ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড়ে ক্ষুরারোগে শূন্য হচ্ছে খামার ॥ প্রতিদিনই মরছে গরু

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

পঞ্চগড়ে ক্ষুরারোগে শূন্য হচ্ছে খামার ॥ প্রতিদিনই মরছে গরু

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ ক্ষুরারোগের ভ্যাকসিন কোন কাজে আসছে না। পঞ্চগড়ে ক্ষুরারোগ ফের মহামারী আকার ধারণ করেছে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই মরছে খামারের গরু। বিশেষ করে বিদেশী বিভিন্ন জাতের গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে বেশি। অনেক দামী-দামী ওষুধ প্রয়োগ করেও কোন কাজে আসছে না। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে গরুর খামার করে অনেক খামারি এখন পথে বসেছে। পারছে না ঋণ পরিশোধ করতে; পারছে না নতুন করে খামার গড়তে। প্রতিবেশী ভারত থেকে চোরাপথে আসা গরু থেকে এ রোগ ছড়ালেও এ রোগ নির্মূলে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রাণিসম্পদ বিভাগ। কৃষক ও খামারিদের অভিযোগ, কয়েক মাস আগে পঞ্চগড় জেলায় মহামারী আকারে ক্ষুরারোগ শুরু হয়। সে সময় মারা যায় অনেক গরু। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। খামারে খামারে গিয়ে তারা ক্ষুরারোগের ভ্যাকসিন দেয়। কিন্তু রোগটি সম্পূর্ণ নির্মূল না হওয়ায় কিছুদিনের মধ্যে আবার ফিরে আসে। গত প্রায় মাসখানেক ধরে আবারও খামারের গরু ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে থাকে। অনেক টাকা খরচ করেও আক্রান্ত গরু সুস্থ না হওয়ায় লোকসান বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। গরু এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক ও খামারি। খামারিরা আরও অভিযোগ করেন, বাজারে কেনা ওষুধে আক্রান্ত গরু সুস্থ হচ্ছে না। আগে ক্ষুরারোগের ভ্যাকসিন দেয়া গরুও নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। জানা গেছে, ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হয়ে শনিবার জেলা শহরের কামাতপাড়ার জালাল উদ্দীনের একটি বিদেশী বকনা মারা গেছে। যার বাজার মূল্য প্রায় এক লাখ টাকা। এর দুইদিন আগে একই গ্রামের কাইয়ুমের একটি গাভী ও একটি বাছুর মারা যায়। এর দামও প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো। এ ছাড়াও গত এক মাসের মধ্যে একই গ্রামের কবিরের চারটি গরু, লায়লা বানুর লাখ টাকা দামের একটি গাভী, দেলোয়ার হোসেন সর্দারের একটি গাভী ও একটি বাছুর, ফাতেমা বেগমের একটি গাভী, নজরুল ইসলামের ১টি গাভী মারা গেছে এবং তার আরও দুটি গাভী অসুস্থ হয়ে পড়ায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও কামাতপাড়ার আরও অনেক খামারির গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শহরের বাইরের জেলা সদরের অমরখানা ইউনিয়নের মেহেনা ভিটা গ্রামের বড় খামারি জয়নালের দেড় লাখ টাকা মূল্যের একটি গাভী মারা গেছে। খামারি জয়নাল জানান, তার যে গাভীটি মারা গেছে সেটি প্রতিদিন ১৬ লিটার করে দুধ দিত। ক্ষুরারোগে আক্রান্ত হওয়ার পর গাভীটির চিকিৎসার জন্য ৮ হাজার টাকা খরচ করা হলেও গাভীটি বাঁচানো যায়নি। তিনি আরও বলেন, আমার খামারে ১৮টি গরু ছিল। এ গাভীটি মারা যাওয়ার পর আরও ৬টি গাভী আক্রান্ত হওয়ার পর সেগুলো নামমাত্র মূল্যে বিক্রয় করে দিয়েছি। এখন বাকি গরুগুলো নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছি। শহরের কামাতপাড়া গ্রামের খামারি দেলোয়ার হোসেন সর্দার বলেন, এর আগে জনকণ্ঠে ক্ষুরারোগের খবর প্রকাশ হওয়ার পর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে লোক এসে ভ্যাকসিন দিয়ে গেছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার ওষুধ এনে খাওয়াচ্ছি। কোন কাজে আসছে না। মুখ দিয়ে শুধুই লালা ঝরছে। পায়ের ঘায়ের দুর্গন্ধে খামারে ঢোকাই দায় হয়ে পড়েছে। পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ শহিদুল ইসলামের সঙ্গে বলেন, ভারত থেকে চোরাপথে আসা রোগাক্রান্ত গরুর মাধ্যমে ক্ষুরারোগের প্রার্দুভাব ঘটছে। এ রোগের ভাইরাস এতই শক্তিশালী যে, ভ্যাকসিন দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, যাদের গরু এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে আমরা সেই গরুকে সুস্থ করতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক খামারি আমাদের কাছে না এসে বাড়িতেই অন্যদের এনে চিকিৎসা করাচ্ছে। এতে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে গরু মারা যেতে পারে বলে তিনি জানান।
×