ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান

বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেছে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনটিকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার শামিল বলে অভিহিত করেন। গবেষণার পদ্ধতি তথা মেথডলজি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, সংস্থাটি এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ সাহস কোথায় পায় তা খতিয়ে দেখা উচিত। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক খাত, সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিকমানের থার্ড পার্টি, অডিটরসহ স্টেকহোল্ডারদের সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে নিট পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি টিআইবির প্রতিবেদনটিকে অভিহিত করেছেন দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে। দুরভিসন্ধিমূলক আখ্যা দিয়ে প্রতিবেদনটি তারাও প্রত্যাখ্যান করেছেন। দেশের তৈরি পোশাক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে টিআইবি সংবাদ সম্মেলন করে, সেখানে ১৬ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিহ্নিত করা হয় যা বিস্তৃত কার্যাদেশ পাওয়া থেকে শুরু করে উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায় পর্যন্ত। এও বলা হয় যে, এর সঙ্গে জড়িত থাকেন কারখানার মালিক, মার্চেন্ডাইজার ও বিদেশী ক্রেতারা। সর্বোপরি বলা হয় পণ্যের মান, পরিমাণ ও কমপ্লায়েন্সের ঘাটতি ধামাচাপা দেয়া হয় ঘুষের মাধ্যমে। এ পর্যন্ত হয়ত ঠিকই আছে। কিন্তু যখন জানা যায় যে, ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত গবেষণাটি করা হয়েছে মাত্র ৭০টি অংশীজনভিত্তিক বিদেশী ক্রেতা, বায়িং হাউস, কারখানার মালিক, শ্রমিক ও কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষকের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে, তখন অনিবার্য কিছু প্রশ্ন না উঠে পারে না। আর সে অভিযোগই করা হয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর তরফ থেকে। বাংলাদেশের পোশাক খাতের সুবিশাল ব্যাপ্তি এবং জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান সম্পর্কে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এও সত্য যে, দেশীয় পোশাক শিল্পের এহেন উন্নয়ন এবং অর্জিত সম্ভাবনা ইতোমধ্যেই দেশ-বিদেশ তথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভূত প্রশংসা অর্জন করেছে। কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ক্রমশই তা সম্প্রসারণমান। তাজরীন এবং রানাপ্লাজা ট্র্যাজেডির ধাক্কা কাটিয়ে উঠে এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়া সত্ত্বেও গত ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি বেশি হয়েছে। ক্রেতাদের সংগঠন এ্যাকর্ড ও এ্যালায়েন্স নিয়মিত পোশাক কারখানাগুলো পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করায় কেটে গেছে ভাবমূর্তি সঙ্কট। সে ক্ষেত্রে লাখ লাখ শ্রমিক, হাজার হাজার উদ্যোক্তা এবং লাখ লাখ ক্রেতা যে শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত, তাদের মধ্য থেকে মাত্র ৭০ জনের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে তথাকথিত অর্থে একটি গবেষণা প্রতিবেদন আদৌ তৈরি করা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। সর্বোপরি, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সঙ্গে এ নিয়ে কোন যোগাযোগ বা আলোচনাই করা হয়নি। সে অবস্থায় টিআইবির এই তথাকথিত গবেষণা প্রতিবেদন এক কথায় অগ্রহণযোগ্য, হাস্যকরও বটে। বাণিজ্যমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বীরা যেমন ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া, কেনিয়া টিআইবিকে অর্থ দিয়ে দেশীয় পোশাক শিল্পের বিরুদ্ধে এসব প্রতিবেদন লিখিয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রীও পোশাক শিল্প নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন। টিআইবি এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও গবেষণাটি নিয়ে বিতর্ক ও সীমাবদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে। দেশীয় পোশাক শিল্পের ক্রমবিকাশ ও অমিত সম্ভাবনার বিষয়টি আরও বড় পরিসরে যোগ্য ও অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে গবেষণার অবশ্যই দাবি রাখে।
×