ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্ছৃঙ্খল জাহিদকে বহিষ্কারে বাধা কোথায়?

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

উচ্ছৃঙ্খল জাহিদকে বহিষ্কারে বাধা কোথায়?

রুমেল খান ॥ ২০০৮ সাল। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে মারদেকা কাপ। খেলছে বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম। মাঠে বসে খেলা দেখেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন। ম্যাচে বিপক্ষ দলের ছয়জনকে কাটিয়ে গোল করলেন জাহিদ হোসেন। সেটা দেখে মুগ্ধ হলেন স্টেডিয়ামে উপস্থিত বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন। ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে গিয়ে তিনি জাহিদকে বললেন, তোমার মতো পায়ের কাজ থাকলে আমি ইউরোপে খেলতাম!’ কোন সন্দেহ নেই খুব বড় প্রশংসাবাণী। কিন্তু এর মর্ম এবং মূল্যায়ন কোনটিই হয়নি জাহিদের ক্ষেত্রে । বার বার জন্ম দিয়েছেন বিতর্কের, অঘটনের। কোচ নিকোলা ইলিয়েভস্কি মাঠ থেকে তুলে নেয়ার পর সাইড লাইনে রাখা পানির বোতলে লাথি মেরেছেন, ঠিকমতো অনুশীলনে যোগ দেননি, ইনজুরির কথা বলে লীগে খুব বেশি ম্যাচ না খেলায় মোহামেডানকে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন ... এমন আরও কত কি। জাহিদের এমন ইমেজ থাকায় চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত শেখ কামাল গোল্ডকাপে অসাধারণ খেলার পরও কোচ ফ্যাবিও লোপেজ তাকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে জাতীয় দলে নেননি। প্রায়ই যিনি বলেন, নিজেকে শুধরে নেবেন, নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করবেন; সেই জাহিদ আসলে মোটেও বদলাননি। রয়ে গেছেন আগের মতোই। সর্বশেষ আরও একটি কা- ঘটিয়েছেন ২৭ বছর বয়সী এই উইঙ্গার। শৃংখলা ভঙ্গের কারণে পেয়েছেন শাস্তি। যে কারণে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচে (বাহরাইনের বিপক্ষে) তাকে খেলানো হয়নি। শুধু তাই নয়, জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকেই বহিষ্কার করা হয়েছে তাকে। কথায় আছে, ‘চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না পড়ে ধরা!’ কিন্তু জাহিদ চুরিটাও ঠিকমতো করতে পারেননি, ধরা পড়েছেন হাতে নাতে। ঘটনা হচ্ছে এই : মতিঝিল বিমান অফিসের সামনে একটি হোটেলে জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাম্প। ক্যাম্প হোটেলে বুধবার সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের পর রাতে হোটেল রুমে মাতাল অবস্থায় আবিষ্কার করা হয়েছে তাকে! শুধু তাই নয়, তার সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া গেছে এক নারীকেও! আর যায় কোথায়, দ্রুত বিষয়টা কানে যায় টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে। অনুশীলন থেকে সরিয়ে দেয়া হয় জাহিদকে। শুধু তাই নয়, সতীর্থদের সঙ্গে খাওয়া, টিম মিটিং ... কোথাও তাকে রাখা হয়নি। এরপর বাফুফে জানায়, জাহিদকে ক্যাম্প থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাফুফে জানায়, গুরুতর শৃংখলা ভঙ্গের অপরাধে জাহিদকে ক্যাম্প থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ, বাফুফের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে জাহিদের ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত হয়নি এখনও। কারণ এখন জাতীয় দলের খেলা চলমান ছিল। দশ বছর ধরে জাতীয় দলের হয়ে খেলে আসছেন জাহিদ। খেলেন ভাল তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি কখনই গড়ে তুলতে পারেননি তিনি। ভেসে গেছেন উচ্ছৃংখলতায়, করেছেন একের পর এক অপকর্ম। বাফুফে দ্বারা এ জন্য অনেকবারই শাস্তি পেয়েছেন। কিন্তু তাতেও ‘ভাল’ হতে পারেননি তিনি। এ প্রসঙ্গে অনেক ফুটবলপ্রেমীই ফোড়ন কেটেছেন, ‘কুকুরের লেজ কখনও সোজা হয় না!’ বাফুফে সাধুবাদ পেতেই পারে জাতীয় দলের স্বার্থে বিলম্ব না করে জাহিদকে ক্যাম্প থেকে বহিষ্কার করায়। অনেকেই বলেছেন, জাহিদের মতো ফুটবলার দলে থাকলেই কি আর না থাকলেই বা কি? প্রবাদে আছে ‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভাল!’ বাফুফে সেই নীতিই অবলম্বন করেছে। তবে তাদের আরও কঠোর হওয়া উচিত। যেমন তাদের উচিত জাতীয় দল থেকে জাহিদকে কমপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য বহিষ্কার করা। এই শাস্তি যদি প্রয়োগ করা হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে দলের অন্য ফুটবলাররা এরকম উচ্ছৃংখল আচরণ ও শৃংখলা ভঙ্গ করার সাহস পাবে না, সাবধান হয়ে যাবে। ২০১৩ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আচরণগত ত্রুটির কারণে জাহিদ বিরাগভাজন হয়েছিলেন বাফুফে কর্মকর্তাদের। টুর্নামেন্ট শেষে গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি তার শাস্তির সুপারিশই করে বসে। যদিও সেই শাস্তি এখন কার্যকর করেনি বাফুফে। জাহিদের প্লেয়িং ক্যারিয়ারগ্রাফ এরকম: মোহামেডানে ২০০৫-২০০৮ পর্যন্ত, ব্রাদার্স ইউনিয়নে ২০০৯ সালে, মোহামেডানে ২০১০ সালে, শেখ জামাল ধানম-িতে ২০১১ সালে, আবাহনী লিমিটেডে ২০১২ সালে, শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রে ২০১৩ সালে, মোহামেডানে ২০১৪ সালে এবং শেখ রাসেলে ২০১৫ সালে। এখন দেখার বিষয় জাহিদের ক্যারিয়ার শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। বাফুফে কি দীর্ঘমেয়াদের জন্য নিষিদ্ধ করবে জাহিদকে? সেটাই এখন দেখার বিষয়।
×