ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা আর বাড়ছে না

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা আর বাড়ছে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা আর বাড়ছে না। উচ্চ আদালতের আদেশে সরকারী চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীত করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় তোলা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি। এতে যে সকল মুক্তিযোদ্ধা এখনও সরকারী চাকরিতে রয়েছেন, ৬০ বছর বয়স হলেই তাদের অবসরে যেতে হবে। পাশাপাশি সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটে বাংলাদেশের অংশ নেয়ার প্রসঙ্গটি আলোচনা উঠে আসে মন্ত্রিসভায়। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটে বাংলাদেশের অংশ নেয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় তিনি এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চান। সৈয়দ আশরাফের জিজ্ঞাসার জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী জানান, এটি কোন সামরিক জোট নয়, সন্ত্রাসবিরোধী সমঝোতা চুক্তি। তা ছাড়া বিষয়টি এখনও সেই অর্থে চূড়ান্ত হয়নি। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি খুব পরিষ্কার। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। এই পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বাসী। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সরকার বিগত সময়ে মক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৬০ বছরে উন্নীত করে। তাই বয়স বাড়ানোর বিষয়টি মন্ত্রিসভায় বিবেচিত হয়নি। গত বছর নবেম্বরে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের একটি রায়ের ধারাবাহিকতায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সোমবার মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়স বাড়ানোর এই প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় তোলে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০০৬ সালের ১২ জুলাই এক স্মারকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা ৫৭ বছর বাড়িয়ে ৬৫ বছরে উন্নীত করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপনের অনুশাসন দেয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পত্রটি (তৎকালীন) প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন না পাওয়ায় তা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন হয়নি। ওই নির্দেশনা প্রতিপালিত না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন শিকদার ২০১৩ সালে হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এ বিষয়ে শুনানি করে আদালত রুল জারি করে। সরকারী স্মারকের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা কেন ৬৫ বছর করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে। আরও ৬৮০ মুক্তিযোদ্ধা রিটে পক্ষভুক্ত হন। রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতবছর ১৪ জানুয়ারি হাই কোর্ট রায় দেয়। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ওই প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উপস্থাপন করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেয় আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে গেলে আপীল বিভাগ হাই কোর্টের রায় বহাল রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৬৫ বছর করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় তুলতে বলে। এদিকে এই মামলা চলার মধ্যেই গত সরকারের মেয়াদে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়। তখন সরকারের অন্য কর্মকর্তাদের অবসরের বয়সসীমা ছিল ৫৭ বছর, যা পরে ৫৯ বছর করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে আরও একটি রিট আবেদন হলে ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা আরও এক বছর বাড়ানো হয়। সে অনুযায়ী বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়স ৬০ বছর। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, জাতীয় ই-সেবা আইনের খসড়া এদিন মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলেও তা আরও পরীক্ষা করে আবার উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া গত ২১ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাহরাইন সফর সম্পর্কে এই সভায় মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে।
×