ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিবিসি নিউজ সার্ভিস

ফোনের কল বিভ্রমের সম্মুখীন কেন হই

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

ফোনের কল বিভ্রমের সম্মুখীন কেন হই

আপনার কি কখনও এ রকম হয়েছে যে, আপনি আপনার মোবাইল ফোনের রিং বাজতে শুনেছেন, যদিও আসলে আপনার কাছে কোন কলই আসেনি? শুনেছেন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আপনি একা নন- আপনার মতো আরো অনেকেই এই অভিযোগ করেন। শুধু তাই নয়, আপনার এমনও মনে হয়ে থাকতে পারে যে ভাইব্রেশন অপশনে থাকা আপনার ফোনটি কল না আসা সত্ত্বেও প্যান্টের পকেটে কেঁপে উঠেছিল। আমেরিকায় জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক এবং দার্শনিক ড. রবার্ট রোজেনবার্গার বলছেন, হ্যালুসিনেশন বা বিভ্রমের কারণে এরকমটা হয়ে থাকে। আর উদ্বেগ উৎকণ্ঠা থেকেই এরকমটা হয় যা খুব স্বাভাবিক একটি ঘটনা। তিনি বলেন, প্রযুক্তি যেমন এই বিশ্বকে বদলে দিচ্ছে, তেমনি পরিবর্তন ঘটাচ্ছে মানুষের মস্তিষ্কে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের ওপর প্রযুক্তির কি ধরনের প্রভাব পড়ছে তার ওপর একটি গবেষণা করেছেন রবার্ট রোজেনবার্গার। তিনি বলছেন, মানুষের মধ্যে এমন একটা মনোভাবের তৈরি হয়েছে যে এখনই ইমেইল কিংবা এসএমএসের জবাব দিতে মরিয়া হয়ে থাকে আর সে কারণেই মনে হয় যে, ফোনটা বেজে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘এটাকে বলা হয় ফ্যান্টম ভাইব্রেশন। আপনার হয়ত মনে হলো যে প্যান্টের পকেটে ফোনটা কেঁপে উঠেছে। তখন আপনি পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখলেন যে আপনাকে আসলেই কেউ কল করেছে কিনা বা এসএমএস পাঠিয়েছে কিনা। দেখলেন যে না কেউ ফোন করেনি। কোন এসএমএসও আসেনি। আর কিছুই না, এটা হচ্ছে হ্যালুসিনেশন বা বিভ্রম।’ সবারই কি এরকম হয়ে থাকে? কত মানুষের বেলায় এই ধরনের হ্যালুসিনেশনের ঘটনা ঘটে? ‘আমরা গবেষণা করে দেখেছি প্রচুর মানুষ বলছে যে তাদের এ রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো এরকম সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, তাদের প্রায় ৯০ শতাংশই বলছেন, ফোন আসেনি কিন্তু তাদের মনে হয়েছে যে ফোনটা কেঁপে উঠেছে।’ কি কারণে এরকমটা হচ্ছে এই প্রশ্নের জবাবে দার্শনিক রবার্ট রোজেনবার্গার বলেছেন, এই কারণগুলোকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। কেউ কেউ বলছেন, প্রযুক্তি বিশেষ করে টেলিফোনের মতো প্রযুক্তি আমাদের মস্তিষ্ককেই বদলে দিচ্ছে। সেখানে এমন একটা বিক্রিয়া হচ্ছে যে ফোন না আসলেও তারা মনে করে যে হয়ত ফোন এসেছিল। আরেকটা থিউরি হচ্ছেÑ আধুনিককালে আমরা এত বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি যে আমাদের এ রকম মনে হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে টেলিফোন, ইমেইল, টেক্সট মেসেজÑ এ ধরনের প্রযুক্তি কারণে। মানুষের ধারণা সেখানে সবসময়ই কিছু না কিছু ঘটছে। সেই ধারণা থেকে আমরা মুখিয়ে থাকি যে কখন সে সবের উত্তর দেব। সেই মন-মানসিকতার প্রভাব পড়ছে আমাদের শরীরেও। সে কারণে নিজেদের শরীরেও আমরা এই কম্পন অনুভব করছি।
×