ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দোকান চালিয়ে লেখাপড়া করছে অদম্য কিশোরী

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

দোকান চালিয়ে   লেখাপড়া করছে অদম্য কিশোরী

মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া ॥ ভোরের সূর্য পৃথিবী আলোকিত করার আগেই দোকান খুলে বসে কিশোরী সামসুন্নাহার। বন্ধ করছে রাত আট-নয়টায়। সকাল-দুপুরের খাওয়া পর্যন্ত চলে দোকানে। খদ্দেরদের ভিড় কমলেই বই নিয়ে পড়তে বসে। শতকরা ৯০ দিনই স্কুলে যেতে পারছে না। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে সামসুন্নাহারের এমন জীবন-যুদ্ধের পাশাপাশি চলছে লেখাপড়া। এ বছর অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে সে। দোকান সংলগ্ন প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক জামাল হোসেন জানালেন, ও খুবই মেধাবী। রোল নম্বর থাকত এক। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। শিশুটির ঘাড়ে টানা চারটি বছর চেপে বসেছে সংসারের বোঝা। বাবা-মায়ের অত্যন্ত আদরের সামসুন্নাহার। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও তার লেখাপড়া চলছে কষ্টের মধ্য দিয়ে। অদম্য এ কিশোরীর সঙ্গে কথা না বললে কিংবা তার নিত্যদিনের কর্ম নিজের চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। কোন প্রতিবন্ধকতাই দমাতে পারেনি সামসুন্নাহারকে। যার বাবা-মায়ের বোঝা হয়ে থাকার কথা; সেই ঘাড়ে নিয়েছে বাবা-মা, বোন-ভাইয়ের সংসারের বোঝা। এমন ছিল না সামসুন্নাহারদের জীবন-সংসার। বড়বোন মারুফা, ছোট ভাই জাকারিয়া, বাবা সোহরাব খান আর মা মাকসুদাকে নিয়ে তাদের সংসারে অনাবিল সুখ না থাকলেও স্বপ্ন ছিল। বাবা নারায়ণগঞ্জে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছিলেন। ১১ বছর আগে বহুতল ভবনের ছাদ থেকে পড়ে দুর্ঘটনায় শিকার হন সোহরাব। এরপর অনেক টাকা খরচ করে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু কোমর আর পায়ের হাড়ের আঘাত আর ভাল হয়নি। তাই বাড়িতে এসে বেড়িবাঁধের ওপর দোকান খুলে বসেন। দোকানটির ব্যবসা থেকেই কোনমতে চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু অচল হওয়ায় দোকান চালানো তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাবাকে সাহায্য করতে সামসুন্নাহার সেই থেকে এখন দোকানের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছে। পুরো চারটি বছর ছোট্ট এই সামসুন্নাহার এভাবে হাড়ভাঙ্গা খাটুনির ফাঁকে ফাঁকে সুযোগ পেলেই বই নিয়ে বসছে। এরই ফাকে খদ্দের সামলাচ্ছে।
×