ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়তি আয়ের যোগান দেয় একতারা পরিবার

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

বাড়তি আয়ের যোগান দেয় একতারা পরিবার

হাবিবা খাতুন, আনিকা, তিষা, রুকতি, মিতু, মিম, সোহাগ ও সাঈদ, এরা ‘একতারা পরিবার’ ক্ষুদে শিল্পী। স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি ‘একতারা’ তৈরির কাজ করে তারা সংসারে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের চারণভূমি কুষ্টিয়া। এ জেলার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় রয়েছে লালনের আখড়াবাড়ি। প্রতিদিন লালনের টানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে ছুটে আসে নারী-পুরুষ সমন্বয়ে অসংখ্য পর্যটক। লালনের স্মৃতিমাখা আখড়াবাড়ি ঘুরে দেখা ছাড়াও এসব পর্যটকের অন্যতম আকর্ষণ লালনের ‘একতারা’ ‘ডুগডুগি’ ও ‘প্রতিকৃতিসহ নানা ধরনের কুটির শিল্প সামগ্রী। আর পর্যটকদের এই চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখেই ছেঁউড়িয়া ও আশপাশে গড়ে উঠেছে একতারা পরিবার ও ‘একতারা বাড়ি’সহ কয়েকটি পরিবারভিত্তিক ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কারখানা। এখানে তৈরি হচ্ছে লালনের একতারা, ডুগডুগি, ঢোল, তবলা ছাড়াও কলমদানি, পাউডার কেস ও প্রেমজুরিসহ ১৫/২০ রকম সামগ্রী। নারী ও পুরুষ উভয়েই এই পেশায় জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। তবে পুরুষরা কারখানায় বসে কাজ করলেও নারীরা তেমনটি নয়। নারীরা কাজ করে নিজ নিজ বাড়িতে বসে। তারা অর্ডার পেলে বাড়ি থেকেই মালামাল তৈরি করে তা সরবরাহ করে থাকে। এমনই এক কারখানা ছেঁউড়িয়া গ্রামের ‘কারিগরপাড়া’র ‘একতারা পরিবার’। যেখানে তৈরি হয় নানা সাইজ ও ডিজাইনের ‘একতারা’। মালিক হাফিজুল ইসলাম বছর তিনেক আগে স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেন এই ব্যবসা। সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে স্ত্রী-কন্যাসহ পরিবারের সবাই এখন জড়িয়ে পড়েছে এই শিল্পের সঙ্গে। তাদের নিপুন হাতে তৈরি হচ্ছে লালনের স্মৃতি সমৃদ্ধ ‘একতারা’। হাফিজুল ইসলাম জানান, তাঁর এখানে শুধু তৈরি হয় বিভিন্ন সাইজের ‘একতারা’। এর ডিজাইনারের কাজ করছে তাঁর ছেলে সাগর। একতারা তৈরির উপকরণ হিসেবে তাকে ‘তরলা বাঁশ’ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুর থেকে আনতে হয়। মেহগনি কাঠের তৈরি ছোট-বড় সাইজের খোল আনতে হয় যশোরের কেশবপুর থেকে। আর নাটোর থেকে আসে ছাগলের চামড়া। এছাড়া প্রয়োজন হয় স্ক্রু, তার, ওয়াসার ও রং। কুষ্টিয়া ছাড়াও তিনি বিভিন্ন জেলার পিকনিক স্পট-গুলোতে এসব মালামাল সরবরাহ করে থাকেন। একতারার খোলে রঙের কাজ করছে শিশু শিল্পী হাবিবা খাতুন ও আনিকা। চল্লিশোর্ধ মনোয়ারা বেগমও সাংসারের কাজের ফাঁকে তৈরি করেন ‘একতারা’ ও ‘ডুগডুগি’। দুই সন্তানের জননী মনোয়ারা জানান, স্বামীর আয়ে সংসার ঠিকমতো চলছিল না। তাই বাড়তি আয়ের জন্য তিনি এ পেশায় জড়িয়ে পড়েন। Ñএমএ রকিব, কুষ্টিয়া থেকে
×