ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়ন হবে ৬০ উপজেলায়

সম্প্রসারিত হচ্ছে গ্রামীণ উদ্যোক্তা তৈরি কার্যক্রম

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

সম্প্রসারিত হচ্ছে গ্রামীণ উদ্যোক্তা তৈরি কার্যক্রম

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সম্প্রসারিত হচ্ছে গ্রামীণ উদ্যোক্তা তৈরির বিশেষ উদ্যোগ। এজন্য ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সহায়তা (দ্বিতীয় পর্যায়) নামের এ প্রকল্প হাতে নিচ্ছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৬৪ কোটি ৯ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন কাজ সমাপ্ত করবে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ)। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এ.এন শামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, এটি ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প। কেননা প্রকল্প বাস্তবায়নে যে অর্থ ব্যয় হবে, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শেষে সঞ্চয় দাঁড়াবে ১৫৮ কোটি টাকা। এই টাকা আবার ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় যাদের দশমিক শূন্য ৫ একর থেকে ২ দশমিক ৪৭ একর জমি থাকবে (ভিটেমাটি ছাড়া) তারাই ঋণ প্রাওয়া যোগ্য বিবেচিত হবে। সিড মানি হিসেবে সর্বনিম্ন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা থেকে সবোচ্চ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হবে। এ ঋণের সার্ভিস চার্জ নেয়া হবে ১১ শতাংশ। এর মধ্যে ৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় হবে কর্মচারীদের তেন ভাতার জন্য আর ৪ শতাংশ অর্থ মূল সঞ্চয়ের সঙ্গে যোগ হবে। তাছাড়া ঋণ গ্রহীতারা যে সঞ্চয় জমাবেন ছয় মাস পর ৬ শতাংশ হারে সুদ তুলে নিতে পারবে। এক কথায় এ প্রকল্পটিতে ক্ষুদ্র ঋণের প্রকল্প না বলে ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উন্নয়ন ঋণ বলা যেতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ প্রকল্পটি পুরোটাই ব্যতিক্রম। বলা যায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতো ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জাপানী ঋণ মওকুফ সহায়তার (জেডিসিএফ) এর অর্থায়নে মোট ২৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০০৯ থেকে ২০১৪ মেয়াদে দেশের ১১টি জেলার ৬০টি উপজেলায় ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সহায়তা নামের একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এটি ছিল বর্তমান গ্রহণ করতে যাওয়া প্রকল্পটির প্রথম পর্যায়। ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডশন (এসএফডিএফ) বর্তমানে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম সম্প্রসারণ বিষয়ক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত এটি চলবে। প্রকল্পটি ১৮টি জেলার ৫৪টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। কিন্তু এই কার্যক্রম এখনও দেশের সকল এলাকায় সম্প্রসারিত হয়নি। এসএফডিএফ-এর মেমোরেন্ডাম এ্যান্ড আর্টিকেল অব এ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী এর কার্যক্রম সারা দেশব্যাপী সম্প্রসারণের ম্যান্ডেট রয়েছে। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নের পর এর সমাপ্ত প্রতিবেদনে আরও ৬০টি উপজেলায় কার্যক্রম সম্প্রসারণের সুপারিশ করা হয়েছে, যা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব এবং এসএফডিএফ-এর পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির অনুমোদন লাভ করেছে। এমতাবস্থায় আরও ৬০টি উপজেলায় এর কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য মোট ৬৪ কোটি ৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে এবং ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সহায়তা প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ছয় বিভাগের ২২টি জেলার ৬০টি উপজেলায় গ্রাম পর্যায়ে ২ হাজার ৩৪০টি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী উন্নয়ন কেন্দ্র গঠন করা, এসব কেন্দ্রের আওতায় ৫৮ হাজার ৫০০ জন পুরুষ বা মহিলাকে সংগঠিত করে তাদের উৎপাদন, আত্ম-কর্মসংস্থান ও আয় বর্ধনমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য জামানতবিহীন ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ প্রদান করা হবে, ঋণবিনিয়োগের আয় থেকে সদস্যদের সঞ্চয়ের মাধ্যমে নিজস্ব পুঁজি গঠনে উদ্বুদ্ধ করা হবে, ৪ হাজার ৬৭৫জন সুফলভোগী সদস্য ও ৩২৫ জন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক, ৪০ জন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর জন্য আইসিটি এবং ১০০ জন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর জন্য এমআইএস এ্যান্ড এ আইএস সফটওয়্যার পরিচালনা প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে এবং সুফলভোগী সদস্যদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম যেমন শিশু শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার কল্যাণ ইত্যাদি বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ করা হবে বলে জানা গেছে। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সূত্র জানায়, পল্লী অঞ্চলের জনগণের দারিদ্র্য নিরসন ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এ প্রকল্পটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, তাই এটি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
×