ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অনেক স্কুল ভর্তি স্থগিত রেখেছে

মন্ত্রণালয়ের আদেশের পর অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

মন্ত্রণালয়ের আদেশের পর অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের স্বস্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পে স্কেলের অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি বেতন, ফি আদায় বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ জারির পর অস্থিরতা কমতে শুরু করেছে বেসরকারী স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। তবে আদেশের পর সোমবার অনেক প্রতিষ্ঠান আবার ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। ফলে সন্তানকে ভর্তি করাতে এসেও ফিরে গেছেন অনেক অভিভাবক। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে ভর্তি বাবদ টাকা জমা নেয়া স্থগিত করেছে উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। এদিকে ইতোমধ্যেই নেয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়ার দাবি জানিয়েছেন অনেক প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকরা। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ পরবর্তীতে সমন্বয় করা হবে। এর আগে অভিভাবকদের আন্দোলনের মধ্যে সমালোচনার মুখে রবিবার বেসরকারী স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাসিক বর্ধিত বেতন ও ফি আদায় বন্ধের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি আদেশও জারি করে। আদেশে বলা হয়, সরকারের নির্দেশনা ছাড়াই বিভিন্ন বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বর্ধিত হারে মাসিক বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় করা হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা অনুযায়ী সরকারের নির্দেশনাসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্যদকে বেতন ও ফি’র হার নির্ধারণ করতে হবে বলে আদেশে জানানো হয়। এ প্রেক্ষাপটে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বর্ধিত বেতন ও অন্যান্য ফি আদায় বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়া হলো। বেতন-ফি নির্ধারণের বিষয়ে সরকার শীঘ্রই নির্দেশনা দেবে বলে আদেশে উল্লেখ হয়েছে। আদেশের পর সোমবার অনেক প্রতিষ্ঠান ভর্তি ফি আদায় বন্ধ রাখে। স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, ফি আদায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশনা পেলেই আবারও ভর্তি কার্যক্রম শুরু করবেন তারা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি বাবদ টাকা জমা নেয়া স্থগিত করেছে উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। সোমবার কর্তৃপক্ষের দেয়া এক নোটিসে বলা হয়, সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত নতুন এবং পুরাতন সকল শ্রেণীর ভর্তি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্যাংকে টাকা জমাদান স্থগিত থাকবে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আবুল হোসেন নোটিসের বিষয়ে বলেছেন, আমরা ভর্তি ও বেতনের টাকা বাড়িয়েছি সেটা গোপন নয়। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের ওপর ভিত্তি করে আপাতত টাকা জমা নেয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ভর্তি ফি ও বেতন জমা নেয়া বন্ধে নোটিস দেয়া হলেও এতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মোঃ আবুল হোসেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকরা জানিয়েছেন, বেতন বাড়ানো না হলে আগামী মাস থেকে তারা কর্মবিরতিতে যাবেন। এখন আমি পড়েছি উভয়সঙ্কটে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশনায় এই সঙ্কট কেটে যাবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশনার ওপর নির্ভর করছে। টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় যদি বলে ইতোমধ্যে যাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে তা ফেরত দিতে হবে, তবে তা-ই করা হবে। এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামের আরও কিছু প্রতিষ্ঠান সোমবার ভর্তির টাকা নেয়া বন্ধ করেছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর আপাতত ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন নির্দেশনা জারির পর আদায় করা বাড়তি টাকা ফেরত দেয়া হবে বলেও জানানো হয়। চট্টগ্রামে এদিনও স্কুলে বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন অভিভাবকরা। দুপুরে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এই প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করা হয়। এতে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে শতাধিক অভিভাবক অংশ নেন। চট্টগ্রাম শহরের ৪৬টি স্কুলের প্রায় সবগুলোতেই বর্ধিত ফি আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। এ সময় ভবন সংস্কার ও পাঠাগার উন্নয়নের নামে আদায় করা অতিরিক্ত ফি প্রত্যাহারের দাবিও জানানো হয়। পরবর্তী পদক্ষেপ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না মানলে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে তা সংশ্লিষ্ট কারও অজানা নয়। এটা নীতিমালায় বলা আছে। প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষের এমপিও বন্ধ হতে পারে। গবর্নিং বডি ভেঙ্গে দেয়া হতে পারে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, কোন্ প্রতিষ্ঠান কত টাকা ফি বাড়িয়েছে, তার তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যে এসব তথ্য সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।
×