ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান ও সন্ত্রাসবাদ

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬

পাকিস্তান ও সন্ত্রাসবাদ

বিগত কয়েক দশকের বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, পাকিস্তান ও সন্ত্রাসবাদ ক্রমান্বয়ে সমার্থক হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বিগত কয়েক বছর ধরে বর্বর দেশটির জঙ্গীবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনার পরিধি বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার বার বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। ভারতও অনেক দিন ধরেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করে আসছে। সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তার বিদায় ভাষণে অত্যন্ত স্পষ্ট করেই বলেছেনÑ পাকিস্তানই সন্ত্রাসবাদের স্বর্গ। ওবামার ভাষণে আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের দাবিকে ছাপিয়ে উঠে আসে সন্ত্রাসবাদের কথা। তিনি মনে করেন, আগামী এক দশকে আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এই অস্থিরতা চলবে। সন্ত্রাসবাদীদের নতুন স্বর্গ হয়ে উঠবে পাকিস্তান। আল কায়েদা এবং আইএস যে সরাসরি আমেরিকার বিপদের কারণ হতে পারে, সেই শঙ্কাও প্রকাশ করলেন তিনি। বললেন, আল কায়েদা এবং এখন আইএসআইএল সরাসরি আমাদের ওপর আঘাত হানতে পারে। সস্ত্রাসবাদীরা সংখ্যায় অল্প হলেও, যেহেতু ওদের কাছে মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই, প্রভূত ক্ষতি করতে পারে। এটা সত্য যে, পাকিস্তানের অধিকাংশ সন্ত্রাসী হামলা ও উপদলীয় খুন ধর্মীয় মতাদর্শ উদ্বুদ্ধ। তালেবান ও অন্য জঙ্গীগোষ্ঠীগুলো ‘শরিয়া এবং ইসলামের’ নামে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম জায়েজ করে। এর উল্লেখযোগ্য নজির হচ্ছে, তেহরিক-ই-তালেবানের পাকিস্তানী মুখপাত্রের পেশোয়ার হামলার দায়দায়িত্ব স্বীকার করে নেয়া। তালেবানরা সোয়াতে ‘ইসলামী শরিয়ার’ নামে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছে। তা সে শিয়াদের ওপর হামলা হোক বা মসজিদ, মাজার ও গির্জার ওপর হোক, সবই করা হয়েছে ধর্মের নামে। ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে, তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তারা মসজিদ ব্যবহার করে ধর্মবেত্তারা উপদলীয় ঘৃণা ছড়াচ্ছেন সহিংসতা উসকে দিচ্ছেন। সন্ত্রাসবাদ পাকিস্তানের মাদ্রাসা ও মসজিদে তার ছায়া বিস্তার করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের বর্বরতা ও নৃশংসতার তুলনা বিশ্বে বিরল। বরাবরই দেশটি আমাদের দেশে জঙ্গীবাদ উস্কে দেয়ার কাজ করে আসছে। জঙ্গীবাদী সংশ্লিষ্টতার কারণে পাকিস্তানের একাধিক কূটনীতিককে বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে বাধ্য করা হয়েছে। তারপরও পাকিস্তানের ধৃষ্টতা ও ঔদ্ধত্য প্রকাশের অবসান হয়নি। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের শাস্তি কার্যকরের পর বার বার দেশটি সীমা লঙ্ঘন করে ধৃষ্টতার নতুন নজির স্থাপন করেছে। অতিসম্প্রতি পাকিস্তান ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করছে। ইসলামাবাদ ও করাচীর মিশনে গোয়েন্দাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। কোনভাবেই যেন বাংলাদেশের কূটনীতিকদের হয়রানি না করা হয়, সে বিষয়ে অবশ্য পাকিস্তানকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। মনে রাখতে হবে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের দেনা-পাওনা শেষ হয়ে যায়নি। এখন কড়ায় গণ্ডায় সে হিসাব মেটানোর জোরালো দাবি তুলতে হবে। দীর্ঘ সাড়ে চার দশক ধরে বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানীদের মানবিক কারণে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে এসেছে। আর কতকাল এভাবে চলবে? এখন তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। বর্বর জঙ্গী রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রবল বিশ্বচাপ বজায় রাখার বিকল্প নেই। দেশে দেশে যাতে তারা জঙ্গীবাদের ছায়াবিস্তার করতে না পারে সেজন্য সজাগ সতর্ক থাকতে হবে।
×