ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই অর্থমন্ত্রী বিদেশে, যাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রীও

শিক্ষক আন্দোলনে অচল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজটের শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬

শিক্ষক আন্দোলনে অচল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজটের শঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টানা ছয় দিন ধরে শিক্ষক আন্দোলনে পুরোপুরি অচল হয়ে আছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সঙ্কট নিরসনে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে সেশনজটের আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে অর্থমন্ত্রী আগেই গেছেন দেশের বাইরে। এখন শিক্ষামন্ত্রীও সম্মেলনে যোগ দিতে দেশের বাইরে যাওয়ায় আগামী অন্তত তিন দিন এ বিষয়ে বড় কোন অগ্রগতির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলেও শীঘ্রই সমাধানের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয় ও আন্দোলনরত শিক্ষকদের কথায়। দুই পক্ষই আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান দেখছেন। শিক্ষকরা বলছেন, মর্যাদা অক্ষুণœ রাখতে বিকল্প খুঁজছেন তারা। জানা গেছে, সিলেকশন গ্রেড বাতিল হওয়ায় শিক্ষকদের মর্যাদার অবনমনের পর মর্যাদা অক্ষুণœ রাখতে বিকল্প খুঁজছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককরা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল শনিবার বলেছেন, এখনও তাদের দাবির বিষয়ে অগ্রগতি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। আন্দোলন চলছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলবে। গত ১২ জানুয়ারি ফেডারেশনের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব মাকসুদ কামাল সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে ওই দিন প্রস্তাব চাওয়া হয় জানিয়ে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষামন্ত্রী লিখিত প্রস্তাব চেয়েছেন, আমরা এ নিয়ে কাজ করব। সরকার সিলেকশন গ্রেড বহাল না করলে মর্যাদা কিভাবে ঠিক রাখা যায় তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা ও ওয়ার্ক আউট করে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানানো হবে বলে জানান অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন। এদিকে সিংগাপুরে মেডিক্যাল চেকআপ ও চীনের রাজধানী বেজিংয়ে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশের বাইরে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরপর লন্ডনে ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজিত ওয়ার্ল্ড এডুকেশন ফোরামের একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে শুক্রবার দেশ ছাড়েন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আগামী মঙ্গলবার তার দেশে ফেরার কথা। বেতন বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী এবং কমিটির অন্যতম সদস্য শিক্ষামন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় শিক্ষকদের দাবির বিষয়টি দ্রুত সমাধান হচ্ছে না বলে মনে করেন শিক্ষক ফেডারেশনের নেতারা। তবে শিক্ষক নেতারা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রীর অবর্তমানে যোগাযোগ রক্ষা করবেন শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসেন। তাছাড়া এখন সমস্যা সমাধান অর্থ মন্ত্রণালয়ের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে। তবে দুই মন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় অন্তত দু’তিন দিন এ বিষয়ে বড় কোন অগ্রগতির সম্ভাবনা নেই বলে বলছেন শিক্ষকরা। তারা দেশে আসলেই দ্রুতই শিক্ষকরা প্রস্তাব তুলে ধরবেন। প্রস্তাব জমা দিলেই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন শিক্ষকরা। আগামী সপ্তাহের শুরুতেই এ সঙ্কটের সমাধান আশা করছেন তারা। বিদেশ যাত্রার আগে শিক্ষামন্ত্রীও বলেছেন, শীঘ্রই সমাধান হবে। সমাধানের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি আমরা। শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি, কথা বলেছি, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নানামুখী তৎপরতা আছে। এখনও আমরা ফরমাল মিটিংয়ে বসিনি। রবিবার বসতে পারব। সভাপতি বলেন, আপনারা আমাদের সফট টোন দেখছেন, আশা করি সমাধান হবে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হোক তাই চাই না। আমরা দ্রুত সমাধান চাই। এদিকে কীভাবে শিক্ষকদের সমস্যার সমাধান করা হবে সে বিষয়ে মুখ না খুললেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়টি তুলে ধরে অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, শিক্ষকদের সমস্যা মিটিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আদেশ জারি করবে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোন সম্মতি প্রয়োজন হলে তা দেয়া হবে। খুব বেশি সমস্যা দেখছি না, নিরসন হবে। অবশ্য বেতন কাঠামোর সমাধান শিক্ষা মন্ত্রণালয় কীভাবে করবে- সে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনও। সভাপতি বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কীভাবে আদেশ জারি করবে? আদেশ তো অর্থ মন্ত্রণালয়কে জারি করতে হবে। এর সঙ্গে আর্থিক সংশ্লেষ আছে। শুরু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নয়, নতুন বেতন কাঠামোর ‘বৈষম্য’ নিরসনে আন্দোলনে রয়েছেন ২৬টি ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং ‘নন-গেজেটেড’ কর্মকর্তারা। প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে জানিয়ে অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে কাজ চলছে, শীঘ্রই সমস্যার নিরসন হবে। অষ্টম বেতন কাঠামোয় টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালসহ বিভিন্ন ‘বৈষম্য’ নিরসনে এর আগে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছেন প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসক, ২৬টি ক্যাডার ও বিভিন্ন ফাংশনাল সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সংগঠন প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি। এসব দাবি আদায়ে গত ১১ জানুয়ারি থেকে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। এই কর্মসূচী আজও চলবে। এছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর নন-ক্যাডার কর্মকর্তারাও পাঁচ দফা দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত সরকারী কর্মকর্তা পরিষদের ব্যানারে ১১ থেকে দিনে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে আসছেন।
×