ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে চলছে বেশুমার কোচিং বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

যশোরে চলছে বেশুমার  কোচিং  বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে চলছে বেশুমার কোচিং বাণিজ্য। অধিকাংশ কোচিং সেন্টারের পরিচালক বা মালিক সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। কেউ নেপথ্যে থেকে আবার কেউ সামনে থেকে এ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের আগস্টে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা জারি করে। নীতিমালা অনুযায়ী সরকারী-বেসরকারী বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসার কোন শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। এমনকি শিক্ষকেরা বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারেও পড়াতে পারবেন না। তবে দিনে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন। আর সরকার-নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতরই পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশেষ কোচিং করানো যাবে। তবে এ জন্য কাউকে বাধ্য করা যাবে না। কিন্তু নীতিমালা থাকলেও বাস্তবে হচ্ছে তার উল্টো। একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক শিক্ষক নীতিমালা উপেক্ষা করে প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্য করে চলেছেন। যশোরের সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন যাবৎ একশ্রেণীর শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোচিং পরিচালনা করে আসছেন। আর এটা বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছেন, যা পরিবারের উপর বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করেছে এবং এ ব্যয় নির্বাহে অভিভাবকগণ রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন। এছাড়া অনেক শিক্ষক শ্রেণী কক্ষে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে কোচিং এ বেশি সময় ব্যয় করছেন এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা এবং অভিভাবকগণ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যশোরের মুসলিম একাডেমিতেই ৮/৯ কোচিং সেন্টার চলছে। এখানে রুম ভাড়া নিয়ে কোচিং পরিচালনা করে আসছে অনেক কয়েক শিক্ষক। এখানে মাগুরার একটি কলেজের শিক্ষক সুশান্ত কুমার দীর্ঘদিন ধরে এসএস কোচিং সেন্টার নামে একটি সেন্টার পরিচালনা করে আসছেন। তিনি এর আগে কালেক্টরেট স্কুলে ভাড়া দিয়ে কয়েকটি রুম নিয়েছিলেন। পরে এ স্কুল থেকে বিতাড়িত হয়ে মুসলিম একাডেমিতে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেকের সঙ্গে কয়েকটি শিক্ষার্থীর ছবি দিয়ে লিফলেট বানিয়ে শহরে প্রচার করে ব্যবসার জাল বিস্তার করার প্রয়াস চালিয়েছেন। যা নিয়ে অভিভাবকরা রীতিমত বিভ্রান্তিতে পড়েছেন। তার লিফলেট ও পোস্টারে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীর তালিকা রয়েছে। যার অধিকাংশ বানোয়াট। এ ব্যাপারে সুশান্ত কুমার জানান, তিনি সরকারী আইন মেনে কোচিং পরিচালনা করছেন। তবে পোস্টারে ভুল তথ্য দেয়ার ব্যাপারে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন জানান, কোচিং বাণিজ্য বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ কমিটি রয়েছে। ওই কমিটি দ্রুতই মাঠে নামবে। কোচিংয়ে জড়িত শিক্ষক ও কোচিং পরিচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×