ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডোরাকাটা দাগ দেখে হুদহুদ চেনা যায়...

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

ডোরাকাটা দাগ দেখে হুদহুদ চেনা যায়...

মোরসালিন মিজান ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়...। কিন্তু শুধুই কি বাঘের গায়ে থাকে ডেরাকাটা দাগ? না, চিড়িয়াখানায় দেখা জেব্রার চিত্রিত শরীরটিও ডোরাকাটা। হুদহুদ পাখি যেন জেব্রা থেকে চেয়ে নিয়েছে সাদা-কালো রেখাগুলো। তবে দেখতে সাদামাটা নয় মোটেও। খুবই দৃষ্টিনন্দন। স্টাইলিশ। গায়ের আর সব রং, আঁকিবুকি দেখেও চোখ ফেরানো যায় না। মাথার উপরের ঝুঁটিটা যারপরনাই আকর্ষণীয়। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হয়ে ধরা দেয়। অন্য অনেক পাখি থেকে আলাদা এই পাখির ‘সুন্দর’ নাম মোহনচূড়া। মাথার উপরে থাকা সুন্দর চূড়ার দিকে তাকিয়েই এমন নামকরণ। পরিচিতি আছে কাঠকুড়ালি নামেও। অবশ্য সর্বাধিক জানাশোনা হুদহুদ নামেই। পাখি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হুদহুদ বহুকাল ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উড়ে বেড়াচ্ছে। ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইউরোপ, আফ্রিকা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট বিরল। এখন এই শীতের কালে মোটামুটি চোখে পড়ছে। আকাশে ধীরে ঢেউ তুলে উড়ে বেড়াচ্ছে পাখিটি। কখনও একলাটি, কখনওবা যুগল ওড়াউড়ি। ওড়াউড়ির এই ধরন দেখে চেনা যায় হুদহুদ। আর শুরুতে তো বলাই হলো ডোরাকাটা দাগের কথা। পাখিটির ডানা ও লেজ জেব্রার শরীরের মতোই সাদা-কালো এবং ডোরাকাটা। বাকি বর্ণনা খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, এর গায়ের সামনের দিকটা বাদামী রঙের। মাথায় মামুলি ঝুঁটি নয়। বেশ বড়। কাকাতুয়ার মতো দেখতে। কমলা রং ঝুঁটির ডগা কালো। পাখি বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ বলে, উত্তেজিত হলে হুদহুদ এই ঝুঁটি প্রসারিত করে। তখন ব্যান্ডপার্টির বাদকদের মাথায় থাকা বিশেষ টুপির মতো মনে হয়। কিংবা মনে হতে পারে মাথার উপর কোন হাতপাখা জুড়ে দেয়া হয়েছে! অবশ্য সাধারণ অবস্থায় ঝুঁটি গুটিয়ে রাখে। হুদহুদের ঠোঁটও খুব সুন্দর। সরু দীঘল ঠোঁট নিচের দিকে সামান্য বাঁকা। মাটিতে লম্বা ঠোঁট ঢুকিয়ে দিয়ে এরা খাদ্য সংগ্রহ করে। ফড়িং, পোকামাকড় ইত্যাদি খেয়ে বাঁচে। নিজে বাঁচে এবং ক্ষতিকর পোকামাকড় নিধন করে রক্ষা করে জমির ফসলও। এ কারণে পাখিটির কদর আছে গ্রামে। কোন কোন দেশে নাকি আইন করে পাখিটি রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিহাস পাঠেও হুদহুদ নামটি পাওয়া যায়। ধর্মগ্রন্থ কোরান ও বাইবেলে এই পাখির কথা এসেছে। কোরানের সূরা নামলের ২০-২২নং আয়াতে বলাটি এ রকমÑ একটি হুদহুদ পাখি নবী হযরত সুলাইমান (আ)-এর পোষা ছিল। এর কাজ ছিল বিভিন্ন স্থান থেকে খবরাখবর সংগ্রহ করা। একই পাখিকে প্রাচীন পারস্যে সততার প্রতীক জ্ঞান করা হয়। প্রাচীন মিসরেও পবিত্র জ্ঞান করা হতো। আর একেবারে উল্টোটি ইউরোপে। ওখানে এ পাখিকে চোর অপবাদ দেয়া হয়েছে! সব মিলিয়ে বিচিত্র পাখি বটে হুদহুদ!
×