ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রিজভী বলেছেন ‘আসল বিএনপির’ ওরা বস্তির ছেলে

বিএনপি এবং ‘আসল বিএনপির’ মধ্যে আবার সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

বিএনপি এবং ‘আসল বিএনপির’ মধ্যে আবার সংঘর্ষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল নিয়ে বিএনপি ও ‘আসল বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে ফের সংঘর্ষ হয়েছে। রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় আসল বিএনপির কর্মী বহন করা একটি পিকআপভ্যান আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতে উভয়পক্ষের বেশ ক’জন আহত হয়েছেন। এর আগে ২ জানুয়ারি নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল নিয়ে ‘আসল বিএনপি’ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলে নেয়ার অংশ হিসেবে রবিবার বিকেলে ওই কার্যালয়ের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নেয় ‘আসল বিএনপি’। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ‘আসল বিএনপি’ সাংস্কৃতিক কর্মীসহ শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে রবিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় কাকরাইল থেকে নয়াপল্টনের দিকে একটি মিছিল বের করেন। কিছু নেতাকর্মী ‘দলীয় বিপ্লবের মহড়া’ লেখা একটি ব্যানার পিকআপভ্যানের সামনে লাগিয়ে ভ্যানে চড়ে বিভিন্ন ধরনের সেøাগান ও ঢাকঢোল বাজিয়ে বিএনপি কার্যালয় অভিমুখে যাচ্ছিল। পিকআপভ্যানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য শব্দযন্ত্রও নেয়া হয়েছিল। খবর পেয়ে সে সময় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিলেন ২ শতাধিক নেতাকর্মী। এক পর্যায়ে নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থাকা দলের নেতাকর্মীরা সামনের দিকে এগুতে থাকে। ‘আসল বিএনপি’র কর্মী বহনকারী পিকআপভ্যানটি নয়াপল্টন আনন্দভবন কমিউনিটি সেন্টারের কাছে পৌঁছলে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থাকা দলের নেতাকর্মীরাও সেখানে এসে পৌঁছে। এক পর্যায়ে তারা ‘আসল বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে পিকআপভ্যানটি (ঢাকা মেট্রো ন-১১-৯৩৭১) থামিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ ও ওই এলাকার লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলে। আগুনে পিকআপভ্যানে থাকা শব্দযন্ত্র ও ‘আসল বিএনপি’র কিছু কাগজপত্র পুড়ে যায়। পল্টন থানার ওসি মোরশেদ আলম সাংবাদিকদের জানান, কারা এই আগুন লাগিয়েছে, পুলিশ তা তদন্ত করে দেখছে। বিএনপি ও ‘আসল বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে পুরো নয়াপল্টন এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দু’পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টাধাওয়া চলার পর আসল বিএনপির নেতাকর্মীরা বিকেল ৪টার দিকে সেখান থেকে সরে যায়। আর বিএনপি নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন সেøাগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে যাওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এদিকে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ‘আসল বিএনপি’র নেতা কামরুল হাসান নাসিম জানান, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে হামলা করা হয়েছে। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আমাদের কর্মসূচীতে হামলা করা হয়েছে।’ পিকআপভ্যান পোড়ানোর জন্য বিএনপি কর্মীদের দায়ী করে তিনি খালেদা জিয়ার পদত্যাগ দাবি করেন। সন্ধ্যায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বস্তির কিছু টোকাই দিয়ে সরকার বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। উল্লেখ্য, বছর খানেক আগে খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নিজেকে আসল বিএনপির নেতা দাবি করেন কামরুল হাসান নাসিম। আর তাকে ‘সরকারের দালাল’ বলছেন বিএনপি নেতারা। এর আগে ২ জানুয়ারি নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল নিয়ে বিএনপি ও ‘আসল বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওইদিন উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে বেশ ক’জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পুলিশ। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে যুবদলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল হাকিম আরজুকে গ্রেফতার করে। বেশ কিছুদিন আগেই আসল বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তারা বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল করবেন। আর তাদের এ ঘোষণা শুনে বিএনপির নেতাকর্মীরাও সতর্ক পাহারায় থাকে। আর এ জন্যই আসল বিএনপির নেতাকর্মীরা ২ দফা বিএনপি অফিস দখল করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। বস্তির টোকাই দিয়ে বিএনপি কার্যালয় দখলের চেষ্টা চলছে Ñরিজভী ॥ সরকার বস্তির কিছু টোকাই দিয়ে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, বিএনপি যেন শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মকা- করতে না পারে সেজন্যই এমনটি করছে সরকার। রবিবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। রিজভী বলেন, সরকারের হীনমন্যতা থেকেই বিএনপি কার্যালয় দখলের চেষ্টার মতো নিকৃষ্ট কাজ চলছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। সরকারের এসব হীনমন্য কর্মকা- দেখে লোকজন ছি ছি করছে। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা যদি এমন নিকৃষ্ট কর্মকা- অব্যাহত রাখেন, তবে মনে রাখবেন জনগণকে সব সময় থামিয়ে রাখা যাবে না। জনগণের বিচার হচ্ছে ভয়ংকর। জনগণের শাস্তি কঠিন শাস্তি। জনগণের শাস্তিতে কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবেন না। রিজভী বলেন, কিছু নিকৃষ্ট বস্তির লোক নিয়ে এসে মিছিল করিয়ে সরকার প্রমাণ করতে চায় এরা বিএনপির একটি অংশ। সরকার আমাদের স্বস্তিতে মিছিল-মিটিং করতে দেয় না। অথচ এজেন্টের মাধ্যমে কিছু নিকৃষ্ট টোকাই ধরে এনে প্রটোকল দিয়ে মিছিল করায়। এতেই বোঝা যায় কারা এর সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে একের পর এক নাটক ও ষড়যন্ত্র করছে। কয়েকদিন আগেও কিছু রাস্তার টোকাই দিয়ে পার্টি অফিসে হামলা করেছে। এর আগেও অনেককে দিয়ে বিএনপি ভাঙ্গার চেষ্টা করেছে।
×