ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিপিডির অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান

পদ্মা সেতু নির্মাণে হাসিনা অনেক সাহসের পরিচয় দিয়েছেন

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬

পদ্মা সেতু নির্মাণে হাসিনা অনেক সাহসের পরিচয় দিয়েছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ১৮৫টি দেশ তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এর কতটুকু বাস্তবায়ন হবে, তা নির্ভর করবে রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। এ জন্য দেশগুলোতে সঠিক নেতৃত্ব, সঠিক নীতি প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়ন দরকার। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে জলবায়ু সামঞ্জস্যপূর্ণ বিকল্প সমাধান সূত্র বের করতে হবে। শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বার্ষিক (২০১৫ সালের) একক বক্তৃতায় উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ সাইমন ম্যাক্সওয়েল এ কথা বলেন। গত বছর থেকে সিপিডি বিশেষ ইস্যুতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞের বার্ষিক একক বক্তৃতার আয়োজন করছে। শনিবার এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। আর গোটা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এবারের বক্তা সাইমন ম্যাক্সওয়েল যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্লাইমেট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নলেজ নেটওয়ার্কের (সিডিকেএন) নির্বাহী প্রধান। ‘জলবায়ু সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন : সঠিক পথ বা অবাস্তব ধারণা’ শীর্ষক বক্তব্যে ম্যাক্সওয়েল জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাকে ‘দুষ্টু সমস্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, পরিসংখ্যান দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যত বহুমাত্রিক ঝুঁকির ভয়াবহতা বোঝা যাবে না। এ জন্য বিদ্যমান ঝুঁকি ও এর ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের সত্যিকার গল্প তুলে ধরতে হবে। বিকল্প জ্বালানির প্রবর্তন ও উন্নয়নের জন্য বিকল্প ধারণার প্রসারে এগিয়ে আসতে হবে গবেষকদের। দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ঝুঁকি মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট দেশের নিজস্ব সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন হবে সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের। বক্তৃতায় গত চার দশকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়নকে তিনি অভূতপূর্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তবে জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নত বিশ্বের দায়, ঝুঁকি মোকাবেলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ, দারিদ্র্য দূরীকরণের পাশাপাশি জলবায়ু সহনশীল উন্নয়নের জন্য তহবিলের সংস্থানের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। বক্তৃতা অনুষ্ঠানের সভাপতি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় উন্নত বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে একযোগে কাজ করা জরুরী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত জলবায়ু সংবেদনশীল নয়। এটি হতাশার বিষয়। বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় তিনটি বিষয়কে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এই অর্থনীতিবিদ। এগুলো হচ্ছেÑ হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানো, বুড়িগঙ্গা নদীকে দূষণমুক্ত করা ও ঢাকা শহরের জলাশয়, খাল, দখল করে গড়ে ওঠা আবাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। রেহমান সোবহান বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে সরে এলেও শেখ হাসিনা দেশের নিজস্ব বাজেট থেকে টাকা বরাদ্দ দিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিনি সামর্থ্যরে পরিচয় দিয়েছেন। তবে জলবায়ু পরিবর্তন আরও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলোগুলো জলবায়ু তহবিলে অর্থ না দিলে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে কি না, তা ভাবতে হবে। এ জন্য তিনি প্রতিবছর নিজস্ব বাজেট রিভিউ করার তাগিদ দেন। রেহমান সোবহান আরও বলেন, আমরা গত ৩০ বছর ধরে বুড়িগঙ্গা নদীকে দূষণমুক্ত করার কথা বলছি, কিন্তু দূষণ বন্ধ হয়নি। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানো নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। কিন্তু ট্যানারি আজও সরেনি। ঢাকা শহরের জলাশয়, খাল, দখল করে আবাসন হচ্ছে। পরিবেশের জন্য এই তিনটি বিষয় বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এ ব্যাপারে আমরা তেমন কিছু করতে পারছি না। সাইমন বিশ্বের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এ তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। বক্তৃতা পর্বের শেষে দেশের জলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, কূটনৈতিক, পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।
×