ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তাপস মজুমদার

২০১৬ ॥ কী আছে বিশ্বের ভাগ্যে?

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

২০১৬ ॥ কী আছে বিশ্বের ভাগ্যে?

মানুষ মাত্রই প্রেডিকশন ও প্রেসক্রিপশন করতে ভালবাসে। পৃথিবীতে বুঝি এর চেয়ে সহজ কাজ আর কিছু নেই। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে বসে আছেন ঘরোয়া আড্ডায়। হঠাৎ একজন স্রেফ মুখ ফসকে বলে ফেললেন কোন না কোন একটি শারীরিক অসুস্থতার কথা, তা সে কমন কোল্ড থেকে হৃদরোগ- যা-ই হোক না কেন। ব্যস, অমনি শুরু হয়ে গেল চারদিক থেকে অবিরাম পরামর্শবর্ষণ। কেউ বলবেন, গরম পানি খান অথবা আদা চা, কেউ ডাবরের মধু এক চা চামচ, কেউবা চ্যবনপ্রাস, আবার কেউবা ভিটামিন সি। আর হৃদরোগ হলে তো কথাই নেই- একেবারে বিমল ছাজেড় থেকে বিমল আগরওয়াল- টোটকা থেকে বাইপাস পর্যন্ত! তেল ছাড়া রান্না থেকে শুরু করে প্রিটিকিন ডায়েট, হাঁটাচলা, ব্যায়াম, প্রাণায়াম- কিছুই বাদ থাকবে না। চটজলদি যদি উঠে না পড়েন তাহলে নির্ঘাত কপালে দুর্ভোগ আছে। পারলে ওখানেই আপনাকে বাইপাস করে দেবে! অনুরূপ অবস্থা ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষেত্রে। কেন যেন মানুষ কথায় কথায় বাজি ধরতে ও ভবিষ্যদ্বাণী করতে ভালবাসে। এই বলে দিলাম বা লিখে দিলাম তো আছেই। আরও আছে হাত-পা-কান কেটে ফেলা, এমনকি মু-ুপাতের শপথ। যদিও কোনটাই আর শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে না। বাস্তবতা হলো, ভবিষ্যদ্বাণী কখনই ফলে না- না বাঘা বাঘা জ্যোতিষশাস্ত্রবিদের, না রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ অথবা বিজ্ঞানীর। যদিবা কখনও মিলে যায় তাহলে ভাববেন, বিষয়টা নেহাত কাকতালীয়- কাকও ডেকে উঠল তারস্বরে কা-কা করে আর তালও পড়ল তালপুকুরে। এর জন্যই বলা হয়, ভূত যদিওবা কালেভদ্রে দেখা যায়, ভবিষ্যত কখনই নয়। ভবিষ্যত নিয়ে সুস্পষ্ট ও সুনিশ্চিত কোন পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব নয় কখনই। বাঘা বাঘা প-িত বা তাবড় তাবড় বিশেষজ্ঞের পক্ষেও নয়। একটু পর বা একদিন বা কয়েকদিন পর কী ঘটবে, তা ঘটনা ঘটার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়। ভবিষ্যতের বিষয়ে বলা সর্বদাই অনিশ্চিত ও অনির্ণেয়। তবুও অতীতের প্রেক্ষাপট এবং আগামীর সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করে ২০১৬ সালে বিশ্বের ভাগ্যে বড়-সড় ঘটনা কী ঘটতে যাচ্ছে অথবা ঘটতে পারে, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, সে বিষয়ে যৎসামান্য আলোকপাত করা যেতে পারে। আবারও বলি, এটি কোন জ্যোতিষীর কোষ্ঠীবিচার, রাজনীতিবিদের কড়চা, অর্থনীতিবিদের থিসিস অথবা বিজ্ঞানীর ধীশক্তিজাত গবেষণাপত্র নয়। বরং নিতান্তই বিহঙ্গদৃষ্টিতে দেখা মামুলি পর্যবেক্ষণ। কেউ কি ভেবেছিল বিশ্ববাজারে তেলের দাম জানুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে নেমে যাবে ব্যারেলপ্রতি ৩০ ডলারের নিচে, যা ২০০৪ সালে ১ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন। এতে করে গুটিকতক দেশ বা গোটা বিশ্বের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে শ্লথগতিসম্পন্ন। কেউ কি ভেবেছিল ২০১৬-এর প্রাক্কালে ৩৬১ কিলোমিটার দূরে মণিপুরে সংঘটিত ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্প কাঁপিয়ে দেবে রাজধানী ঢাকাকে? গত ১১ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট-বড় ১১টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে, যা সুবিস্তৃত আফগানিস্তান-চেন্নাই থেকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, টোগো পর্যন্ত! আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত এল নিনোর প্রভাবে ২০১৬ হবে ২০১৫-এর চেয়েও উষ্ণ ও খরাপ্রবণ। এর প্রভাবে এ বছর বাতাসের গতিবেগ, বৃষ্টিপাত ও ঋতুচক্রের স্বাভাবিক অবস্থার ব্যত্যয় ঘটবে। কোথাও কোথাও খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়াও বিচিত্র নয়। মার্কিন চোখ রাঙ্গানিকে উপেক্ষা করে অভাব-অনটনে জর্জরিত উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমার হঠাৎ বিস্ফোরণও বিশ্ববাসীর জন্য একটি চমক নিঃসন্দেহে! জাতিসংঘে এবার নারী মহাসচিব! ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে জাতিসংঘের বর্তমান অষ্টম মহাসচিব বান কি মুনের দ্বিতীয় মেয়াদ। সুতরাং এ বছরই হতে হবে বিশ্ব সংস্থার পরবর্তী মহাসচিব নির্বাচন। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্তর কানাঘুষা ও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে- কে হচ্ছেন জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব? তিনি কোন্ দেশের? নারী না পুরুষ? সর্বোপরি তিনি কি আদৌ পারবেন বর্তমান টালমাটাল বিশ্বের বেহাল অবস্থা ধরতে শক্ত হাতে? পৃথিবীর বর্তমান অস্থির পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করে একটি সুস্থির ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে? বাস্তবতা হলো, এতদিন পর্যন্ত জাতিসংঘের মহাসচিব পদের নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি ছিল গোপনীয়তায় ঢাকা এবং নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের নিয়ন্ত্রণাধীন। এবারই প্রথমবারের মতো সদস্য রাষ্ট্রগুলো উন্মুক্তভাবে নিজেদের প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও নিয়মিত প্রকাশ করা হবে। মহাসচিব নির্বাচনের প্রক্রিয়া শিথিল করার লক্ষ্যে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি এক যৌথ চিঠিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে প্রার্থী মনোনয়ন আহ্বান করেছেন। এক্ষেত্রে এবার প্রথমবারের মতো একজন নারী মহাসচিবের নাম শোনা যাচ্ছে। পরবর্তী মহাসচিব কে হতে যাচ্ছেন, এই প্রশ্নে এখনও পর্যন্ত কোন মতৈক্য নেই। তবে নারী মহাসচিবের প্রশ্নে অধিকাংশই একমত। এমনকি বর্তমান মহাসচিব বান কি মুন পর্যন্ত। এ বিষয়ে চাপ প্রয়োগের জন্য জাতিসংঘে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের নারী রাষ্ট্রদূতরা স্বউদ্যোগে একটি অনানুষ্ঠানিক সংগঠন গড়েছেন, যার নাম ‘নারী মহাসচিব নিয়োগে সমর্থনকারী বন্ধুদের গ্রুপ’। এখনও পর্যন্ত তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে- ইরিনা বুকভা, হেলেন ক্লার্ক ও মিশেল বাশেলেত। গ্রুপটি জানিয়েছে, এ পর্যন্ত তারা ৭০টি দেশের সমর্থন আদায় করেছে। ইরিনা বুকভা বুলগেরিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিপুল ভোটাধিক্যে পর পর দু’বার ইউনেস্কোর মহাপরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। লেখাপড়া করেছেন মস্কোয়। চমৎকার রুশ ও ফরাসী জানায় রাশিয়া ও ফ্রান্স তাকে সমর্থন দিতে পারে। মহাসচিব হতে হলে যেসব যোগ্যতা থাকা চাই, যেমন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা, দক্ষ প্রশাসক হিসেবে খ্যাতি ও বহুভাষিকতা, তার রয়েছে। হেলেন ক্লার্ক নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে ইউএনডিপির প্রশাসক। মিশেল বাশেলেত চিলির প্রেসিডেন্ট। দু’জনেরই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ প্রশাসক হিসেবে সুনাম রয়েছে। এর বাইরেও নাম শোনা যাচ্ছে লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট ডালিয়া গ্রিবস্কাইতে, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভুক জেরেমিহর, মেসিডোনিয়ার সেরগান কেরিম ও ক্রোয়েশিয়ার বিদেশমন্ত্রী ভেসনা পুসিতের। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী সাধারণ পরিষদের সব সদস্যের ভোটে নির্বাচিত হন মহাসচিব। তবে তার আগে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য কোন একজন প্রার্থীর বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছলে তবেই তার নাম সাধারণ পরিষদে আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হয়। এর বাইরেও রয়েছে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকার। স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে একমাত্র যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, তারা একজন নারী মহাসচিব দেখতে চায়। রাশিয়া বলেছে, নারী বা পুরুষ নয়, বরং যোগ্য প্রার্থীকেই নির্বাচন করতে হবে। জাতিসংঘের অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী মহাসচিবের দায়িত্ব বিশ্বের বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে আবর্তিত হয়। সে অনুযায়ী এবার মহাসচিব আসার কথা পূর্ব ইউরোপ থেকে। এই নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটলে ইরিনা বুকভার সম্ভাবনাই সবচেয়ে উজ্জ্বল। শেষ পর্যন্ত যার ভাগ্যেই শিকে ছিঁড়ুক না কেন, আগামী মহাসচিবকে সব সদস্য রাষ্ট্রের সামনে বসতে হবে চাকরির পরীক্ষায়। অথচ আগে শুধু নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা প্রার্থীদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করত। এবার নারী মহাসচিব বলেই কি একটু বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে? বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আগামী দিনের প্রযুক্তি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা এবং আভাস-ইঙ্গিত দেয়া সম্ভব হলেও বিজ্ঞানের ভবিষ্যত সম্পর্কে কিছু বলা প্রায় অসম্ভব। এমনিতেই তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা বা থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স এগিয়ে আছে কমপক্ষে পাঁচ-সাত শ’ বছর। সুইজারল্যান্ডের সীমান্তবর্তী আল্পসের ভূগর্ভে তৈরি সার্ন ল্যাবরেটরিতে প্রতিদিনই আবিষ্কৃত হচ্ছে কিছু যা কিছু, এই পৃথিবী ও বিশ্বব্রহ্মা-ের উৎপত্তি এবং ক্রমবিকাশ সম্পর্কে। ইতোমধ্যে বোসন-ফার্মিয়ন তথা বহুকথিত ঈশ্বরকণার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কেও চলছে নিরন্তর গবেষণা। সর্বশেষ আলোর গতির চেয়েও গতিসম্পন্ন কোনকিছুর অস্তিত্ব আছে কি-না তা নিয়েও চলছে তুমুল বিতর্ক। ভবিষ্যত শাসন করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এ নিয়েও ভবিষ্যদ্বাণীর পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’-এর লেখক ক্যামব্রিজের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং। বিশ্ব সৃষ্টির প্রায় সূচনালগ্ন থেকেই পৃথিবীর প্রায় অনুরূপ বলে লালগ্রহ মঙ্গল সম্পর্কে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। ২০১৫ সালে মঙ্গলগ্রহে পানি থাকার সম্ভাবনার কথা ঘোষণা করেছিলেন নাসা ও ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। মঙ্গলে পানির রহস্য উদ্ঘাটন ও জীববৈচিত্র্য থাকার সম্ভাবনা নিয়ে ২০১৬ সালেই চূড়ান্ত গবেষণায় নামবে নাসা। ইতোমধ্যে মঙ্গলের অনুরূপ পরিবেশ তৈরি করে নাসা পেরুর একটি বিশেষ মরুভূমিতে আলু চাষের উদ্যোগ নিয়েছে। এই পরিকল্পনা সফল হলে অদূর ভবিষ্যতে মঙ্গলগ্রহ, চাঁদ বা সৌরজগতের অন্যত্রও চাষাবাদের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। এক্ষেত্রে বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা করাও অপেক্ষাকৃত সহজ হবে। কেননা, মঙ্গলপৃষ্ঠের পরিবেশে অনেক বেশিমাত্রায় কার্বন ডাই-অক্সাইড থকায় অন্যান্য শস্যের তুলনায় আলু চাষ হবে অপেক্ষাকৃত সহজ। এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক, নাসার বিজ্ঞানীরা এই ধারণা নিয়েছেন রিডলি স্কটের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীনির্ভর চলচ্চিত্র দ্য মার্শিয়ান থেকে, যেখানে এক উদ্ভিদবিজ্ঞানী লালগ্রহ মঙ্গলে আলু চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন। টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের ছবিটিতে আলু চাষ করেছিলেন অভিনেতা ম্যাট ডেমন। মানব ভ্রƒণ নিয়ে ‘ক্রিসপর-কাস ৯’ (ঈৎরংঢ়ৎ-ঈধং ৯) নামক প্রযুক্তির সাহায্যে জিন পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার জন্য পরীক্ষামূলক গবেষণা চালাবেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা। ভ্রƒণ উন্নয়নের এ প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন লন্ডনের ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউশনের কর্মকর্তা ক্যাথি নিয়াকান। ২০১৫ সালে এ গবেষণার পথ দেখান চীনের বিজ্ঞানী জুনজিউ হুয়াং। নীতি-নৈতিকতার দিক থেকে বিতর্ক থাকলেও এই গবেষণা যদি সফল হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে জিনঘটিত জটিল দুরারোগ্য ব্যাধি, যেমন থ্যালাসমিয়া, আলঝেইমার্স, পারকিনসন্স, জটিল ক্যান্সার, হৃদরোগ ইত্যাদি সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে। তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রায় বিপ্লব ঘটে যাবে। ২০১৬ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হবে ৩২০ কোটি মানুষ, প্রায় ৪৪ শতাংশ। ২০০ কোটি মানুষের হাতে থাকবে স্মার্টফোন। স্মার্টফোন ও মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমবে পিসির ব্যবহার। নতুন বাজার সৃষ্টি হবে ইন্টারনেটভিত্তিক পণ্যদ্রব্য বেচাকেনার। এর বাইরেও সহজলভ্য হয়ে উঠবে তারবিহীন বিদ্যুত, এভাটার সিনেমায় দেখা হলোগ্রাফিক টিভি, সৌরবিদ্যুতভিত্তিক হাইপারসনিক ট্রেন, প্রযুক্তি অদৃশ্য মানব, ত্রিমাত্রিক প্রিন্টারের বহুবিধ ব্যবহার ইত্যাদি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০১৬ সালের ৮ নবেম্বর। দেশটির ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার মহড়ায় ইতোমধ্যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে শুরু হয়েছে জাতীয় বিতর্ক। নির্বাচনে এবার ডেমোক্র্যাট দল সমর্থিত হিলারি ক্লিনটন, মার্টিন ওমেলি ও বার্নি স্যান্ডারস এবং রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে সাবেক প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশপুত্র জেব বুশ, ডোনাল্ড ট্রাম্প, বেন কারসন, টেড ক্রুজসহ আরও অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে প্রচারে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন মার্কিন ধনকুবের ও ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি ইতোমধ্যে চরম মুসলিমবিদ্বেষী ও অভিবাসনবিরোধী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। হিলারির বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণসহ সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও মনিকা লিউনস্কির অসঙ্গত সম্পর্ক নিয়েও কথা বলতে ছাড়েননি তিনি। বিখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও নিউরোসার্জন বেন কারসনও এর মধ্যে মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাট দলের হিলারি ক্লিনটন এবং বার্নি স্যান্ডারস মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন, যদিও হিলারির প্রচরণাটাই তুলনামূলকভাবে বেশি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। শেষ মুহূর্তে কার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে, তা এখনই বলা না গেলেও মার্কিনীরা এবার অন্তত একজন নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রস্তুত কি-না তা শেষ বিচারে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। এই নির্বাচনের আরও একটি দিক লক্ষণীয়। আর তা হলো, বিশেষ করে রিপাবলিকান প্রার্থীদের ধর্মবিদ্বেষ, জাতিবিদ্বেষ, বর্ণবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ, সর্বোপরি অভিবাসনবিরোধী কট্টর নীতি। অথচ মার্কিনীরাই বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচার করে থাকে! অথচ পরিহাসের বিষয় হলো, আজকের এই আকাশচুম্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিনির্মাণ করেছে কিন্তু অভিবাসীরাই। দ্বি-দলীয় ব্যবস্থাই মার্কিন রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে দ্বি-দলীয় বিভক্তি আরও তীব্র রূপ ধারণ করেছে। পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়ি, ব্যক্তিগত আক্রমণও বাদ যায়নি। তবে পর পর দুই মেয়াদে ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় থাকার পর এখন একজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের হোয়াইট হাউসে ঢোকার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি বাড়তে থাকায় ভোটারদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে আন্তর্জাতিক ইস্যু- যেমন আইএস, ইরান, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া। মুসলিম চরমপন্থীদের উত্থান ইস্যুটিকে রিপাবলিকানরা যেভাবে কাজে লাগাতে পারছে ডেমোক্র্যাটরা সেভাবে পারছে না। কেননা যুদ্ধবিরোধী ইমেজ কাজে লাগিয়েই বারাক ওবামা আসেন ক্ষমতায়। ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার করে হিলারিও আছেন বেকায়দায়। তবে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় যিনিই আসুন না কেন, তাকে দ্বিধাবিভক্ত জনমত নিরসনসহ রাজনৈতিক জটিলতা কাটিয়ে জাতীয় ঐক্য গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। এর বাইরেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেসব বিষয় আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এবং ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে সেগুলো হলো- রাশিয়ার সামরিক বলয় বৃদ্ধি, ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ প্রত্যাহার, চীনের সামরিক গর্জন, ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ সাইপ্রাসের জাতিগত বিভাজন নিরসন ইত্যাদি।
×