ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে এলাম কক্সবাজার

প্রকাশিত: ০৭:১১, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে এলাম কক্সবাজার

মন চায় আকাশ ধরতে, সাগরের নীল জলে জলকেলি খেলতে। সেমিস্টার পদ্ধতিতে পড়াশোনা হওয়া সময় বের করা খুবই কঠিন। ছয় মাস ধরে প্রতীক্ষায় থাকি কবে শেষ হবে সেমিস্টার সঙ্গে একটু ছুটি। সেমিস্টারজুড়ে সারাদিন ক্লাস, প্র্যাকটিক্যাল, এ্যাসাইমেন্ট, গ্রুপ ওয়ার্ক, লাইব্রেরি ওয়ার্ক করে ক্লান্ত। তাছাড়া রুটিস ধরে একই ধরনের কাজ করায় কেমন একটা একগুঁয়ে ভাব চলে আসছে। প্রয়োজন একটু রিফ্রেশমেন্ট। তাই পরীক্ষা শেষ করেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমরা দশ বন্ধু মিলে বেরিয়ে পড়লাম সাগর ও পাহাড়ের খোঁজে। উদ্দেশ্য মেঘের ভেলায় চড়ে আকাশ ছোঁয়া ও সমুদ্রবিলাস। আর এজন্য সবচেয়ে ভাল স্থান দেশের পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি ও সাগরপাড়ের শহর কক্সবাজার। প্ল্যান অনুযায়ী ময়মনসিংহ থেকে রাত ৮টার বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে ভোর ৫টার মধ্যে পাহাড় ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর চট্টগ্রামে পৌঁছে গেলাম। ওইদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম শহর, প্রতেঙ্গা সী বীচ ঘুরে সন্ধ্যায় বাস ধরে রাতের মধ্যে সোজা সবুজ পাহাড় ঘেরা সাঙ্গু নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা ছবির মতো সুন্দর শহর বান্দরবানে। রঙিন আলো সজ্জিত শহর দেখে মনে হচ্ছিল আমাদের স্বাগত জানাতে এ আয়োজন। রাতে থাকার ব্যবস্থা হলো পাহাড়ী তুলা গবেষণা কেন্দ্রের অতিথি ভবনে। পরের দিনে ঘুরাঘুরির প্ল্যান ঠিক করে রাতে ঘুমিয়ে পড়ি সবাই। পরেরদিন সকালে তীব্র শীত ও কুয়াশাকে উপেক্ষা করে চারদিক খোলা গাড়িতে (স্থানীয় ভাষায় চান্দের গাড়ি) করে বেরিয়ে পড়ি। উদ্দেশ্য বাংলাদেশের দার্জিলিং হিসেবে পরিচিত চিম্বুক পাহাড়, শৈলকোপা জলপ্রপাত, স্বর্ণমন্দির, নীলগিরি ও নীলাচল। পাহাড়ী আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে কুয়াশা ভেদ করে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের চান্দের গাড়ি। পাহাড় কাটা রাস্তায় চান্দের গাড়ি করে কখনও পাহাড়ে চূড়া আবার কখনও পাদদেশ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। এক পাহাড় ডিঙ্গিয়ে আর এক পাহাড়ের চূড়ায়। এভাবে প্রায় ২ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম মেঘের পাহাড় নীলগিরিতে। নীলগিরিতে প্রকৃতির যেন রূপের অপরূপ এক পসরা সাজিয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২’শ ফুট উচ্চতায় নীলগিরি। যতদূর চোখ যায় পাহাড় আর পাহাড়ী অরণ্যে মেঘেদের ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য। মনে হচ্ছিল আকাশের সংস্পর্শে আছি। আকাশের নীলিমায় উড়ে ভেড়ানো মেঘগুলো আঁছড়ে পড়ছে পায়ের কাছে এক অনন্য মায়া। সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি। আকাশের নীলে মনে মেখে রওনা হলাম নীলাচলের উদ্দেশে। পাহাড়ী রাস্তা ধরে আবারও চলছে চান্দের গাড়ি। পথেই বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া বাংলার দার্জিলিং হিসেবে পরিচিত চিম্বুকের চূড়া। চিম্বুকের চূড়া ওঠে মনে হলো যেন এক দৃষ্টিতে দেখছি পুরু বাংলাদেশ। সেনাবাহিনী পরিচালিত ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার খেয়ে এগুতেই বান্দরবনের অপার সৌন্দর্যের শৈলপ্রপাত, স্বপ্নচূড়া, স্বর্ণমন্দির, মেঘলা রিসোর্টের মনকাড়া রূপ দেখে মনে হচ্ছিলÑ এ যেন অন্য এক বাংলাদেশ। আছরের নামাজের আগেই আবার চলে আসলাম নীলাচল। উদ্দেশ্য নীলাচল থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ফুট উচ্চতায় এই পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান। পাহাড়ের চোখ জুড়ানো মনকাড়া সব প্রাকৃতিক দৃশ্য। এখানে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ বান্দরবান শহরটাকে স্পষ্ট দেখা যায়। সাঙ্গুনদীর তীরে শহরকে পাহাড়ে স্বপ্নপুরীর মতো মনে হয়। এক সময় মনে হতে লাগল এ যেন পাখির চোখে বান্দরবান শহর দেখা। দেখতে দেখতে অন্ধকার নেমে এলো। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজে ছাওয়া পাহাড়ের বুকে লালিমা ছড়িয়ে পাহাড়ের আড়ালে সূর্যের হারিয়ে যাওয়া মনে থাকবে অনেকদিন। চোখের সামনেই অদূরে একে একে জ্বলে উঠল শহরের সবগুলো রঙিন আলো। পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখ মনটা কেমন যেন চঞ্চল হয়ে ওঠে সাগর দর্শনের জন্য। ওই রাত বান্দরবান শহরে অবস্থান করে পরেরদিন খুব ভোরেই রওনা দিলাম পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈতক কক্সবাজারের পথে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সে যেন এক বিস্ময়। দেখে চোখ জুড়িয়ে আসে। ইনানী বীচ, লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা বীচ, হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান। সাগরের প্রমত্তা ঢেউ একে একে আঁছড়ে পড়ছে পায়ের কাছে। কিছু ক্ষণের মধ্যে সাগরের সঙ্গে সবার গড়ে ওঠে গভীর মিতালি। মনে হতে লাগল এ সাগর আমার। কিছুতেই যেন মন ঘরে ফিরতে চায় না। কখনও বিশাল ঢেউয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে হাঁটু অবধি। সাগর জলে গোছল করা দলবেঁধে হইহুল্লোড়, ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়ানো, ঝিনুক কুড়ানো সে এক বিশাল ভাললাগা। আর হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান যেন সাগর আর পাহাড়ে মিতালী। একদিকে দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের হাতছানি আর অন্যদিকে শান্ত নিরিবিলি সবুজের সমারোহ। ছোটবড় বেশকিছু পাহাড়, জলপ্রপাত ও পাহাড়ের গায়ে গায়ে ছড়িয়ে থাকা বনভূমি এখানকার মূল আকর্ষণ। তবে সবচেয়ে ভাল লেগেছে এখানকার পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের নীল জলরাশি দেখা এবং প্রমত্তা সাগরের ঢেউ গুনা। এভাবেই দেখতে দেখতে কিভাবে সাত দিন শেষ হয়ে গেল আমরা কেউ টেরই পেলাম না। ফিরে আসলে মনের ভেতর চির ভাশ্বর হয়ে থাকবে একইসঙ্গে পাহাড়, সাগর আর ঝর্ণা ভ্রমণের সুমধুর স্মৃতি মনের মণিকোঠায়। মোফাজ্জল হোসেন মায়া
×