ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার হেসে খেলে জিতল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

এবার হেসে খেলে জিতল বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ প্রথম টি২০তে খানিক চাপ নিয়েই জিতেছিল বাংলাদেশ। রবিবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে হেসে খেলেই জিতল মাশরাফিবাহিনী। চার ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল। সাব্বির রহমান রুম্মনের ব্যাটিং-বোলিং ঝলকে ৪২ রানের বড় জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে অপরাজিত ৪৩ রান করার পর বল হাতে ৩ উইকেট নেন সাব্বির। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে এর আগে দুটি টি২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। দুটিতেই জেতে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ থাকে জিম্বাবুইয়েই। নির্ধারিত ওভারের কোন ম্যাচেই হারেনি বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে এসেও তাই ঘটল। ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রান করে বাংলাদেশ। এবারও সাব্বির রহমান রুম্মন দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। ওয়ানডাউনে নেমে অপরাজিত ৪৩ রান করেন। সেই সঙ্গে ওপেনার সৌম্য সরকারও রানে ফেরেন। ৪৩ রান করেন। এ দুইজনের সঙ্গে সাকিব আল হাসানের অপরাজিত ২৭, রিটায়ার্ড হার্ট হওয়া মুশফিকুর রহীমের ২৪ ও ওপেনার তামিম ইকবালের ২৩ রানের বড় সংগ্রহই স্কোরবোর্ডে জমা করে। ব্যাটিংয়ে ঐক্যবদ্ধ নৈপুণ্যই দেখা যায়। প্রথম টি২০তে জিম্বাবুইয়ে ১৬৩ রান করেও জিততে পারেনি। রবিবার দ্বিতীয় টি২০তে এবার জিম্বাবুইয়ের রান অতিক্রম করার পালা আসে। তাতেও সফল হতে পারেনি দলটি। ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১২৫ রান করতে পারে সফরকারীরা। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা সর্বোচ্চ ৩০ রান করতে সক্ষম হন। এবার ব্যাটিংয়ে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়নি বাংলাদেশ। তবে বোলিংয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। প্রথম টি২০তে বোলিংই দেয়া হয়নি শুভাগত হোম চৌধুরীকে। এবার শুরুতেই শুভাগতকে বল করানো হয়। ১ উইকেট নেয়া ছাড়া শুভাগতর আর কোন ভূমিকাই থাকল না। মাসাকাদজা (৩০), ম্যালকম ওয়ালার (২৯) ও ভুসি সিবান্দার (২১) ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যানই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। সাব্বির একাই নেন ৩ উইকেট। ম্যাচের শেষ ওভারের পঞ্চম বলে গিয়ে মুস্তাফিজুর রহমান খানিক কাঁধে আঘাত পান। মাঠ থেকে বের হন। সাব্বির বল করতে এসেই তিন নম্বর উইকেটটি নিয়ে নেন। সেই সঙ্গে জিম্বাবুইয়ের ২০ ওভারও শেষ হয়ে যায়। টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। এলটন চিগুম্বুরার পরিবর্তে জিম্বাবুইয়ের নেতৃত্ব দেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। টস জেতার পর বাংলাদেশ অধিনায়ক আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা সারা বছরই টার্গেট অতিক্রম করেছি এবং জিতেছি। এশিয়া কাপ ও টি২০ বিশ্বকাপের আগে ব্যাটিং অনুশীলনটা ভালভাবে সেরে নিতে চাই। ওপেনাররা কী করেন, তা দেখে নিতে চাই। মিডলঅর্ডারে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানরা আছেন।’ নেতৃত্ব থেকেই শুধু চিগুম্বুরাকে দূরে রাখা হয়নি। ম্যাচটিতেও রাখা হয়নি। মাসাকাদজা বলেন, ‘চিগুম্বুরাকে এই ম্যাচে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। টি২০ বিশ্বকাপই আমাদের মাথায় আছে। কিছু ক্রিকেটারকে ঝালাই করে নেয়ার ব্যাপারও আছে।’ প্রথম টি২০তে যে একাদশ ছিল, দ্বিতীয় টি২০তেও বাংলাদেশ সেই একাদশ নিয়েই নেমেছে। তবে জিম্বাবুইয়ে একাদশে তিনটি পরিবর্তন করা হয়। চিগুম্বুরাকে বিশ্রামে রাখা হয়। সেই সঙ্গে অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজা ও ফাস্ট বোলার লুক জঙ্গে। একাদশে সুযোগ পান-উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান রিচমন্ড মুটুমবামি, মিডিয়াম পেসার তাওরাই মুজারাবানি ও ফাস্ট বোলার নেভিল মাদজিভা। তাতেও কোন কাজ হয়নি। রেজাল্টে কোন ভিন্নতা নেই। জয় হয়েছে বাংলাদেশেরই। সেই সঙ্গে ওপেনার নিয়ে যে আশা করা হচ্ছে, তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার তা পূরণ করেছেন। দুইজন মিলে শুরুতেই ৪৫ রানের জুটি গড়েন। ৪৫ রানে তামিম (২৩) আউট হওয়ার পর সাব্বির রহমান রুম্মনকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলতে থাকেন সৌম্য। ৭৫ রান হতেই সৌম্যও (৪৩) সাজঘরে ফেরেন। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এ ম্যাচেও ব্যর্থ হন। ১ রান যোগ হতেই আউট হয়ে যান। এমনিতেই যেন খানিক ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং। ৭৬ রানেই ৩ উইকেটের পতন ঘটে যায়। এরপর মুশফিক ব্যাট হাতে নামেন। সাব্বির ও মুশফিক ভালই এগোতে থাকেন। কিন্তু ১২৮ রানে গিয়ে মুশফিক আহত হন। হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন। ইনিংসের ১৬তম ওভারে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ায় মাঠের বাইরে চলে যান মুশফিক। ১৬তম ওভারের শেষ বলে ক্রেমারকে পয়েন্টে কাট করেই সিঙ্গেল নিয়ে নেন মুশফিক। তখনই হঠাৎ করে তার হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ে। ব্যথায় কাতর মুশফিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে বাংলাদেশ দলের ফিজিও সঙ্গে সঙ্গেই মাঠে ঢোকেন। কিন্তু ব্যথা না কমায় ফিজিওর সঙ্গেই মাঠের বাইরে চলে যান মুশফিক। মাঠ ছাড়ার আগে মুশফিক ২০ বলে একটি চারের সাহায্যে ২৪ রান করেন। এরপর আর কোন ব্যাটসম্যানকেই মাঠের বাইরে যেতে হয়নি। সাব্বির যে ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে ব্যাট হাতে ওয়ানডাউনে নামেন, শেষ বল পর্যন্ত টিকে থাকেন। সাকিব ব্যাট হাতে নেমে আবারও ঝলক দেখান। এবার ১৭ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ২৭ রান করেন। সাব্বির-সাকিব মিলে ৩৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। সাব্বিরের ব্যাট থেকে আসে (৩০ বলে ১ চার ও ৩ ছক্কায়) অপরাজিত ৪৩ রান। এই ব্যাটিংয়ে ভর করে বাংলাদেশও বড় স্কোর গড়ে। এরপর সাব্বিরই বল হাতে জিম্বাবুইয়ের বারোটা বাজিয়ে দেন। তাতে হেসে খেলেই জেতে বাংলাদেশ।
×