ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খায়রুল আলম

বিদেশে বেড়েছে কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: ০৭:১২, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬

বিদেশে বেড়েছে কর্মসংস্থান

প্রতিটি সেক্টরেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থনীতির হিসাব অনুযায়ী গত চার দশকে প্রতিবেশী অনেক দেশ, এমনকি ভারতকেও আমরা অনেক ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গেছি। বর্তমানে আমাদের মাথাপিছু আয় এক হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। পাঁচ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে এখন ২২ দশমিক ৪ ভাগে নেমে এসেছে। আমাদের রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আর এর মধ্যে আরেকটি সুখবর হলো বাংলাদেশীদের বিদেশে কর্মসংস্থান অনেক বেড়েছে এবং এ বছর আরও বাড়বে। জানা গেছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার ২০১৪ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। আর ২০১৪ সালে মোট ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৪ জন কর্মী বিদেশে গিয়েছিলেন । ২০১৫ সালে বৃদ্ধি পেয়েছে নারী অভিবাসনের হারও। ২০১৫ সালে যে কোন বছরের মধ্যে সর্বাধিকসংখ্যক নারী কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। এর পরিমাণ মোট এক লাখ ৩ হাজার ৭০৭ জন। ২০১৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭৬ হাজার ৭ জন। অর্থাৎ ২০১৪ সালের তুলনায় নারী কর্মসংস্থানের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৩৬ দশমিক ৪৪ ভাগ। বিগত বিএনপি জোট সরকারের শাসনামলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছিল ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬২২ জনের। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম আমলে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিদেশে কর্মী গিয়েছে ২৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৩ জন। যা দ্বিগুণেরও বেশি। বিএনপির শাসনামলে কর্মীরা ৯০টি দেশে গেলেও বর্তমানে তা ১৬০টি দেশে উন্নীত হয়েছে। এদিকে বিদেশে কর্মরত কর্মীদের ঘামে ও শ্রমে সংশ্লিষ্ট দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হচ্ছে। একইসঙ্গে তারা বিদেশের অর্জিত অর্থ দেশে প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভঙ্গ করেছে সর্বকালের রেকর্ড। বর্তমানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলারের অধিক। বৈদেশিক মুদ্রাার রিজার্ভ থাকার কারণেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণেও বাংলাদেশ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বিএনপি সরকারের শাসনামলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১৯ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে রেমিটেন্স এসেছে ৬১ দশমিক ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রবাসীদের প্রেরণকৃত রেমিটেন্স এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১৪-’১৫ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সদ্য স্বাধীন দেশের উন্নয়নে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দিয়েছেন রূপকল্প-২০২১। তার নেতৃত্বে আমরা ইতোমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। জানা গেছে, বর্তমান সরকার বৈদেশিক কর্মসংস্থান খাতকে অন্যতম থ্রাস্ট সেক্টর হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানের বাংলাদেশ থেকে ১৬০টি দেশে প্রায় ৯৬ লাখ বাংলাদেশী কর্মী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। এদিকে বাংলাদেশ সরকার বিদেশে কর্মসংস্থানের কার্যক্রম স্বচ্ছ, জবাবদিহিতা এবং সুন্দর ও সঠিকভাবে সম্পন্নের জন্য ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছে। এ আইনের অধীনে অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধিমালার প্রণয়নের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। জানা যায়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি ২০১৬ ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। যা কিছু দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। প্রবাসীদের কল্যাণে এবং বিদেশ গমনেচ্ছুদের সহায়তায় ইতোমধ্যে ‘প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ব্যাংক থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ ৩৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ২২৬ জন। ২০১৫Ñ১৬ অর্থবছরে (ডিসেম্বর পর্যন্ত) প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ ৪১ কোটি ২৯ লাখ টাকা এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ১৩৪ জন। এদিকে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংকে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ব্যাংকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কাজ করতে পারলে প্রবাসী কর্মীরা যেমন সহজে রেমিটেন্স প্রেরণ করতে পারবেন, তেমনি তাদের বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হবে। এছাড়া দক্ষ জনশক্তি হিসেবে কর্মীদের বিদেশ পাঠাতে বর্তমানে ৬৫টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ৬টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি থেকে কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। সম্প্রতি আরও ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রামে একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এগুলোর নির্মাণের কাজ শেষ হলে দেশের সকল জেলা থেকে কর্মীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পাবে। এছাড়া ৪৩৯টি উপজেলায় টিটিসি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এদিকে শীঘ্রই সৌদি আরবে বাংলাদেশী শ্রমিক পাঠানোর চেষ্টা করছে সরকার। সৌদি আরবে ডোমেস্টিক সার্ভিসের আওতায় পুরুষকর্মী নিয়োগ শুরু হবে বলে সে দেশের সরকার বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছেন। জানা গেছে, সৌদি আরবের সঙ্গে শ্রমশক্তি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে এবং খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর সৌদি আরবে প্রত্যেক নারী শ্রমিকের সঙ্গে একজন পুরুষ শ্রমিক যাওয়ার সুযোগ পাবে। সৌদি আরব প্রায় ২ লাখ নারী গৃহকর্মী চেয়েছে। ২ লাখ নারী গৃহকর্মী পাঠানো হলে তাদের সঙ্গে আরও ২ লাখ পুরুষ গৃহকর্মী পাঠানো যাবে। পুরুষদের মধ্যে গার্ড, গাড়িচালক, মালী ও তত্ত্বাবধায়কসহ নারী গৃহকর্মীদের নিকটাত্মীয় যেতে পারবেন। তাদের মধ্যে স্বামী, ভাই অথবা চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাই থাকতে পারে। এদিকে চলতি বছরের জর্ডানে প্রায় একশ’ জনশক্তি পাঠানো হবে। তাদের সকলেই হবে ছিটমহলবাসী। লেখক : উন্নয়নকর্মী
×