ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাড়ি-জমি হারিয়ে বাঁধে বসবাস ॥ ক্ষুব্ধ হচ্ছেন মানুষ

পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্র জমি অধিগ্রহণ ॥ টাকা পায়নি ৯০ ভাগ

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬

পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্র জমি অধিগ্রহণ ॥ টাকা পায়নি ৯০ ভাগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৬ জানুয়ারি ॥ মাস্টার আবুল কালাম আযাদ। নিশানবাড়িয়া ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুত প্রকল্পে অধিগ্রহণকৃত মধুপাড়া এলাকায় ১৪ বিঘা জমি নিয়ে বাড়িঘর ছিল। ছিল দুটি পুকুর। পুকুর ছিল মাছে পরিপূর্ণ। বাড়িঘর, পুকুরের মাছ, গাছপালার ক্ষতিপূরণ পেয়ে বাড়িঘর ছেড়ে এখন এ মানুষটি বেড়িবাঁধের সেøাপে অস্থায়ী ঝুপড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু ১৬ বিঘা কৃষিজমির একটি টাকাও এখন পর্যন্ত তুলতে পারেননি। বাড়িঘর, গাছপালার ক্ষতিপূরণের চেক গ্রহণের দিন (১৩ জুন) জেলা প্রশাসক ও পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির আশ্বাসে এ জমিতে চাষাবাদ করেছিলেন। কিন্তু ধানের শীষ বের হওয়ার প্রাক্কালে ওই ধান উপড়ে ফেলেছে ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেড প্রকল্পের বালু ভরাটের কাজে নিয়োজিত এনডিএ প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এ নিয়ে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কাছে শত শত কৃষক ধরনা দিয়েছিলেন। মাত্র একটি মাস সময় দিলে এ বছরের আমন ফলন ঘরে তুলতে পারতেন। এ মানুষটির প্রশ্ন- যদি ধান চাষের অনুমতি না দিত তাহলে তাদের চাষাবাদ বাবদ লাখ লাখ টাকার ক্ষতির কবলে পড়তে হতো না। মাস্টার আবুল কালাম জানান, এক কড়া (তিন শতক) জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ কলাপাড়ার কোথাও, এমনকি বেড়িবাঁধের বাইরের আবাদ অযোগ্য এক কড়া জমি কিনতেও কমপক্ষে দরকার ৫০ হাজার টাকা। এতবড় ক্ষতির পরও এ মানুষটি আজ পর্যন্ত জমির ক্ষতিপূরণের একটি টাকা তুলতে পারেননি। স্থানীয় একটি মধ্যস্বত্বভোগী জমির মালিকানায় জটিলতা সৃষ্টি করায় তারা এ টাকা তুলতে পারছেন না। এসব কৃষকের কাছে সর্বশেষ জরিপের (বিএস) কাগজপত্র রয়েছে। এসব কাগজপত্র ও পর্চাও ভূমি প্রশাসনের লোকজন দিয়েছে। ওই পর্চা অনুসারে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করলে এ পরিবারটি অন্য কোথাও গিয়ে বাড়িঘর কিংবা বসতি করতে পারত। ক্ষতিপূরণের টাকা এতটা অবাস্তবসম্মত নির্ধারণ করা হয়েছে যে, কেউ অন্যত্র গিয়ে পুনর্বাসনের সুযোগ নেই। আবুল কালাম আযাদের দাবি, শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ কৃষিজমির ক্ষতিপূরণের টাকা আজ পর্যন্ত পায়নি। ফলে অধিগ্রহণকৃত এলাকায় বসবাস করা পরিবারগুলো লোন্দা খেয়াঘাটের দক্ষিণ দিকে মাছুয়াখালী থেকে শুরু করে চরনিশানবাড়িয়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কি.মি এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে অস্থায়ী ঝুপড়িঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছে। এক শ’ থেকে দেড় শ’ বছরের পুরনো এ পরিবারগুলোর দাবি, তাদের দাদার বাবা (তালইয়ের) আমল থেকে বসবাস করছেন অথচ এখন জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে ক্ষতিপূরণের টাকা পাচ্ছেন না। মোহাম্মদ ইউসুফ মুন্সী জানালেন, বাবার কবরসহ ছয় বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। একটি টাকাও পায়নি। মোজাম্মেল হোসেন জানান, দুই ভাইয়ের ১৮ কড়া জমির ক্ষতিপূরণের টাকার চিঠি পেয়েছেন বহু আগে। এলএও অফিস পটুয়াখালীতে সকল কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। জমির কাগজপত্র ঠিক করতে ২৬ হাজার টাকা খরচ করেছেন। পটুয়াখালী যাওয়া-আসা বাবদ বহু টকা ব্যয় হয়েছে। তার ভাষায়, ‘এক গোনায় ধানখালীর তহসিলদারকে দশ হাজার টাকা দিয়েছি।’ ইউসুফ জানান, তার দাদা গফুর আলী মৃধা চান্দু মগের (রাখাইন) কাছ থেকে এ জমি কিনে ভোগদখলে ছিলেন। তারপরও তার ওয়ারিশ দাবি করে স্থানীয় একটি চক্র ডিসপুট (আপত্তি) দেয়। তারপরও ১০-১৫ জন মিলে তাদের প্রায় চার লাখ টাকা দিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। আজ এরা সবাই নিঃস্ব। ডেইলি লেবারে পরিণত হয়েছেন। এভাবে অন্তত অর্ধশত পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল কেউ টাকা পায়নি। এ বিষয়ে একাধিকবার উপজেলা-জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলা হয়েছে। তারা সুষ্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি।
×