ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হবে

রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ বাণিজ্য কমিশন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬

রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ বাণিজ্য কমিশন হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ বাংলাদেশ-রাশিয়ার মধ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে যৌথ বাণিজ্য কমিশন গঠন করা হতে পারে। কমিশন গঠন করা গেলে রাশিয়াসহ কমনওয়েলথভুক্ত স্বাধীন ১২ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির নতুন সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বিদ্যুত খাতসহ দেশের মেগা প্রকল্পগুলোতে রাশিয়ার বিনিয়োগ বাড়বে বলেও মনে করা হচ্ছে। আর এ কারণেই দু’দেশের মধ্যে যৌথ বাণিজ্য কমিশন গঠনের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। কমিশন গঠনের পক্ষে অনুরোধ জানিয়ে কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (সিআইএস-বিসিসিআই) সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে। ইতোপূর্বে রাশিয়ার পক্ষ থেকেও এ ধরনের একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, গত ২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সজান্ডার এ নিকোলায়েভ এ ধরনের একটি যৌথ বাণিজ্য কমিশন ও অর্থনৈতিক চুক্তির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ইতোমধ্যে দুই দেশের মধ্যকার বিনিয়োগ সুরক্ষার জন্য রাশিয়ান-বাংলাদেশী এগ্রিমেন্ট অন ইনকারেজমেন্ট এ্যান্ড মিউচুয়াল প্রটেকশন অব ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্টস নামে আরেকটি চুক্তির প্রস্তাব ২০১৪ সালের মার্চে জমা দিয়েছে রাশিয়া। বরাবরই বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি করতে আগ্রহী রাশিয়া। ইতোমধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ আরও কয়েকটি বড় প্রকল্পে রাশিয়া বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জানা গেছে, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য আছে এ রকম ২০ দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কমিশন গঠন করেছে রাশিয়া। দেশগুলো হলোÑ ভারত, চীন, ইতালি, বুলগেরিয়া, ফ্রান্স, স্পেন, উজবেকিস্তান, কিরঘিজস্তান, কাজাকিস্তান, কিউবা, অস্ট্রিয়া, ইরান, লিথুয়ানিয়া, সুইজারল্যান্ড, সাইপ্রাস, লুক্সেমবার্গ, চেক প্রজাতন্ত্র, সেøাভাকিয়া, এঙ্গোলা ও ইকুয়েডর। গত ২০১৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে লেখা এক চিঠিতে নিকোলায়েভ জানিয়েছিলেন, ওই বছরের মধ্যেই চুক্তি দুটি স্বাক্ষরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী, চুক্তির মাধ্যমে গঠিত কমিশন প্রতিবছর একবার করে বৈঠক করবে। সেখানে পারস্পরিক ব্যবসা-বিনিয়োগ, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে। চুক্তি দুটি স্বাক্ষরের ওপর জোর দিয়ে রাশিয়া বলেছে, এই ধরনের যৌথ বাণিজ্য কমিশন ও অর্থনৈতিক চুক্তি করা গেলে উভয় দেশই লাভবান হবে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে দুই দেশের সমপর্যায়ের কর্মকর্তারা ঢাকা ও মস্কোতে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে ভবিষ্যত অগ্রগতির পথ রচনা করতে পারবেন। সিআইএস-বিসিসিআই সভাপতি এইচকে কবীর যৌথ বাণিজ্য কমিশন গঠনের জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ ও রাশিয়া তথা সিআইএস ভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ বাণিজ্য কমিশন গঠন করা অপরিহার্য হয়ে পড়ছে। রাশিয়া বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতামূলক যৌথ কমিশন গঠনের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপাক্ষিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এরই আলোকে রুশ সরকারের উল্লিখিত সম্পর্ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের উদ্দেশে এক যৌথ কমিশন গঠনের প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকারের বরাবর বিগত কয়েক বছর পূর্বে প্রেরণ করা হয়েছে। যৌথ কমিশন গঠনের প্রস্তাবটি এখন পর্যন্ত সরকারের কাছে পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে। চিঠিতে তিনি আরও বলেন, অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে প্রস্তাবিত যৌথ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। জানা গেছে, রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য তেমন বড় নয়। দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারেরও কম। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি ব্যবসায়িক সম্পর্কও জোরদার হচ্ছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী দেশ হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ কারণেই গত ২০১২ সালে বাংলাদেশের ১০ গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খননের দায়িত্ব পেয়েছে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম। ইতোপূর্বে ২০১৩ সালে প্রথম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মস্কো সফর করেন। ওই সময় ১০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি রূপপুর পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তিও করা হয়। পোশাকের বড় বাজার হতে পারে রাশিয়া ॥ তৈরি পোশাকের বড় বাজার হতে পারে রাশিয়া। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। আর অর্থবছর শেষে প্রকৃত রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। এই রফতানি আয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প। তৈরি পোশাক খাত থেকে আয় হয় প্রায় ৮৪ শতাংশ। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইউরোপ। তবে দেশের তৈরি পোশাকের সম্ভাবনাময় একটি বিশাল বাজার হতে পারে রাশিয়া। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পোশাক আমদানিকারক দেশ রাশিয়া। এখানকার পোশাক বাজারের বর্তমানে একটা বিরাট অংশ দখল করে আছে চীন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে তুরস্ক। হাঙ্গেরিভিত্তিক ওয়াই কনসালটিং এ্যানালিস্ট নামের প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়, রাশিয়ায় পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম যৌথভাবে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। গত অর্থবছরে রাশিয়ায় ২৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমমূল্যের তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশে। যার মধ্যে ১৩০ মিলিয়ন নিট পোশাক, ওভেন পোশাক ৮৫ মিলিয়ন ও ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ছিল হোম টেক্সটাইল।
×