ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গার্মেন্টস এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা

টিআইবির রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান বিকেএমইএ ও বিজিএমইএর

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬

টিআইবির রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান বিকেএমইএ ও বিজিএমইএর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাত নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে এটিকে অগ্রহণযোগ্য ও হাস্যকর বলছে নিট পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ। একই সঙ্গে পোশাক খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম সম্পর্কে টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদনটি দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখছে সংগঠনটি। টিআইবি’র প্রতিবেদন প্রকাশের দু’দিন পর শনিবার বিকেএমইএ’র সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এর আগে শুক্রবার এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র ওই প্রতিবেদনকে দুরভিসন্ধিমূলক আখ্যা দিয়ে এটি প্রত্যাখ্যান করেছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গত বৃহস্পতিবার গার্মেন্টস খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে টিআইবি। প্রতিবেদনে তৈরি পোশাক পণ্যের অর্ডার পাওয়া থেকে শুরু করে পুরো সাপ্লাই চেনে ১৬ ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসে। এতে গার্মেন্টস মালিক, মার্চেন্ডাইজার, নিরীক্ষক ও বিদেশী ক্রেতা বা বায়ারের বিভিন্ন অনিয়মের কথা বলা হয়। প্রতিবেদন তৈরিতে সংশ্লিষ্ট ৭৪ জনের সঙ্গে কথা বলা হয়। এসব সমস্যা সমাধানে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়। টিআইবি’র সঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জার্মানি যৌথভাবে এ এ গবেষণাকর্মটি চালায়। তবে বিকেএমইএ’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৭০ অংশীজন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাক্ষাতকার নিয়ে লাখ লাখ শ্রমিক উদ্যোক্তা ও ক্রেতার এ শিল্পকে নিয়ে ঢালাওভাবে মন্তব্য করা শিল্পের জন্য সহায়ক নয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক খাত, সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক মানের থার্ড পার্টি অডিটরসহ স্টেকহোল্ডারদের সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের (নীট ও ওভেন) সংগঠন বিকেএমইএ ও বিজিএমইএ’র সঙ্গে গবেষণা নিয়ে কোন আলোনা হয়নি। ফলে এটি টিআইবি’র কোন ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রমের অংশ কি-না তা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিয়েছে বিকেএমইএ। তৈরি পোশাক শিল্পের ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে এ ধরনের গবেষণা প্রতিবেদন তুলে দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্ষতি করার এবং পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং ইমেজ’কে ধ্বংস করার টিআইবি’র এই সহায়তামূলক প্রক্রিয়া (ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়) বিকেএমইএ কোনভাবেই সমর্থন করতে পারে না। টিআইবি’র এই দুর্নীতি ও অনিয়ম বিষয়ক প্রতিবেদন খুবই অগ্রহণযোগ্য ও হাস্যকর মনে হয়। এর আগে শুক্রবার রাজধানীর বিজিএমইএ কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমই’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গবেষণা প্রতিবেদনটি একেবারেই ভিত্তিহীন। এটি গার্মেন্টস শিল্পের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। টিআইবি’র প্রাপ্ত অর্থ এ শিল্পকে অশান্ত করা কিংবা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কাজে ব্যয় করা হচ্ছে কি না সে প্রশ্নও তুলেছেন। সেই সঙ্গে টিআইবি এ ঔদ্ধত্যপূর্ণ সাহস কোথায় পেল তা ও খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান তিনি। বিজিএমইএ সভাপতি টিআইবি’র গবেষণার মেথডলজি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ৭৪ জনের স্বাক্ষাতকার নিয়ে লাখ লাখ শ্রমিক উদ্যোক্তা ও ক্রেতার এ শিল্পকে নিয়ে ঢালাওভাবে মন্তব্য করা শিল্পের জন্য সহায়ক নয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক খাত, সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক মানের থার্ড পার্টি অডিটরসহ স্টেকহোল্ডারদের সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। ঘুষ দিয়ে নিম্নমানের পণ্য কেনা, অনুমোদনবিহীন নিম্নমানের কারখানা সাবকণ্ট্রাক্ট অর্ডার দেয়া, খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির অভিযোগেরও জবাব দেয়া হয়। খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, আমাদের দেশেই স্বল্প মূল্যে গার্মেন্টসের কাপড় ও এক্সেসরিজ (উপকরণ) পাওয়া যাচ্ছে। সুস্থ মস্তিষ্কের এমন কোন ব্যক্তি আছেন, যিনি বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করবেন? বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, তাজরীন ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সৃষ্ট ভাবমূর্তি সঙ্কট কাটিয়ে গার্মেন্টস খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি রফতানি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এ ধরনের রিপোর্ট শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তবে বিচ্ছিন্ন কিছু অনিয়ম থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে খারাপ বায়ার থাকতে পারে। আমাদের মধ্যেও কারে কারও ছোটখাটো কিছু অসঙ্গতি থাকতে পারে। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু ঢালাওভাবে এভাবে মন্তব্য করা ঠিক না। বিদেশে রফতানিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর নেতিবাচক বার্তা বিদেশে যাবে। ফলে এটাতো ভাল হবে না।
×