ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মশালায় তথ্য প্রকাশ

ভূমিকম্প মোকাবেলায় ৩৫০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

ভূমিকম্প মোকাবেলায় ৩৫০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে বড় মাত্রায় কোন ভূমিকম্প আঘাত হানলে উদ্ধার কাজ চালানোও অসম্ভব হবে। অধিকাংশ ব্রিজ ভেঙে পড়ায় বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে ঢাকা। আর বিমানবন্দরের অবকাঠামো বিপর্যস্ত হওয়ায় বাংলাদেশও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বহির্বিশ্ব থেকে। ফলে উদ্ধার কাজে অংশ নিতে বিদেশ থেকে কেউ বাংলাদেশে আসতে পারবে না। অন্যদিকে, ২০১৮ সালে সিলেটের শ্রীমঙ্গল এলাকায় ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন আশঙ্কা মাথায় রেখে ভূমিকম্প ও দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ৩৫০ কোটি টাকার যন্ত্র ক্রয় করবে। ঢাকার দুই সিটি ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জন্য এসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে। সোমবার রাজধানীর স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে ‘ভূমিকম্পের সচেতনতা ও প্রস্তুতি’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ওই কর্মশালার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ভূমিকম্প ও দুর্যোগ মোকাবেলায় ঢাকার দুই সিটি ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের জন্য ৩৫০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হবে। ভূমিকম্প আমাদের জন্য এক নতুন অধ্যায়, এর সঙ্গে পূর্বে আমরা সম্মুখীন হয়নি। সচেতনা সৃষ্টির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ কিন্তু এজন্য আমরা দায়ী নই। উন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের দায় আমাদের নিতে হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উন্নত হচ্ছে আর তার ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে আমাদের। এতকিছুর পরও আমাদের এ ঝঞ্জা নিতে হচ্ছে। বাঙালী জাতির যে কোন ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলার সাহসিকতা রয়েছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ঝুঁকি মোকাবেলায় বাঙালী সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। ভূমিকম্প আমাদের জন্য নতুন অধ্যায় হলেও এ ঝুঁকি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো। তবে প্রতিটি মানুষকে ঝুঁকি মোকাবেলায় সচেতন হতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ কে এম মাকসুদ কামাল বলেন, বাংলাদেশে ভাসমান ভূমিকম্প হওয়ার মতো ১৩টি স্থান রয়েছে। প্রতি এক শ’ বছর অন্তর অন্তর ভাসমান ভূমিকম্প হয়। সর্বশেষ ১৯১৮ সালে সিলেটের শ্রীমঙ্গল শহরের কাছাকাছি ভূমিকম্প হয়েছিল। ২০১৮ সালে সেই একই স্থানে ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে পূর্বের তুলনায় মাত্রা কম হবে। ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ বলেন, ঢাকায় দুই হাজার ৩০০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৭৬ ভাগই প্রশস্ত নয়। এখানে বিল্ডিং ভেঙে গেলে ফায়ার সার্ভিস যেতে পারবে না। রাস্তা ব্লক হয়ে যাবে। ভূমিকম্পের ভয়াবহতা উল্লেখ করে মেজর শাকিল বলেন, ভূমিকম্প হলে সারাশহরে আগুন ধরে যাবে। বিদ্যুত থাকবে না, পানি থাকবে না, পুরো শহর অন্ধকার হয়ে যাবে। রোগীর ভিড় সামলাতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাবে। দুভার্গ্যজনকভাবে এ নিয়ে আমাদের কোন প্ল্যান নেই। ভূমিকম্প মোকাবেলায় অন্ততপক্ষে বছরে আমাদের ৫Ñ৬ বার বসতে হবে। এছাড়া দেশে বড় মাত্রায় কোন ভূমিকম্প আঘাত হানলে অধিকাংশ ব্রিজ ভেঙে যাবে, ঢাকার সঙ্গে অন্য অঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরও বলেন, ভূমিকম্প হলে রাস্তা ব্লক হয়ে যাবে। তাই বিকল্প পন্থা হিসেবে নদীপথকে যতটা সচল করা যাবে ততটাই আমাদের জন্য মঙ্গল। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার লক্ষ্যে স্বংয়ক্রিয়ভাবে গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগ বন্ধ হওয়ার ব্যবস্থা চালু করার পরামর্শও দেন তিনি। ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপালে সহায়তা কাজে অংশগ্রহণকারী মানবিক সাহায্যকর্মী শশাঙ্ক সাদী বলেন, নেপাল ভূমিকম্প বিষয়ে পূর্বেই সচেতন ছিল। বলা হচ্ছিল, যে কোন সময় নেপালে ভূমিকম্প আঘাত হানতে পারে। নেপালে কিন্তু পুরাতন বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তুলনায় নতুন ভবন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা নিজেদের প্রস্তুতির জায়গাটা না ভেবে নিজেদের মধ্যে প্যানিক তৈরি করছি কিনা তাও ভাবতে হবে। ওই কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সেনায়েত গেব্রেজেবিয়ার, অতিরিক্ত সচিব আব্দুল কাইয়ুম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহপরিচালক মোঃ রিয়াজ আহমেদ, ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রি জে আলী আহমেদ প্রমুখ।
×