একটা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। স্বাধীনতার পূর্বে বিভিন্ন রাজা-বাদশা, সুবেদার ও সম্রাটের শাসনামলে বাংলার রাজধানী পরিবর্তন হয়ে ক্রমান্বয়ে ঢাকা বা জাহাঙ্গীরনগর, বিহারের রাজমহল, মুর্শিদাবাদ, কলকাতা এবং অবশেষে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ঢাকা পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল আগরতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার প্রতিষ্ঠার কথা এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, কুষ্টিয়ার চুয়াডাঙ্গা (তৎকালীন) হবে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী (তথ্যসূত্র : এটিএন বাংলা পরিবেশিত তথ্যচিত্র ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে)। ততদিনে মুক্তিবাহিনী চুয়াডাঙ্গাকে হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করে ফেলেছে। কিন্তু এই খবর সারা দুনিয়ায় প্রচার হয়ে গেলে নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কথা ভেবে রাজধানী চুয়াডাঙ্গা থেকে মাত্র ২৮ কিমি দূরে, ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায়, যেটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে। পরবর্তীতে সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়। যা হোক, বিশ্ব ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) গত কয়েক বছরের (২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫) জরিপ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে, আর তা হচ্ছে ঢাকাকেন্দ্রিক নগরায়ন টেকসই নয়- যা প্রতিনিয়ত প্রতিটি নগরবাসী এবং যে কোন সাধারণ নাগরিক মাত্রই উপলব্ধি করতে পারেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন আমরা এত পিছিয়ে? স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থা ভালই বলতে হবে। ঢাকায় নেই কোন সামরিক যুদ্ধের হুমকি বা বড় ধরনের সহিংস অপরাধের উপস্থিতি, নেই কোন সাম্প্রদায়িক বা গোষ্ঠীগত সহিংসতায় হাজার হাজার জনের মৃত্যুর রেকর্ড, নেই অপহরণের প্রাচুর্যতা, নেই পশ্চিমাদের ঢাকার প্রতি বিদ্বেষ। এখানে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাব্যবস্থা ধনী দেশগুলোর মতো না হলেও একেবারে যে অপ্রতুল তা কিন্তু নয়। কিন্তু পাবলিক পরিবহন ব্যবস্থা বলতে যা বোঝায় তা ঢাকায় নেই। অপরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থা ও জনগণ কর্তৃক ট্রাফিক আইন না মানার পাশাপাশি সুষ্ঠু গণপরিবহন ব্যবস্থার অভাবে ঢাকাতে বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা, যা ঢাকার যানজট সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। এই যানজটের কারণে মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে কার্যক্ষমতা ও মনোযোগ। ঢাকা এমন একটি শহর যেখানে পথচারীদের চলাচলের জন্য সামান্যতম যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকা উচিত সেটুকুও যেন নেই। যতটুকু আছে সেখানেও হকাররা পুলিশ ও নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে বসায় হাট-বাজার। এক শ্রেণীর মানুষের সীমাহীন অর্থলিপ্সা আর দুর্বৃত্তসুলভ মানসিকতা রাজধানীকে ভয়াবহ ইট-কাঠের বস্তিতে পরিণত করছে। কয়েক বছর আগে পুরান ঢাকার নিমতলীতে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের বিস্ফোরণে কিছুতেই সর্বগ্রাসী নারকীয় অগ্নিকা- ঘটত না, যদি প্লাস্টিক ও রাসায়নিক দ্রবাদিসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের ফ্যাক্টরি ও কারখানা আবাসিক এলাকার দালানকোঠাকে বিপজ্জনক মৃত্যুপুরী না করে তুলত। ঢাকা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় ঢাকায় বড় আকারের অঘটন ঘটলে যে পরিমাণ ক্ষতি হবে, তা হবে ভয়াবহ অকল্পনীয় ও অপরিমাণযোগ্য। শরীরের কোন অংশে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির কারণে যেমন ওই অংশে টিউমার, গোদ রোগ বা মরণব্যাধি ক্যান্সারের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে মানুষ যেমন তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়, ঠিক তেমনিভাবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ওপর নানা দিক থেকে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে- এ যেন টিউমার, গোদ রোগ বা মরণব্যাধি ক্যান্সারের মতোই অবস্থা, যা ধ্বংসাত্মক উন্নয়ন নীতির অনুরূপ। রিস্ক এ্যাসেসমেন্ট টুলস ফর ডায়াগনসিস অব আরবান এরিয়াসের জরিপে ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্বের ২০টি শহরের মধ্যে অন্যতম ঢাকা। ঢাকা মহানগরীর প্রায় ৩ লাখ ২৬ হাজার পাকা ভবনের মধ্যে ৭২ হাজার ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে আছে। উইকিপিডিয়ায় দেয়া তথ্য মতে, ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি হাইতির রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সে ২৫ কিমি বিস্তৃৃত ভূমিকম্পে নিহত হয়েছেন তিন লাখেরও বেশি মানুষ। গৃহহীন হয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি এবং প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস, এ্যাসেম্বলি বিল্ডিং, প্রিন্স ক্যাথেডাল ও মেইন জেলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাংলাদেশ জনসংখ্যার ভারে নিমজ্জিত একটি দেশ। রাজধানী ঢাকায় প্রায় আড়াই কোটি মানুষের বসবাস এবং দেশের বিপুল সংখ্যক জনগণ কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে রাজধানীমুখী হওয়ায় এ সংখ্যা প্রতিদিনই অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে। ঢাকার ওপর বর্তমানে জনসংখ্যার চাপসহ নানা দিক থেকে যে অস্বাভিক চাপ বিরাজ করছে তাতে করে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকায় হলে এবং তা রিখটার স্কেলে ৭ কিংবা তার একটু উপরের মাত্রার হলেই ঢাকা ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ ঘটে গেলে সে ক্ষেত্রে বাড়িঘর, অফিস-আদালত, ফ্যাক্টরি, শিল্পকারখানার ধ্বংসস্তূপের পাশাপাশি বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেলে এবং পানি ও গ্যাসের পাইপলাইন ফেটে গেলে কি ভয়াবহ অবস্থা দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে জাপানের শিল্পনগরী কোবের ভূমিকম্পে বেশিরভাগ লোক মৃত্যুবরণ করে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক ও গ্যাস লাইনের অগ্নিকা-ে। হাইতির ঘটনা থেকে তাই আমাদের শিক্ষণীয় বিষয় আছে আর তা হচ্ছে সময় থাকতেই হুঁশিয়ার হওয়া। ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমানোর জন্য ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ এখন অত্যন্ত জরুরী বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি)-তত্ত্বাবধায়নে ১৪-১৫টি শিল্পকারখানা আছে, যার অধিকাংশ সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে। সুতরাং বিসিআইসির এ্যান্ড হেড অফিস ঢাকার বাইরে সুবিধাজনক কোন স্থানে করা যেতে পারে। বাংলাদেশ সুগার ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিএসএফআইসি)-তত্ত্বাবধানে যে ১৫টি ইন্ডাস্ট্রি আছে, যার ১০টি উত্তরবঙ্গে এবং ৩টি দক্ষিণবঙ্গে এবং অপর দুটি ফরিদপুর ও জামালপুরে। সুতরাং বিএসএফআইসি-এর হেড অফিসকে রাজশাহীতে বা উত্তরবঙ্গের সুবিধাজনক কোন স্থানে স্থানান্তর করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, বিসিআইসি এবং বিএসএফআইসি-এর হেড অফিসে প্রায় এক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে। বড় একটি সেক্টর যার কথা না বললেই নয়, সেটি হচ্ছে রফতানিমুখী গার্মেন্টস সেক্টর। আর এই গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রফতানি করে প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। বিজিএমইএ-এর তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত ঢাকা রিজিওনে রয়েছে প্রায় ২৮৩৩ এবং চট্টগ্রাম রিজিওনে রয়েছে প্রায় ৬১৭ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। এছাড়া আরও বিভিন্ন জেলায় লোকাল অনেক ফ্যাক্টরিও আছে। এ সমস্ত গ্যার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করে। বিশেষ করে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য উভয়ের চলাচল হয় চট্টগ্রাম ও মংলা পোর্ট দিয়ে। অর্থনীতির পরিভাষায় উৎপাদের উপকরণ ও উৎপাদিত পণ্য নির্বিবাদে চলাচলের বা স্থানান্তরের সুযোগ থাকলে যে কোন স্থানের বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত সুফল সংযুক্ত অন্যান্য এলাকায়ও পৌঁছানোর কথা। তুলনামূলকভাবে পণ্য চলাচল সহজ ও সাশ্রয়ী হলে আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাস পেতে পারে। এক্ষেত্রে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বিকেন্দ্রীকরণ অত্যন্ত জরুরী। অনুরূপভাবে মৎস্যভবন, বাংলাদেশ জুটমিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিসহ অনেক সরকারী-বেসরকারী অফিস-কারখানা-ইন্ডাস্ট্রি যেগুলোকে ঢাকা থেকে দেশের অন্যত্র স্থানান্তর করা অত্যন্ত জরুরী। এ ব্যাপারে বুয়েট, রুয়েট, কুয়েট, চুয়েটসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং সরকারী ও বেসরকারী প্রকৌশল সেক্টরের অনেক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করাসহ পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। আর এক্ষেত্রে ড্যাপকে (টিটেইল এ্যারিয়া প্ল্যান) অবশ্যই কার্যকরী করতে হবে। তবে আশার কথা এই যে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ঢাকাকে পরিষ্কার রাখতে ২০১৬ সালকে পরিচ্ছন্ন বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আবার ঢাকাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন রাখার কর্মসূচীর উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সম্প্রতি বলেছেন, ঢাকাকে পরিষ্কার রাখতে প্রত্যেককে মেয়রের ভূমিকা পালন করতে হবে। সেইসঙ্গে ঢাকাকে বসবাসের একটি যোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে সবাই মিলে ঢাকাকে নিজের ঘরের মতো সাজানোরও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের পক্ষ থেকেও ইতোপূর্বে এ ধরনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করতে এবং এ ধরনের কর্মসূচী পালন করতে দেখা গেছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। মেয়রদ্বয়ের এসব কথাবার্তা ও পরিষ্কারকরণ কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, ঢাকাকে পরিষ্কার রাখাসহ এটিকে বসবাসের একটি যোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। কিন্তু তাঁদের দু’জনের পক্ষে কি সম্পূর্ণ ঢাকাকে পরিষ্কার রাখা ও বসবাসের যোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব, নাকি এক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে এসে একযোগে কাজ করতে হবে? প্রত্যেক সচেতন ব্যক্তি মাত্রই এ প্রশ্নের উত্তরে বলবেন, এক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে মোবাইল, ইন্টারনেট ও ই-কমার্স সুবিধা এখন মানুষের হাতের নাগালে। এক শহর থেকে অন্য শহরে তথ্যের আদান-প্রদান ও ভিডিও কনফারেন্স কয়েক মুহূর্তের ব্যাপার মাত্র। বর্তমানে দেশে রয়েছে অনেক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, যেখানে কর্মরত রয়েছেন একঝাঁক তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি। রাত-দিন নিরলস পরিশ্রমের কারণে দেশবাসীর কাছে তাঁরা আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন। এ সকল মিডিয়া অবশ্যই পারে এই বিশাল কার্যে মানুষের আস্থা ও সমর্থন যোগাড় করে দিতে। গণমাধ্যমের পাশাপাশি সরকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের এক্ষেত্রে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা আবশ্যক যেন ধ্বংস আর মৃত্যুর চিহ্ন মুছে নতুন ও উন্নত বাসযোগ্য মহানগরী হিসেবে গড়ে ওঠে আমাদের রাজধানী শহর ঢাকা, যেখানে আমরা নিজেদেরসহ আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আধুনিক ও উন্নত জীবনের শুভ সূচনা করব নিশ্চয়- এই হোক আমাদের সকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আর এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণকল্পে আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি মেয়রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে কাজের কাজ শুরু করতে হবে এখন থেকেই এবং এর কোন বিকল্প নেই। লেখক : শিক্ষাবিদ শবশনধনঁ@ুধযড়ড়.পড়স
×