ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে রওশনকে পার্টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা’ ॥ এরশাদ বললেন রওশন অবৈধ, আমিই চেয়ারম্যান

জিএম কাদের ইস্যুতে আবার ভাঙ্গনের মুখে জাতীয় পার্টি

প্রকাশিত: ০৮:১২, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

জিএম কাদের ইস্যুতে আবার ভাঙ্গনের মুখে জাতীয় পার্টি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাবেক মন্ত্রী ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান করায় আবারও ভাঙ্গনের মুখে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রওশন এরশাদকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেন তার অনুসারীরা। সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রওশনের গুলশানের বাসায় দ্বিতীয় দফা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাবলু বলেন, এরশাদ দলীয় গঠনতন্ত্র না মেনেই তার ছোট ভাই জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে কোন ফোরামেই তিনি আলোচনা করেননি। গঠনতন্ত্রের ৩৯ ধারা বলে তিনি একা কাউকে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা দিতে পারেন না। আর গঠনতন্ত্রে এমন কোন পদও নেই। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা গঠনতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে আজকের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে রওশন এরশাদকে দলের এ্যাক্টিং চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তাছাড়া আগামী জাতীয় সম্মেলনে জিএম কাদেরকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি ও রুহুল আমিন হাওলাদারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে, যা নিয়মবহির্ভূত। এ সিদ্ধান্ত আমরা মানি না। বাবলুর ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় রাতেই রংপুরে সংবাদ সম্মেলন করে রওশনকে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করাকে ‘সম্পূর্ণ অবৈধ’ বললেন তার স্বামী পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ। এরশাদ বলেন, ‘আমিই পার্টির চেয়ারম্যান। সভাপতিম-লীর সভা ডাকার এখতিয়ার শুধুই আমার। আমি ছাড়া কেউ এ সভা ডাকতে পারেন না। ডাকলেও তা হবে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। রওশনকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করাটাও অবৈধ। যারা করেছে তাদের উদ্দেশ্য অসৎ।’ এর আগে দুপুরে রওশন এরশাদের গুলশানের বাসভবনে পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে অংশ নেয়া এক মন্ত্রী রওশনকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান করে আরেকটি জাতীয় পার্টি করার প্রস্তাব দেন। উপস্থিত অন্য মন্ত্রীরা তাতে সমর্থন দিলেও রওশন আরও অপেক্ষা করতে বলেন। রওশন বলেন, দলের চেয়ারম্যানের কাছে আমরা জানতে চাইব কেন তিনি আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে এ সিদ্ধান্ত নিলেন। রবিবার রংপুরে দলের উত্তরাধিকার হিসেবে ভাই কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেন এরশাদ নিজেই। এ ঘটনায় ফের বেঁকে বসেন বিরোধীদলীয় নেতা ও এরশাদের সহধর্মিণী রওশন। সোমবার জাপার তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ ক’জন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিকে নিয়ে গুলশানের বাসভবনে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন রওশন। বৈঠকে রওশনের নেতৃত্বে নতুন দল গঠনের প্রস্তাব দেন শীর্ষনেতারা। এমন বাস্তবতায় কাদেরকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আবারও দলকে কোথায় নেবে তাই এখন দেখার বিষয়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরের বৈঠকে অংশ নেয়া এক মন্ত্রী রওশনকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান করে আরেকটি জাতীয় পার্টি করার প্রস্তাব দেন। উপস্থিত অন্য মন্ত্রীরা তাতে সমর্থন দিলেও রওশন আরও অপেক্ষা করতে বলেন। উল্লেখ্য, এর আগেও দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কাদেরকে বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন এরশাদ। কিন্তু রওশনের চরম বিরোধিতার মুখে তা করতে পারেননি। বয়স বাড়ায় কে হচ্ছেন দলের পরবর্তী উত্তরসূরি? এ নিয়ে জাপা নেতাকর্মীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই আছে নানা আলোচনা। যারা চান দলটি টিকে থাক, তাদের সবার মত একটাই। এরশাদের অবর্তমানে একমাত্র যোগ্য উত্তরসূরি ভাই জিএম কাদেরই। তার বিকল্প নেই। তাছাড়া তৃণমূলের জনসমর্থন তার দিকেই। এ রকম চিন্তা থেকেই হয়ত এরশাদও নিজের অবর্তমানে ভাইকে দলের অভিভাবক হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। জাপা নেতারা বলছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে এরশাদ ও রওশনের মধ্যে দ্বন্দ্ব আবারও প্রকাশ্য হয়। এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও রওশন কিছু নেতাকে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। গঠন করেন বিরোধী দল। কিন্তু ভাইয়ের নির্দেশে নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে দলীয় কর্মকা- চালিয়ে যান জিএম কাদের। এরপর ভাইয়ের পাশেই আছেন তিনি। ক্ষমতার লোভে অনেকটা আলাদা চলছেন রওশন। সম্প্রতি জিএম কাদেরকে নিয়ে রাজনীতির মাঠে নেমেছেন এরশাদ। তৃণমূলের দাবির প্রেক্ষিতে তাকে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। রওশনের বৈঠকে প্রশ্ন ওঠে- পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ কোন্ এখতিয়ারে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করেছেন? বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন, জিএম কাদেরের বিষয়টি নিয়েই সন্ধ্যায় আপনাদের জানানো হবে। রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রংপুরে এক কর্মী সম্মেলনে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ আগামী এপ্রিলে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের ঘোষণাও দেন। পার্টি চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে আহ্বায়ক এবং এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদারকে সদস্য সচিব করে জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করেন। এরপরই বিষয়টি নিয়ে রওশনপন্থীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। এরপর সোমবার জরুরী বৈঠকের ডাক দেন রওশন এরশাদ। তার গুলশানের বাসভবনে দুপুর বারোটায় এই বৈঠক শুরু হয় এবং শেষ হয় দুপুর আড়াইটায়। প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে এরশাদের কর্মকা-ের কঠোর সমালোচনা করেন বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা। সেই সঙ্গে কো-চেয়ারম্যান করার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ। বৈঠকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুসহ জাতীয় পার্টির সাত সংসদ সদস্যসহ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য অংশ নেন। এরপর সন্ধ্যায় রওশনের বাসায় আরেক দফা বৈঠক হয়। এর পরপরই সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেন রওশনপন্থীরা। এ বিষয়ে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, দলে প্রেসিডিয়াম সভা না করে চেয়ারম্যান এ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাছাড়া জিএম কাদের মন্ত্রী থাকাকালে কোন্ কর্মীর উপকার করেছেন? ব্যারিস্টার আনিস আরও বলেন, উনি (জিএম কাদের) যখন মন্ত্রী ছিলেন তখন দল চালাতে কোন সমস্যা হতো না। আর আমরা মন্ত্রী হওয়াতেই দল চালাতে সমস্যা- এটা কেমন কথা। প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানি না।
×