ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সৌর পরিবারকে উথাল পাতাল করতে ধেয়ে আসছে দানব তারা!

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

সৌর পরিবারকে উথাল পাতাল করতে ধেয়ে আসছে দানব তারা!

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে আমাদের এ পৃথিবী! সৌরম-লের বুক কাঁপিয়ে তীব্রগতিতে ধেয়ে আসছে দানব তারা! ধ্বংসের দিন কি কড়া নাড়ছে এমন প্রশ্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তুলেছে। যে কোন মুহূর্তে বিশাল কোনও মহাজাগতিক বস্তুর আচমকা ধাক্কায় টালমাটাল হয়ে যেতে পারে আমাদের সৌরম-ল। ছিঁটকে এ গ্যালাক্সি থেকে বের করে দিতে পারে অন্যান্য তারা বা মহাজাগতিক বস্তুকে। থরথরিয়ে কেঁপে উঠবে আমাদের এ সৌর পরিবার। সে দিন নিমেষে উধাও হয়ে যাবে আমাদের এ বাসযোগ্য গ্রহের বায়ুম-ল। আর শ্বাস-বায়ু থাকবে না বলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বজায় রাখাটা রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়বে। বদলে যাবে এ সৌর পরিবারের সবক’টি গ্রহের কক্ষপথ। বদলে যাবে দিন-রাত আর বছরের হিসেব। বদলে যাবে তাদের ঋতু আর বায়ুম-ল। গোটা সৌরম-লে শুরু হয়ে যাবে অসম্ভব উথালপাতাল। সূত্র আনন্দবাজার অনলাইন পত্রিকা। কোনও ভয়ঙ্কর দুর্যোগের দিন কি আমাদের দোরগোড়ায় এসে গিয়েছে? একেবারেই হালে নাসার স্পিৎজার স্পেস টেলিস্কোপ (এসএসটি) ও ওয়াইড-ফিল্ড ইনফ্রা-রেড সার্ভে এক্সপ্লোরার (ওয়াইজ) যে তথ্য ও ছবি পাঠিয়েছে, তাতে সেই আশঙ্কা রীতিমতো জোরদার হয়ে উঠেছে। নাসা জানাচ্ছে, ব্রহ্মা-ে আমাদের ঠিকানাÑ ‘মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে যে কোন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আমাদের এ গ্যালাক্সিতেই অসম্ভব ঝড়ো গতিতে ছুটে আসছে একটি দানবের চেহারার মতো তারা। যার নামÑ ‘জিটা ওফিউচি’ বা ‘জিটা ওফ’। যাকে বলে ‘সুপারসোনিক গতি’। আমাদের গ্যালাক্সিতে এর আগে এত জোরে কোন তারাকে ছুটতে দেখা যায়নি। কত জোরে, জানেন? ঘণ্টায় ৫৪ হাজার মাইল বা সেকেন্ডে ২৪ হাজার কিলোমিটার। অত জোরে ছুটতে গিয়ে সে যাকে বলে, লাথি মেরে হটিয়ে দিচ্ছে সামনে পড়ে থাকা অন্যান্য তারা, মহাজাগতিক বস্তু, গ্যাস বা ধুলোবালিকে। তার ছোটার পথের সামনে যাকে পাচ্ছে, তাকেই ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক গুণ ভারি ওই তারা ‘জিটা ওফিউচি’। সমুদ্রে ঝড়ো গতিতে ছোটার সময়ে যেভাবে জলকে তুড়ি মেরেই সরিয়ে দেয় সর্বাধুনিক জাহাজ। গত সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি পেশ করা হয়েছে ফ্লোরিডার কিসিমিতে, আমেরিকান এ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মাসিক সম্মেলনে। গবেষকদলের নেতৃত্বে রয়েছেন মার্কিন মুলুকের উইয়োমিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম চিক। কোন যুদ্ধবিমান খুব নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় যেমন আমাদের বাড়ি-ঘরদোরের জানলা-দরজার কাচের শার্সি ঝনঝন করে ওঠে, তাতে চিড় ধরে আর পড়ে তা চুরচুর করে ভেঙে যায়, ঠিক তেমনিভাবেই আমাদের গ্যালাক্সিতে ওই অসম্ভব ভারি তারার ‘সুপারসোনিক গতি’-র জন্য গোটা সৌরম-লের থরথরিয়ে কেঁপে ওঠার জোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ঘটনাকে বলে, ‘বাও শক’। একটা অসম্ভব জোরালো তরঙ্গের অসম্ভব রকমের জোরালো ধাক্কা। যার চেহারাটা দেখতে অনেকটা ধনুকের মতো হয় বলে ওই ধাক্কার নাম দেয়া হয়েছে ‘বাও শক’। একেবারেই হালে নাসার নজরে পড়া ওই অভিনব ঘটনা সম্পর্কে কী বলছেন বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা? কলকাতার সত্যেন্দ্রনাথ বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেসের সিনিয়র প্রফেসর, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দ্বীপ চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, ‘‘আমাদের গ্যালাক্সিতে এর আগে কোন তারাকে এত জোরে ছুটতে দেখা যায়নি। আমাদের সূর্যও ছুটছে। কিন্তু তার গতি ‘জিটা ওফিউচি’-র কাছে একেবারেই নস্যি। ওই অসম্ভব জোরে ছোটার জন্য সে প্রচ- শক্তিশালী তরঙ্গের জন্ম দিচ্ছে এ গ্যালাক্সিতে। যা অবলোহিত রশ্মির চেহারায় ধরা পড়ছে। সেই তরঙ্গ সামনে থাকা কণার স্রোত, গ্যাস তারা, ধুলোবালি আর অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুকে সজোরে ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে। সরিয়ে দিতে গিয়ে সেগুলোকে অসম্ভব গরম করে দিচ্ছে। বেঙ্গালুরুর রামন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আরআরআই) প্রফেসর, ভারতে গ্যালাক্সি-গবেষণার অন্যতম জ্যোতির্বিজ্ঞানী বিমান নাথ জানাচ্ছেন, ‘‘একটা ঘটনা আমাদের খুবই ভাবিয়ে তুলেছে। তা হলো, কেন এত হন্তদন্ত হয়ে, এত জোরে ছুটছে আমাদের গ্যালাক্সির অন্য তারাগুলো? কেন সুপারসোনিক গতিতে ছুটছে ‘জিটা ওফিউচি’? তা কি গ্যালাক্সি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে? গেলে, কোথায় তাদের গন্তব্য, এমন অনেক প্রশ্নেরই সদুত্তর মেলেনি এখনও।’’
×