ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষকদের দাবি দাওয়া শুনতে আজ গণভবনে ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

শিক্ষকদের দাবি দাওয়া শুনতে আজ গণভবনে ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অচলাবস্থা কাটাতে আন্দোলনরত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে আজ আলোচনায় বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেল সাড়ে চারটায় গণভবনে শিক্ষক নেতৃবৃন্দের দাবি-দাওয়ার কথা শুনবেন প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাতের জন্য শিক্ষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে রবিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এদিকে রবিবার কর্মবিরতির সপ্তম দিনে শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসেনের কাছে অসন্তোষ নিরসনে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জমা দিয়েছেন শিক্ষকরা। ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচীর ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেছেন সুপ্রীমকোর্টের এক আইনজীবী। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে আজ বুদ্ধিজীবী ও শ্রেণী-পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে পিঠা উৎ?সবের আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সবার সঙ্গে কুশলবিনিময় করবেন। এ আয়োজনে দাওয়াত পেয়েছেন আন্দোলনরত সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারাও। আন্দোলনরত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষক নেতাদের দাওয়াত দিয়েছেন। সেখানে তার মাধ্যমে একটা কিছু ঘোষণা আসতে পারে বলে তারা আশা করেন। এর আগে গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকবার শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের জন্য আবেদনের কথা জানিয়েছিলেন। তবে আবেদন করেও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সময় না পাওয়ায় হতাশাও ব্যক্ত করেন শিক্ষক নেতারা। তারা বলেন, শিক্ষকদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুললেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পাঁচ মিনিট বসতে পারলে এ সঙ্কটের সুরাহা হবে বলে তারা মনে করেন। তবে গত আট মাসে কয়েক দফা চিঠি পাঠিয়ে কোন সাড়া পাননি বলে সম্প্রতি জানিয়েছিলেন শিক্ষকরা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো চিঠি ‘আমলাদের বলয় ভেঙ্গে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যায়নি বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষকরা। তারা অভিযোগ করেন, একটি মহল প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিক্ষকদের বক্তব্যগুলো খ-িতভাবে উপস্থাপন করেছে। আমরা মাত্র পাঁচ মিনিট সময় পেলেও তাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলতে পারতাম। ঠিক এমন অবস্থায় কর্মবিরতির সপ্তম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটাতে শিক্ষক সমিতির নেতাদের ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে তাদের এই সাক্ষাত হওয়ার কথা রয়েছে বলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষক ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন তারা। এদিকে কর্মবিরতির সপ্তম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় সকাল থেকেই। সকালেই কয়েক দফা বৈঠক করেন শিক্ষক নেতারা। বৈঠকের মাধ্যমে শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া এবং নতুন বেতন কাঠামোর বিষয়ে দুটি সুনির্দিষ্ট লিখিত সুপারিশ শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইনের কাছে দিয়েছেন ফেডারেশনের নেতারা। বিকেলে সচিবালয়ে শিক্ষা সচিবের কাছে লিখিত প্রস্তাবনা জমা দেন ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল। ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, সপ্তম বেতন কাঠামোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৩ এ উন্নীত হওয়াসহ যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসতেন তা বহাল রাখার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এছাড়া গ্রেড-১ থেকে কিছুসংখ্যক শিক্ষককে সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদা প্রদানের জন্যও প্রস্তাব করা হয়। শিক্ষাসচিবের সঙ্গে আলোচনায় তরুণ শিক্ষকদের উচ্চতর শিক্ষার জন্য বৃত্তি চালু ও গবেষণার ব্যবস্থা করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়েই আমাদের সমস্যার সমাধান হবে। তবে আগামীকালও (আজ) কর্মবিরতির কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। আন্দোলন স্থগিত হবে কিনা, এ বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ওপর নির্ভর করছে। সুষ্ঠু সমাধান হলে শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরে যাবেন। দাবি পূরণ হলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনও ক্লাস নেয়া হবে বলে জানান মাকসুদ কামাল। প্রধানমন্ত্রী চান ছাত্রছাত্রীদের যাতে ক্ষতি না হয়, তেমনিভাবে শিক্ষকরাও যে দাবিগুলো করেছেন তারও সুষ্ঠু সমাধান হোক। এ কারণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব। এদিকে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচীর ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেছেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট ইউনুস আলী আকন্দ। একই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আবেদনও জানানো হয়েছে রিটে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকাসহ মিডিয়ায় শিক্ষকদের কর্মবিরতির প্রতিবেদন দেখে রিট আবেদনটি দায়ের করেছেন বলে জানিয়েছেন এ্যাডভোকেট ইউনুস আলী আকন্দ। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, অর্থসচিব, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি-সেক্রেটারি, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ মোট ৯ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। রাবিতে অচলাবস্থা, ধর্মঘট ॥ শুধু কর্মবিরতি নয়, পাশাপাশি আজ অবস্থান ধর্মঘট পালন করবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সমিতির যুগ্মসম্পাদক শাতিল সিরাজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাত দিনের কর্মবিরতির কারণে অচল হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিভাগেই ক্লাস বা পরীক্ষা হয়নি। এতে সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। অবস্থান কর্মসূচী সম্পর্কে রাবি শিক্ষক সমিতির যুগ্মসম্পাদক বলেন, দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। এছাড়া সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সিনেট ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচী পালিত হবে। শিক্ষক সমিতির মিটিং থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে সেশনজটে পড়ার শঙ্কায় প্রহর গুনছেন শিক্ষার্থীরা। ক্লাস-পরীক্ষা হবে না জেনে শীতের ছুটি শেষ হলেও অনেক শিক্ষার্থী এখনও ক্যাম্পাসে আসেননি। অনেকে আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কর্মবিরতির কারণে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) কোন বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে ॥ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে অর্থমন্ত্রী প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ ও অন্যান্য অসঙ্গতি দূরীকরণের দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতির মধ্যেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পূর্বঘোষিত সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। রবিবার মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের তৃতীয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা এবং ফোকলোর বিভাগে প্রথম ব্যাচের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষক সমিতির সভাপতি সোহেল রানা জানান, শিক্ষার্থীদের সেশনজটের কথা বিবেচনা করে পূর্বঘোষিত সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাগুলো নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগে নোটিস পাঠানো হয়েছে এবং শিক্ষকদের দাবিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত পূর্বঘোষিত সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ছাড়া কোন বিভাগে ক্লাস ও পরীক্ষা চলবে না। তিনি আরও বলেন, আশা করছি সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে অতিসত্বর দাবিগুলো মেনে নেবেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ॥ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত কর্মবিরতি পালন করছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষকরা। কর্মবিরতির সপ্তম দিন পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের ২৪টি চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। কর্মবিরতির কারণে এসব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্র জানায়, আন্দোলন শুরুর পর থেকে ১২ জানুয়ারি ২টি, ১৩ জানুয়ারি ৬টি, ১৪ জানুয়ারি ৯টি, ১৬ জানুয়ারি ৫টি ও ১৭ জানুয়ারি ২টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া চলতি সপ্তাহে আজ, ১৯, ২০ ও ২১ জানুয়ারি বিভিন্ন বিভাগে মোট ১১টি চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলমান থাকায় এ পরীক্ষাগুলো নিয়েও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে আবারও সেশনজটের আশঙ্কা করছেন তারা। তবে ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত ছাড়া ক্লাস-পরীক্ষা চালু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন।
×