ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিবন্ধন, চিকিৎসক, নার্স ও প্রযুক্তিবিদ ছাড়াই গড়ে ওঠা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতারণা

গ্রামেও অবৈধ ক্লিনিক

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

গ্রামেও অবৈধ ক্লিনিক

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ শহরের গ-ি ছাড়িয়ে জেলার গ্রামাঞ্চলেও এখন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। রেজিস্টেশন, চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্ট ছাড়াই অলিগলিতে গড়ে ওঠা এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার নাম চলছে প্রতারণা। যেখানে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। অপচিকিৎসায় মারা যাচ্ছে রোগী। অথচ প্রশাসনের কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই। তবে রাজশাহী জেলায় ১২৮টি রেজিস্ট্রেশন করা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছেÑ যেগুলো বৈধ বলে দাবি করেছেন রাজশাহীর সিভিল সার্জন ফারহানা হক। এর বাইরে কোন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার মোহনপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনেই গড়ে উঠেছে মা ও লাকী নামের দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই টিনসেডের ঘরে এ দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাকের ডগায় গড়ে তোলা এ দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত রোগীরা প্রতারণার শিকার হলেও তা দেখার কেউ নেই। এইএসসি পাস তিন যুবক গড়ে তুলেছেন এ দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, যাদের একজন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পিয়ন পদে চাকরি করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, মিলান, আলমগীর ও ডলার নামের তিন যুবক এ দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তুলেছে। যাদের মধ্যে ডলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পিয়ন। তারা তিন জনই সব সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই থাকেন। সেখান থেকে কৌশলে রোগী ভাগিয়ে এনে বিভিন্ন পরীক্ষার নামে হাতিয়ে নেন হাজার হাজার টাকা। এছাড়াও নিজেরাই এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট তৈরি করে রোগীতের হাতে ধরিয়ে দেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছরের ব্যবধানে মোহনপুর উপজেলায় ১১টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। মোহনপুর সদর ও কেশরহাটে গড়ে উঠা এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন রয়েছে মাত্র তিনটির। এগুলো হলো, কেশরহাট ইসলামি জেনারেল হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নাহার নার্সিং হোম এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রাহিক মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার। তবে ইসলামি জেনারেল হাসপাতাল এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার রেজিস্ট্রেশনের শর্ত মানলেও অন্য দুটিতে নেয় চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারী। রেজিস্ট্রেশন থাকলেও একজন নার্স দিয়ে চলছে নাহার নার্সিং হোম এ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যিনি নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে রোগীদের চিকিৎসাও দিয়ে থাকে। এছাড়াও পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে চলছে কেশরহাট জননী হাসপাতাল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিজেই রোগীদের চিকিৎসা ও আলট্রাসনোগ্রাফী করে থাকেন এ হাসপাতালের অষ্টম শ্রেণী পাস ম্যানেজার। গ্রামের লোকজন না বুঝেই এসব অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। লাকী ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক আলমগির বলেন, তার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শুধু এক্স-রে করা হয়। রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আর কেশরহাট জননী হাসপাতালের ম্যানেজার গোলাম মুর্তজা বলেন, তার ট্রেড লাইন্সেস রয়েছে। রোগীরা আসলে চিকিৎসক ডেকে নিয়ে আসা হয়। একই কথা বলে নিজের নাম বলতে চাননি নাহার নার্সিং হোমের মালিকের মেয়ে। তিনি নিজেকে নার্স পরিচয় দিয়েছেন। শুধু মোহনপুর নয় জেলার গোদাগাড়ী, তানোর, বাগমারা, দুর্গাপুর, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলা সদর ও গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অবৈধ ক্লিনিকের বিস্তার। রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডাঃ ফারহানা হক বলেন, অভিযোগ পেলে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশনের শর্ত অনুযায়ী ১০ শয্যার ক্লিনিকের জন্য একজন চিকিৎসক, তিন জন নার্স ও তিন জন সুইপার থাকতে হবে। এছাড়াও প্রতিবছর নবায়ন করতে হবে রেজিস্ট্রেশন। শর্ত পূরণ ও নবায়ন না থাকলে অভিযোগ পেলে রেজিস্ট্রেশন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য তাদের মনিটরিং কমিটিও রয়েছে বলে জানান তিনি।
×