ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিযোগ তদন্তে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ

ফরহাদই হুন্ডির মাধ্যমে তারেককে অর্থ যোগাচ্ছেন

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

ফরহাদই হুন্ডির মাধ্যমে তারেককে অর্থ যোগাচ্ছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সৃষ্ট হাওয়া ভবনের কর্মচারী ও কথিত অর্থদাতা শামসুজ্জোহা ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সোমবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল পর্যন্ত কঠোর গোপনীয়তায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সম্প্রতি দুদক তার ও তার স্ত্রী রোজিনা জোহার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে চিঠি পাঠিয়ে পাসপোর্ট নাম্বার জানিয়ে দিয়েছে পুলিশের বিশেষ শাখা। দুদকে আসা অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, তারেকের ঘনিষ্ঠ ও হাওয়া ভবনের কর্মচারী ফরহাদই তারেক রহমানের অর্থদাতা। তারেক রহমান তার নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ গড়েছেন। এখনও ফরহাদ দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে তারেকের কাছে অর্থ পাঠাচ্ছেন বলে দুদকের কাছে অভিযোগ রয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদকে এ অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দুদকের এ কর্মকর্তা এর আগে খালেদা জিয়া ও তারেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছেন। বর্তমানে এ অভিযোগটিও তিনি অনুসন্ধান করছেন। সূত্র জানায়, গত রবিবার দুদকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের (বিশেষ) কাছে চিঠি পাঠায় দুদক। দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, রংপুরের শামসুজ্জোহা ফরহাদ বিএনপি সরকারের সময় হাওয়া ভবনের কর্মচারী ছিলেন। ড্যান্ডি ডাইংয়ে কাজ করার সুবাদে তারেক রহমানের সংস্পর্শে আসেন তিনি। এরপর তাকে আর পিছু তাকাতে হয়নি। হাওয়া ভবনের কর্মচারী ও তারেক রহমানের সংস্পর্শে এসে রাতারাতি বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক-ব্যালেন্স, এফডিআরসহ নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন ফরহাদ। বর্তমানে তিনি মিরপুর রূপনগরের ছয়তলাবিশিষ্ট নিজস্ব বাড়িতে থাকেন। দুদকে পেশ হওয়া অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, হাওয়া ভবনের ওই কর্মচারী তারেক রহমানের টাকায় কোটিপতি হয়েছেন। শামসুজ্জোহার সব অর্থই মূলত তারেক রহমানের দেয়া। বর্তমানে শামসুজ্জোহার উপার্জন থেকে পাওয়া অর্থ দিয়েই তারেক লন্ডনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। এ জন্য দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। দুদক সূত্র আরও জানায়, অভিযোগ অনুসন্ধানে দেশে ও বিদেশে তারেকের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে হিসাব আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে চিহ্নিত কিছু ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবেরও তথ্য নেবে দুদক। বর্তমানে জ্ঞাত কোন আয় না থাকলেও লন্ডনে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন তারেক। বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই সরকারের আমলে তারেক নামে- বেনামে বিপুল সম্পদ অর্জন করেন। তার ওই সম্পদের কিছু অংশ শামসুজ্জোহাকে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৬ জুলাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। ২০১৩ সালের ১৭ নবেম্বর রায়ে তারেককে বেকসুর খালাস দেয়া হয়। মামুনকে অর্থদ-সহ সাত বছরের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। তারেক রহমানের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করে দুদক। ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্জ তারেকের ওই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল শুনানির জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। তারেক রহমানকে অর্থ পাচার মামলা থেকে খালাস দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোতাহার হোসেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি অবসরে যান। ২০১৪ সালে অবসরপ্রাপ্ত ওই বিচারকের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। যা এখনও চলমান রয়েছে।
×