ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জড়িতরা সমাজের গণ্যমান্য উঁচুস্তরের বিত্তবান ব্যক্তি;###;পতেঙ্গায় র‌্যাবের তিনদিনের সফল অভিযানে আটক ৩;###;গডফাদারদের শনাক্ত করা হয়েছে, শীঘ্রই গ্রেফতার॥ বেনজীর আহমেদ ;###;শতাধিক কোটি টাকা মূল্যের এ ইয়াবার চালানটি পাঠায় মিয়ানমারের নাগরিক বমং

ধরা পড়ল এযাবতকালের বৃহত্তম চালান ॥ ২৮ লাখ ইয়াবা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

ধরা পড়ল এযাবতকালের বৃহত্তম চালান ॥ ২৮ লাখ ইয়াবা

আজাদ সুলায়মান ॥ আলী আহমেদ একটি বড় ডেভলপার কোম্পানির মালিক। মহিউদ্দিন উচ্চ শিক্ষিত চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট। হামিদ উল্লাহও গণ্যমান্য ব্যক্তি। তারা তিনজনেই সমাজের উঁচুস্তরের লোক। বিত্তবান তো বটেই। সেই সঙ্গে যথেষ্ট মানসম্মানের অধিকারী। কিন্তু তারা যে ইয়াবার মতো সেনসেশনাল মাদক ব্যবসায় জড়িত এটা তাদের স্বজনরা ঘুণাক্ষরেও জানত না। সোমবার র‌্যাব যখন তাদের নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করে, তখন তাদের স্বজনরা জিভে কামড় বসিয়েছে। একি, এটাও কি বিশ্বাসযোগ্য? এমন প্রশ্নই ছিল চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট মহিউদ্দিনের প্রতিবেশী মীনার মুখে। তারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত কিনা- এটা যেমন স্বজনদের মনে সন্দেহ জাগিয়েছে, তেমনি র‌্যাবের কাছে বিস্ময় ঠেকেছে- এই পর্যায়ের লোক যদি ইয়াবা পাচার করে, তাহলে আর সন্দেহের উর্ধে কারা? এর আগে একজন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন বিচারক ও একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ইয়াবার চালানসহ ধরা পড়ে। সঙ্গত কারণেই র‌্যাব নতুন করে প্রভাবশালীদের বিষয়টি মাথায় রেখেই সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণাদি নিয়ে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তাতেই মওকা মিলে যায়। শনিবার এক চালানেই ধরা পড়ে ২৮ লাখ পিস ইয়াবা। এটিই এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ চালান। ইয়াবার বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এ চালানের মূল্য কমপক্ষে ১১২ কোটি টাকা। শুক্র, শনি ও রবিবার র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অভিযান চালিয়ে এ চালান একটি ট্রলার থেকে উদ্ধার করে ২৭ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা। এ সময় আলী আহমদ নামের একজন ডেভলপার ব্যবসায়ীকে আটকের পর জানা যায়, আরও একটি চালান নিয়ে ঢাকায় রওনা হয়েছে মহিউদ্দিন নামের এক চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট। পরে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় তাকে। উদ্ধার করা হয় আরও ৫০ হাজার পিস ইয়াবা। যেভাবে অভিযান চালানো হয় ॥ আগে থেকেই র‌্যাব নিশ্চিত হয় মিয়ানমার থেকে গভীর সমুদ্রপথে ইয়াবার একটি বিশাল চালান আসছে। র‌্যাব সদর দফতর ঢাকা থেকে তা র‌্যাব-৭কে বিশেষ কৌশলে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেয়া হয়। র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ নিজে এই অভিযানের দিকনির্দেশনা দেন। শুক্রবার রাতে র‌্যাব-৭’র একটি দল সমুদ্রসীমায় ব্যাপক তৎপরতা চালায়। ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে একটি জলযান (স্পেশাল বোট) নিয়ে গভীর সমুদ্রে অভিযান চালানো হয়। এতে র‌্যাব শনিবার দু’টি নাম পরিচয়হীন ট্রলারের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এ সময় গভীর সমুদ্রগামী জলযান নিয়ে শনাক্তকৃত ট্রলার দু’টিকে ধাওয়া করলে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রলার দু’টি দু’দিকে দ্রতগতিতে পালিয়ে যেতে থাকে। র‌্যাব একটি ট্রলারকে ধাওয়া করে রবিবার বিকেলে পতেঙ্গা উপকূলের কাছে পৌঁছে। এ সময় দুই জন ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ ওই ট্রলারটি আটক করে। এ সময় অপর সহযোগীরা চলন্ত ট্রলার থেকে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে পালিয়ে যান। আটকের পর ট্রলারটি তল্লাশি করে ২৭ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে চোরাচালান চক্রের হোতা আলী আহমদ ও হামিদ উল্লাহকে আটক করা হয়। তাদের দুজনকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পারে এ চক্রের আরও এক প্রভাবশালী সদস্য একটি চালান নিয়ে ঢাকায় চলে গেছে। তারপর সোমবার সকাল ৮টায় রাজধানীর বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকা থেকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয় মহিউদ্দিনকে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন গ্রফতারকৃতরা হচ্ছেন- চোরাচালানি চক্রের মূল হোতা আলী আহমদ (৫২), হামিদ উল্লাহ (৩২) ও মোঃ মহিউদ্দিন (৩৫)। এর মধ্যে আলী আহমদের বাড়ি সাতকানিয়ার ছোট ডেমশা গ্রামে। তার একুশে প্রপার্টিজ নামের একটি ডেভলপার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি একজন বিত্তবান সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত। তার অপর সহযোগী মহিউদ্দিনের বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী এলাকায়। রাজধানীর খিলক্ষেত বেপারিপাড়ায় তিনি বসবাস করেন। পেশায় চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট। তিনি নিজ মহল্লায় একজন বিত্তবান নাগরিক হিসেবে পরিচিত। রাতেই চট্টগ্রাম থেকে অপর দুজনকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। সোমবার সকালে এ ঘটনায় র‌্যাব সদর দফতর এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানান-সমুদ্রপথে বাংলাদেশে আসা ইয়াবা চোরাচালানকারীদের গডফাদারকে শনাক্ত করা গেছে। তদন্তের স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। খুলনা, বরিশালসহ সমুদ্রপথের এলাকাগুলোতে ইয়াবা চোরাচালানের ব্যাপক বিস্তার রয়েছে। সেখানেও কড়া নজরদারি রাখছে র‌্যাব। শীঘ্রই গডফাদারসহ এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। বেনজির আহমেদ জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে জানা গেছে, মূলত বমং নামের এক বার্মিজ নাগরিক সমুদ্রপথে এসব ইয়াবা পাঠান। সমুদ্রের মাঝপথ থেকে এগুলো সংগ্রহ করে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করতেন আয়াতুল্লাহ নামের আরেক চোরাচালানকারী। বেনজির আহমেদ আরও জানান, আলী আহমদ একুশে প্রোপার্টিজ নামক একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক। কোম্পানির আড়ালে তিনি ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করতেন। চোরাচালান কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন কোম্পানির চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্ট মোঃ মহিউদ্দিন ও অফিস সহকারী হামিদ। মিয়ানমার থেকে আয়াতুল্লাহ আলী সিন্ডিকেটের বাংলাদেশে পাচার করা ইয়াবার মধ্যে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে কোস্টগার্ড ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করে। একই বছরের ডিসেম্বরে পুলিশ ইয়াবা পাচারকারী মাজেদ ও ইসমাইলকে (সিরাজের চাচা) চট্টগ্রামে বায়েজীদ এলাকা থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। এরপর র‌্যাব-৪ একটি গাড়িসহ সিরাজকে গ্রেফতার করে। পাচারে ব্যবহৃত ট্রলারটির নাম মুছে ফেলা হলেও আমরা জানতে পারি, আলী আহমদের মামাত ভাই নুরুন্নবী এ ট্রলারের মূল মালিক। ট্রলারটি ইয়াবা পাচারের কাজেই ব্যবহৃত হতো । ১ কোটি ১৭ লাখ ॥ প্রতিষ্ঠার পর থেকে র‌্যাব এ পর্যন্ত মোট ১ কোটি ১৭ লাখ ৪ হাজার পিস ইয়াবা উদ্বার করেছে। ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯২ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে র‌্যাব। এর মধ্যে র‌্যাব-৭ এর ব্যাটালিয়ন (চট্টগ্রাম) উদ্ধার করেছে ৭০ লাখ ৮০ হাজার ৯২ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। পাশাপাশি ১৯ কেজি ৫৪০ গ্রাম হেরোইন, ৪২৮ গ্রাম কোকেন, এক লাখ ৪৭ হাজার ৯২৪ বোতল ফেনসিডিল, ৭ হাজার ৯৩৩ কেজি গাঁজা, ১২ হাজার ৯৭১ বোতল বিদেশী মদ এবং ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬৩৮ লিটার দেশী মদ উদ্ধার করা হয়েছে। ইয়াবা বিরোধী মানববন্ধন ॥ ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এ চালান নিয়ে সোমবার যখন র‌্যাব সাংবাদিক সম্মেলন করে তখন উত্তরায় রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সের সামনে ইয়াবাবিরোধী এক মানববন্ধন চলছিল। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উদ্যোগে ডেফডিল ই্উনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এর আয়োজন করে। এতে অংশ নেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও মাদকদ্রব্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডক্টর খন্দকার রাকিবুর রহমান। ইয়াবা কি ॥ ইয়াবা এক ধরনের এফিড্রিন। যা সামান্য খেলেই শরীরের সেন্ট্রাল নার্ভ সিস্টেমকে স্তিমিত করে দেয়। এতে সাময়িক উত্তেজনা দেখা দেয়। যে কারণে সেবনকারীরা কিছুটা সময় প্রাণবন্ত হয়ে বেশি কথা বলতে শুরু করে। এতে ইয়াবা সেবনকারীরা রাতের পর রাত জাগতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের সময় ক্লান্ত হয়ে পড়া সৈনিকদের চাঙ্গা রাখতে জার্মানির হিটলার সর্বপ্রথম এ ইয়াবা আবিষ্কার করেন। সেই থেকে প্রচলন হলেও থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে ইয়াবা টিকেছিল। এরপর আশির দশকে হঠাৎ ইয়াবাার বিস্তৃতি ঘটে। কেন এত জনপ্রিয় ॥ ফেন্সিডিলের পর এ যাবত ইয়াবাই সবচেয়ে জনপ্রিয় মাদক হিসেবে তরুণ-তরুণীদের কাছে সমাদৃত। বাংলাদেশে নেশার জগতে ইয়াবা জনপ্রিয় হবার অন্যতম কারণ এটি বহন, গ্রহণ, হস্তান্তর, সেবন ও নেশার কার্যকারিতায় অদ্বিতীয়। এটি অনায়াসেই এক স্থান থেকে অন্যত্র বহন যতটা সহজসাধ্য অন্যান্য মাদক তেমনটা নয়। এটা খেয়ে নেশা করলে শয্যাসঙ্গীর পক্ষেও ধরা বা টের পাওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই মরণপণ নেশা আসতে শুরু করে বিগত নব্বই দশকের মাঝামাঝি। মামুন নামে গুলশানের এক ধনাঢ্য যুবক প্রথমবারের মতো ইয়াবা নিয়ে বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার হলেও সেটা তেমন সাড়া ফেলেনি। যেমনটি হয়েছিল ইয়াবা সম্রাটখ্যাত আমিন হুদার বেলায়। তিনিই ইয়াবার গডফাদার হিসেবে ইয়াবা হুদা নামে খ্যাত। এখনও কারান্তরীণ। তারপর লাখ লাখ পিস ইয়াবা নিয়ে অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন ॥ মাদকের মধ্যে ইয়াবা দিন দিন মহামারী আকার ধারণ করছে। মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম হয়ে সড়ক, রেল ও আকাশপথে সারাদেশে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে। মাদকের ক্ষেত্রে ইয়াবার পরের অবস্থানে রয়েছে হেরোইন। তবে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া ইয়াবার শতকরা ৮৫ ভাগই ভেজাল। এসব ইয়াবাসেবীর কিডনি ও মস্তিষ্ক বিকল হওয়া ছাড়াও ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, লিভার, হৃদরোগ ও স্মৃতিশক্তি বিনষ্ট হচ্ছে। অধিকাংশ ইয়াবাসেবীর মস্তিষ্ক অকেজো হয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। প্রাণঘাতী এই মাদকের প্রভাবে সমাজে বেড়ে যাচ্ছে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও খুনের মতো মারাত্মক অপরাধ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী শতকরা ৮০ ভাগ খুনের সঙ্গেই কোন না কোনভাবে মাদক জড়িত। হালে খুনের সঙ্গে ইয়াবার সম্পৃক্ততা সবচেয়ে বেশি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নিরোধ ও গবেষণা শাখা সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে অন্তত ৩০ লাখ মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় পাইকারি ও খুচরা মাদক বিক্রেতার সংখ্যাই অন্তত ১৫ লাখ। আর বাকি ১৫ লাখের মধ্যে ১০ লাখ ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের। বাকি ৫ লাখ ব্যবসায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায়। অধিকাংশ ব্যবসায়ীই ইয়াবা ও হেরোইন ব্যবসায় জড়িত। ইয়াবাগুলো মিয়ানমার থেকে জলপথে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম হয়ে স্থল ও আকাশ পথে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ইয়াবা আসছে। সড়কপথে ইয়াবার চালান আনতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে সবজির ট্রাক, বাস, লরি, মালামাল আনা-নেয়ার কার্গোভ্যান, বিলাসবহুল গাড়ি ও প্রাইভেটকার। এছাড়া মহিলা ও শিশুদের জামা কাপড়ে নানাভাবে লুকিয়ে ইয়াবা আনা হয়। ইয়াবা বহন করার জন্য ভাড়ায় স্বামী-স্ত্রী, যুবতী, যুবক থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষও পাওয়া যায়। এরমধ্যে সবচেয়ে অভিনব কায়দায় ইয়াবা আনার ধরা পড়ার ঘটনাটি ঘটে ২০১৪ সালে। নকলেও এগিয়ে ॥ সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা। সহজলভ্য হওয়ার অন্যতম কারণ ঢাকা ও চট্টগ্রামে গড়ে ওঠা নকল ইয়াবার কারখানা। আসল ইয়াবার সঙ্গে নকল ইয়াবা মিশিয়ে একত্রে বিক্রি হচ্ছে। ফলে বর্তমানে পাড়া মহল্লায় প্রতিপিস ২শ’ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকায় বিক্রি হওয়া শতকরা ৮৫ ভাগ ইয়াবাই নকল। গত বছরের ২৪ আগস্ট ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ বিলাসবহুল পাজেরো জীপে করে ইয়াবার চালান পৌঁছানোর সময় প্রায় ৫৫ হাজার পিস ইয়াবাসহ আব্দুল্লাহ জুবায়েরসহ চারজনকে গ্রেফতার করে। জুবায়ের ইয়াবা বিক্রি করে পাজেরো জীপ ছাড়াও গুলশানের নিকেতনে দু’টি আলিশান ফ্ল্যাট কিনে। একটিতে জুবায়ের ও তার ইয়াবা ব্যবসার পার্টনাররা থাকত। অপরটিতে নকল ইয়াবা তৈরির কারখানা স্থাপন করা হয়েছিল। চট্টগ্রামেও জুবায়েরের ভেজাল ইয়াবা তৈরির কারখানা আছে। চট্টগ্রামে সফলভাবে ভেজাল ইয়াবার ব্যবসা করার পরই জুবায়ের ঢাকায় নকল ইয়াবা তৈরির অত্যাধুনিক কারখানা স্থাপন করেছিল। ঢাকায় বেচাকেনা হওয়া শতকরা ৮৫ ভাগ ইয়াবা ট্যাবলেটই ভেজাল।
×