ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার খালাস চেয়ে সাঈদীর রিভিউ আবেদন

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

এবার খালাস চেয়ে সাঈদীর রিভিউ আবেদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদ-াদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন করেছেন। রবিবার বেলা এগারোটায় সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিভিউ আবেদন করা হয়েছে। এতে এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হিসেবে আছেন জয়নুল আবেদিন তুহিন। এর আগে ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ সাঈদীর সাজা বৃদ্ধি অর্থাৎ মৃত্যুদ- চেয়ে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেছেন। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে এ রিভিউ আবেদন জানান। ৩০ পৃষ্ঠার মূল আবেদনসহ ৬৫৩ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ফাঁসি পুনর্বহালে পাঁচটি যুক্তি দেয়া হয়েছে। এদিকে সাঈদীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, চাপ সৃষ্টি করতেই জামায়াত নেতা সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ করেছে। আমি মনে করি সাঈদীর দ- বাড়িয়ে মৃত্যুদ- চেয়ে রিভিউ আবেদন দায়ের করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের কোন আইনগত বৈধতা নেই। যদি কোন অভিযোগে সাঈদীর অপরাধ প্রমাণিত হয়, সেই অপরাধের সাজা কি হবে সেটা সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। মানবতাবিরোধী মামলায় প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে জামায়াত নেতা সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার অপরাধে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদ-ে দ-িত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর সাঈদী আপীল করলে গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আপীল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে যে রায় দেয়, তাতে সাজা কমে আমৃত্যু কারাদ-ের আদেশ প্রদান করেন। ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সাঈদীর আপীল মামলার ৬১৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপীল বেঞ্চ। বিচারপতিদের মধ্যে মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সব অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দেন। আর বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক আসামির মৃত্যুদ-ের পক্ষে রায় দেন। তবে প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি এস কে সিনহা ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর মতামতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আমৃত্যু কারাদ-ের রায় আসে। আপীলের ১০, ১৬ ও ১৯ নম্বর অভিযোগে হত্যা, নিপীড়ন, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরে বাধ্য করায় সাঈদীকে ‘যাবজ্জীবন’ কারাদ- দেয়া হয়। যাবজ্জীবন বলতে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু পর্যন্ত’ কারাবাস বোঝাবে বলে ব্যাখ্যা দেয় আদালত। এছাড়া ৮ নম্বর অভিযোগের একাংশের জন্য সাঈদীকে ১২ বছরের সশ্রম কারাদ- এবং ৭ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদ-ের আদেশ দিয়েছে আপীল বিভাগ। এর মধ্যে ৮ ও ১০ নম্বর অভিযোগে ইব্রাহিম কুট্টি ও বিশাবালী হত্যা এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে আগুন দেয়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছিল। আপীলের রায়ের ১৫ মাস পর গত বছর ৩১ ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালত এর পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করলে বিষয়টি রিভিউয়ের পর্যায়ে আসে। রাষ্ট্রপক্ষও ইতোমধ্যে আপীলের ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেছে। সেখানে ট্রাইব্যুনালের সাজা পুনর্বহাল চাওয়া হয়েছে। এদিকে আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, চাপ সৃষ্টি করতেই জামায়াত নেতা সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ করেছে। রবিবার সাঈদীর দ- থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদনের পর সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সফিউর রহমান মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। নেত্রকোনার ৭ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ২০ মার্চ ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলায় সাত রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আগামী ২০ মার্চ দিন নির্ধারণ করেছে ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছে। প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসি্িকউটর মুখলেছুর রহমান বাদল দুই মাসের সময়ের আবেদন করলে এ সময় দেন ট্রাইব্যুনাল। মামলাটি পরিচালনা করছেন, প্রসিকিউটর মুখলেছুর রহমান বাদল ও প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি।
×