ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে গার্মেন্টস খাত এগিয়ে নিচ্ছে সরকার ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে গার্মেন্টস খাত এগিয়ে নিচ্ছে সরকার ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার সকল অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশের তৈরি পোশাক খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক রফতানি বিঘিœত করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কেবল দেশের অভ্যন্তরে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম বলে ষড়যন্ত্র সফল হয়নি। তিনি আরও বলেন, এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে ষড়যন্ত্র সফল হতে পারেনি। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসি-য়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে সংগঠনের নবনির্বাচিত কর্মকর্তারা রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর তেজগাঁও কার্যালয়ে সাক্ষাত করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি টিপু মুন্সী এমপি ও আতিকুল ইসলাম এ সময় বক্তৃতা করেন। খবর বাসসর। দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের আরও উন্নয়নের লক্ষ্যে গজারিয়ায় গার্মেন্ট পল্লীর নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারী প্রয়াসের সহযোগিতা দেয়ার জন্য গার্মেন্ট শিল্প মালিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় একটি গার্মেন্ট পল্লী স্থাপনের লক্ষ্যে আমাদের সরকার ভূমি বরাদ্দ দিয়েছে। এই পল্লী গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কাজ চলছে। আপনারা কিছু উদ্যোগ গ্রহণ এবং অর্থ ব্যয় করলে এটি দ্রুত সম্পন্ন করা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গার্মেন্ট শিল্প মালিকদের উদ্দেশে বলেন, আমি মনে করি আপনারা কৃপণতা দেখিয়েছেন ও টাকা বাঁচিয়েছেন। সেটাই সমস্যা। শেখ হাসিনা বলেন, গার্মেন্ট পল্লী প্রতিষ্ঠার জন্য গ্যাস সরবরাহ থেকে শুরু করে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আপনারা অর্থ ব্যয় এবং আপনাদের কারখানাগুলো স্থানান্তর করতে শুরু করলে এই পল্লীতে কোন সমস্যা হবে না। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি আরও বৃদ্ধি এবং অর্থনীতি জোরদার করার লক্ষ্যে বিদেশে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করার জন্য গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারকে ব্যবসায়বান্ধব সরকার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকার কখনও ব্যবসায় করতে চায় না, বরং এ সরকার দেশের অর্থনীতিকে একটি দৃঢ় ভিত্তি দেয়ার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করছে। তিনি বলেন, ব্যবসা করার জন্য আমরা সরকার গঠন করিনি, বরং আমরা এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সরকারের দায়িত্বে রয়েছি যাতে ব্যবসায়ীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ব্যবসা করতে পারেন এবং আমরা ইতোমধ্যে সে পরিবেশ নিশ্চিত করেছি। ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের পরিস্থিতির অবসান ঘটানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বেসরকারী ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয়করণকৃত ব্যাংকগুলো অপেক্ষাকৃত কম সুদে ঋণ প্রদান করছে। তৈরি পোশাক খাতের আরও উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই খাতে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ কর্মী নিয়োজিত রয়েছে এবং তারা দেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপক অবদান রাখছে। নারী গার্মেন্ট শ্রমিকদের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দেশের অর্থনীতি জোরদার করতে অবদান রাখছে এবং বাড়তি সময় কাজ করে বায়ারদের রফতানি চাহিদা পূরণ করছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের আরও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য গার্মেন্ট শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান। কারণ, তারা হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প খাতের মূল চালিকাশক্তি। রানা প্লাজা দুর্ঘটনা ও তাজরীন কারখানায় অগ্নিকা-সহ তৈরি পোশাক শিল্প খাতের বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করেছে। তিনি বলেন, আমরা এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বিদ্যুত উৎপাদনে সরকারের যুগান্তকারী সাফল্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশে বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ১৪ হাজার মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যে কোন সময় কমপক্ষে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে সক্ষম। তিনি বলেন, তাঁর সরকার গত সাত বছরে গ্যাস উৎপাদনও বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়া গ্যাস উৎপাদন আরও বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বিজএমইএ নেতৃবৃন্দ দেশ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের অধীনে বিভিন্ন খাতে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে।
×