ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ধ্যারানীর হাতের ছোঁয়ায় সংসার সচল

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

সন্ধ্যারানীর হাতের ছোঁয়ায় সংসার সচল

প্রাকৃতিক কারণেই আবহমানকাল থেকে সাগর উপকূলের নারীরা পরিশ্রমী। নিজের-পরিবারের প্রয়োজন মেটানো ছাড়াও আয় উপার্জনে উপকূলের মেয়েরা নানা শ্রমে জড়িয়ে আছে। তারা মাঠে-ঘাটে গোবর কুড়ানো থেকে শুরু করে ধান সিদ্ধ শুকানো সবকিছুতে পুরুষের পাশে থেকে সমান ভূমিকা পালন করছে। এর মধ্যে কুটির শিল্প জাত পণ্য উৎপাদনে তাদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি। কুটির শিল্পের অন্যতম হচ্ছে বাঁশজাত পণ্য। একটা সময়ে উপকূলের গ্রামীণ জনপদের অধিকাংশ বাড়িতে বাঁশের ঝাড় ছিল। সে সব ঝাড়ের সস্তা বাঁশ ডালা, ঝুড়ি, কুলা, চালুনি থেকে শুরু করে নানা দ্রব্য তৈরিতে ভাবনা করতে হয়নি। এসব পণ্য যেমন পরিবারের চাহিদা মেটাতো, তেমনি বাড়তি আয়-উপার্জনে সহায়ক হতো। বাঁশের পণ্য তৈরির এ কাজ শত বছরের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আজও উপকূলের গ্রামীণ মেয়েরা বজায় রেখেছে। ঘর সংসারের অন্যান্য কাজের ফাঁকে যেমন তারা এ কাজ করে, তেমনি অসংখ্য নারী পেশাগতভাবে এ কাজে জড়িয়ে আছে। এমনই এক গৃহবধূ পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কলাগাছিয়া আদর্শ গ্রামের সন্ধ্যারানী হাওলাদার। বয়স তার আনুমানিক ২২/২৩ বছর। সন্ধ্যারানী জানান, ছোট বেলা থেকেই তিনি এ কাজ করছেন। বাবার বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার ভুড়িয়া গ্রামে। দারিদ্রের কারণে বাবার সংসারে থাকার সময়ে এ কাজে হাতেখড়ি হয়। বিয়ের পরে স্বামীর সংসারে এসেও পড়েন দারিদ্র্যের কবলে। সংসারে বাড়তি আয় আনতে স্বামীর পাশাপাশি তিনিও নেমে পড়েন এ কাজে। এক সন্তানের মা সন্ধ্যারানী জানান, তার স্বামী পেশায় দিনমজুর। যা আয় করেন, তাতে কোনমতে টেনেটুনে সংসার চলে। হাতে কিছুই থাকে না। যাতে কিছুটা আয় বাড়ে, এজন্য তিনি বাবার বাড়িতে শেখা কাজ করছেন। সন্ধ্যারানী জানান, আড়াই শ’ টাকা দিয়ে কেনা এক বাঁশে কম করে হলেও দশটি ঝুড়ি বা ডালা তৈরি করা সম্ভব। প্রতিটি ঝুড়ি ৫০ টাকায় বিক্রি হলে ১০ ঝুড়িতে অন্তত আড়াই শ’ টাকা মুনাফা থাকে। যদিও একদিনে চার-পাঁচটির বেশি ঝুড়ি তৈরি করা সম্ভব হয় না। সন্ধ্যারানী কেবলমাত্র সংসারের অন্যান্য কাজের ফাঁকে এটি করে থাকেন। স্বামীও এ কাজে সহায়তা করেন। যেমন বাজার থেকে বাঁশ কেনা। তা চেরাই করে দেয়া আবার বাজারে ঝুড়ি বিক্রি। সন্ধ্যারানী জানান, বাঁশের ঝুড়ি তৈরির কাজ জানা আছে বলে এটি তাদের বিপদ-আপদেও সহায়ক হয়। যেমন ঘূর্ণিঝড় সিডরে তাদের সবকিছু ভেসে গিয়েছিল। তখন ঝুড়ি তৈরি করেই সংসার সামলেছেন। দেনাও শোধ করেছেন। Ñশংকর লাল দাশ গলাচিপা থেকে
×