ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বি’বাড়িয়ায় তাণ্ডব

যুবদল নেতা গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

যুবদল নেতা গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি আওয়ামী লীগের

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৌলবাদী সহিংস ঘটনায় উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক শাহেদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে গত দুদিনে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হলো। পুলিশ জানায়, আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনের অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রদের তা-বের ঘটনায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। বলা হয় ভিডিওফুটেজ দেখে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এ ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। পুলিশের কোন গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন। চলতি মাসের ১১ ও ১২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রদের তা-বের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, রাতভর মাদ্রাসা ছাত্ররা রাস্তার ওপর আগুন জ্বালিয়ে, মাদ্রাসার সামনে ও ওপর থেকে ইট-পাটকেল, ককটেল ছুড়ে নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। নিহত মাদ্রাসা ছাত্রের ওপর হামলা হয়নি। এমপি উবায়দুল মোকতাদির জানান, শেষ রাতের দিকে চারতলা থেকে এক ছাত্র পড়ে আহত হয়। পরে তার মৃত্যু হয়। পরিকল্পিত এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ফজরের নামাজের পর থেকে লাঠিসোটা নিয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা বেরিয়ে আসতে থাকে। পার্শ¦বর্তী অনেক মাদ্রাসা থেকে ছাত্ররা ও এতিমখানার লোকেরা শহরে জামায়াত হতে থাকে। তিনি জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা কোন প্রকার উস্কানি ছাড়াই শহরের মুক্তিযোদ্ধা ভবন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেলওয়ে স্টেশন, সদর হাসপাতাল, আওয়ামী লীগ অফিস, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আলী আযম ভূঁইয়ার বাড়িতে ভাংচুর করে তা-ব চালিয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিরোধ না করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্লিপ্ত ছিল। এতে ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা শহরে নারকীয় তা-ব চালায়। তা-বের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে দোষীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি। মোকতাদির চৌধুরী জানান, জেলা আওয়ামী লীগ থেকে প্রশাসনকে বার বার বলা হলেও তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০ কোটি টাকা। কিন্তু ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র যে নিদর্শন ধ্বংস করা হয়েছে। তা টাকার অঙ্কে পরিমাপ করা যাবে না। হামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওইদিন বিএনপির প্রায় ৩৩ নেতাকর্মী জামিনে মুক্ত হয়েছেন। ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপির সেই নেতাকর্মীরা অংশ নিয়ে তা-ব চালিয়েছেন। তিনি জানান, আমরা দলীয়ভাবে সংযত ছিলাম। তা না হলে সেদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রণক্ষেত্রে পরিণত হতো। সেদিন জেলাতে ঘৃণ্য কর্মকা-ের প্রতি ঘৃনা জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী চারটি দাবি উত্থাপন করেন। জেলার প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততার প্রতি তীব্র নিন্দা জানান তিনি। এই সমগ্র বিষয়টির ওপর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত সংস্থার জন্য যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেফতার, অপরাধীদের আইনের আওতায় ও বিচারের সম্মুখীন করার দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, সহসভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র মোঃ হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন উপস্থিত ছিলেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মত বিনিময় ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১২ জানুয়ারি সুর সম্রাট উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনসহ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে কেন্দ্রীয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দ। সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক আবদুন নূরের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুল কুদ্দুছ, সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নাছির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সদস্য নাজমুল হোসেন পাখি, গ্রুপ থিয়েটার ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আকতারুজ্জমানান, সহ-সাধারণ সম্পাদক চন্দন রেজা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমির আহ্বায়ক কবি জয়দুল হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব রিয়াজউদ্দিন জামিসহ স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীরা। মতবিনিময় সভায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, এ ঘটনায় যাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে, তাদের প্রত্যাহার করলেই চলবে না। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাংবাদিক সম্মেলন নামমাত্র সাংবাদিক সম্মেলন করল জেলা বিএনপি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৌলবাদী তা-বের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার আসামিরা (জেলা বিএনপির নেতারা) তাদের অবস্থান জানাতে এ সাংবাদিক সম্মেলন করে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি শহরের মৌড়াইলস্থ বাসভবনে বেলা ১১টার এ সাংবাদিক সম্মেলন আহ্বান করা হয়। দলের পক্ষ থেকে সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদকদের সংবাদ সম্মেলনের খবর কাভার করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে দলের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক খোকন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।
×