ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রশ্নের মুখে ধোনির নেতৃত্ব

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

প্রশ্নের মুখে ধোনির নেতৃত্ব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সময় বড় নিষ্ঠুর। দীর্ঘ আটাশ বছর পর তার হাত ধরে বিশ্বকাপ (২০১১) পুনরুদ্ধার করেছিল ভারত। প্রথমবারের মতো উঠেছিল আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে। ঠা-া মাথায় ম্যাচ বের করে আনার অসাধারণ ক্ষমতা যাকে দিয়েছিল ‘ক্যাপ্টেন কুল’ উপাধি। সেই মহেন্দ্র সিং ধোনির অবস্থা আক্ষরিকই খারাপ। বিশ্বকাপের সেমি থেকে বিদায় নেয়ার পর বাংলাদেশে এসে ক্রিকেটের মোড়লরা যখন ওয়ানডে সিরিজে হারে তখনই প্রশ্নটা বড় হয়ে সামনে আসে। তখন উল্টো রাগে দায়িত্ব ছাড়ার হুমকি দিয়েছিলেন! তারপরও কর্তারা তাকে আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে টি২০-ওয়ানডে হারের পর এবার অস্ট্রেলিয়ায় টানা তিন ওয়ানডে হারে সিরিজ শেষ, প্রশ্নটা তাই আসতে বাধ্য। সেটাই হয়েছে। প্রশ্ন ওঠায় উল্টো ক্ষেপে গেছেন ক্যাপ্টেন কুল, ‘আমার নেতৃত্ব নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে তবে ভারতবাসীর স্বার্থে মামলা করা হোক। কারণ আমি এ নিয়ে কিছু বললে তো আবার স্বার্থের সংঘাত দেখা দেবে!’ রবিবার তৃতীয় ওয়ানডেতে ৩ উইকেটের হারে দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ খোয়ানোর পর সংবাদ মাধ্যমের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন ধোনি। এর মধ্য দিয়ে অনেক কিছুর ইঙ্গিত দেন তিনি। ভারতীয় দলের খোঁজ যারা রাখেন তারা সেটি জানেন। বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া সফরে হুট করেই টেস্ট থেকে অবসর নেন ধোনি। সাদা পোশাকের দায়িত্ব ওঠে ‘ক্রেজি’ বিরাট কোহলির কাঁধে। শুরুতেই বাজিমাত করেন কোহলি। দীর্ঘ ২২ বছর পর শ্রীলঙ্কার মাটিতে সিরিজ জয়ের পর ঘরের মাটিতে শীর্ষ দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে নাস্তানাবাদ করে ছাড়ে তার দল। অনেকে তিন ভার্সনেই কোহলির হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়ার পক্ষে মত দেন। যদিও ইন্ডিয়ান বোর্ড (বিসিসিআই) কর্তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, মার্চ-এপ্রিলে আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত রঙিন পোশাকের নেতত্বে থাকছেন ধোনিই। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় টানা তিন ওয়ানডেতে ভারতের হারের ধরন দলটির ভক্তদের জন্য আসলেই যন্ত্রণাদায়ক। ৩০৯, ৩০৮ ও ২৯৫ রান করে যথাক্রমে ৫, ৭ ও ৩ উইকেটে হারে ধোনির দল। এক সময় যাকে আধুনিক ওয়ানডের সেরা ফিনিশার ভাবা হতো ব্যাট হাতে সেই ধোনির অবস্থাও সঙ্গিন। তিন ম্যাচে ১৮, ১১ ও ২৩ রানের ইনিংস খেললেও সেটি মোটেই তার স্টাইলের সঙ্গে যায় না। যার প্রভাব পড়ছে নেতৃত্বে। ফলে ফিল্ডিং প্লেসমেন্টে হামেশাই ভুল করছেন তিনি। যেমন দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের সময় জর্জ বেইলি যখন বেধড়ক পেটাচ্ছিলেন তখনও ভারতের লং-অন, লং-অফ ছিল পুরো অরক্ষিত। রবিচন্দ্রন আশ্বিন ১ ওভারে ২ রান দেয়ার পরই তাকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেয়া হয়! অধিনায়ক ধোনির এমন অসংখ্য ভুল-ত্রুটি এই সিরিজে ভারতের লজ্জায় বাড়তি কাটা হয়ে এসেছে। তবে সমালোচনার মাঝেও নেতৃত্ব নিয়ে ধোনি তার ভাবনাটা বাংলাদেশ সফরে ব্যর্থতার মাঝেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। যখন তিনি বলেন, ‘আমি ক্রিকেট উপভোগ করছি। যদি আমাকে সরিয়ে দিয়ে ভারতের ক্রিকেটে ভাল হয়, তাহলে আমি অবশ্যই নেতৃত্ব ছেড়ে একজন খেলোয়াড় হিসেবে খেলে যাব।’ দলের জয়টাই প্রথম উল্লেখ করে ধোনি আরও জানিয়েছিলেন, ‘শেষ কথা হচ্ছে ভারত জিতুক, অধিনায়ক কে, সেটি বিষয় নয়। এটা আমার কাছে কেবল একটা কাজ, একটা দায়িত্ব। যদি বোর্ড (বিসিসিআই) মনে করে তাহলে তারা আমাকে অব্যাহতি দিতে পারে।’ অবস্থা যা তাতে ব্যর্থতার এ যাত্রা অব্যাহত থাকলে টি২০ বিশ্বকাপ দিয়েই হয়ত ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনি-যুগের শেষ হতে পারে। তার আগে অস্ট্রেলিয়া সফরের বাকি দুই ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজটা তার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। ক্যানবেরায় চতুর্থ ওয়ানডে বুধবার। তিন টি২০ ২৬, ২৯ ও ৩১ জানুয়ারি।
×