ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাংস্কৃতিক চেতনাই প্রগতির পথ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

সাংস্কৃতিক চেতনাই প্রগতির পথ

এক সময় পাড়াগাঁয়ে দেখা যেত ক্লাব সংস্কৃতি। গান, আবৃত্তি, নাটক-অভিনয় ইত্যাদি শিল্পকলার অবারিত চর্চা ছিল। দেখা যেত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি অন্যান্য জ্ঞানের বই-পুস্তক, ভাল প্রবন্ধ, গল্প-উপন্যাস ইত্যাদি পড়ত। আজ আর তা দেখা যাচ্ছে না। এক সময় পাড়া-গাঁয়ে পাঠাগার দেখা যেত, তাও আজ আর নেই। কোথায় যেন এসব হারিয়ে গেল। এখন আর আগের মতো পাড়া-গাঁয়ে ঐতিহাসিক ও সামাজিক নাটক মঞ্চস্থ হয় না। হয় না কোন কবিগানের পালা। যাত্রাপালার মতো লোকজ সংস্কৃতির অনুষ্ঠান দেখার জন্য এক সময় মানুষের মধ্যে উৎসাহবোধ কাজ করত, তাও আজ আর নেই। দেখা যেত কোন বিয়ে অনুষ্ঠানে বিয়ের আগের রাতে বেতার শিল্পীদের দিয়ে ভাল ভাল রুচিশীল গানের পরিবেশনা হতো। এখন কোথাও আর কিছু নেই বরং ব্যান্ড শো’র শব্দদূষণ অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছি। স্বীয় বাঙালীপনা সংস্কৃতির পরিবর্তে আমরা দিন দিন পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সেবাদাসে পরিণত হয়ে উঠছি। শহর-নগরে কিছু মাত্র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সীমিত আয়োজন দেখা গেলেও তাও যেন পর্যাপ্ত নয়। এই সাংস্কৃতিক কর্মকা-কে নির্দিষ্ট ক’টি জায়গায় সীমাবদ্ধ না রেখে গ্রাম-বাংলার তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছাতে হবে। সাংস্কৃতিক চেতনা হচ্ছে একটি জাতির ভূষণ। এসব আজ আমাদের মধ্যে না থাকার কারণে নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে উঠছে না। ফলে আমরা দিন দিন যেন রোবটে পরিণত হয়ে উঠছি। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির অভাব বিদ্যমান হেতু আমাদের মধ্যে গড়ে উঠছে না মানবতা সভ্যতা ও শালীনতা। আগে যখন আমাদের মধ্যে এ সবের চর্চা ছিল, তখন মানুষের নৈতিক অধঃপতন এ রকম সময়ের মতো ঘােটনি। বিশেষত আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে এ অবক্ষয়ের শুরু। যা ধীরে ধীরে আজকের এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে আমাদের নিয়ে এলো। শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ছাড়া একটি জাতি নৈতিকভাবে উন্নতি লাভ করতে পারে না। সেই শিক্ষায় আজ অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে গেলেও ছেলেরা নানা কারণে পিছিয়ে পড়ছে। সেই ছেলেদের অনেকে আজ দেশ ও সমাজে ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি মানবিক শিক্ষার সঙ্কট শিক্ষা ব্যবস্থায় চরমভাবে বিরাজমান। এর থেকে পরিত্রাণ না মিললে আমরা আরও অন্ধকার গহ্বরের দিকে ধাবিত হয়ে পড়ব। আজ সময় এসেছে এসব নিয়ে ভাবার এবং কাজ করার। প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায় শিক্ষা-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মুক্ত মনন অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে আজকের তরুণ-যুব সমাজের গতিপথ পরিবর্তন করে দিতে হবে। পাশাপাশি শিশুদের জন্যও সেরকম অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। নতুবা নিজেরাই নিজেদের অজান্তে অন্ধকার গহব্বরে হারিয়ে যাব। দেশ এবং জাতির বৃহত্তর কল্যাণে ও মানবিক সমাজ গঠনের প্রত্যয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে জরুরী ভিত্তিতে এগিয়ে আসা দরকার। খন্দকার মাহবুবুল আলম বন্দর, চট্টগ্রাম সত্যেরই হয় জয় একাত্তর সালে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শেষ পর্বের ছাত্র। আমি মুক্তিযুদ্ধ সচক্ষে দেখেছি। কাজেই কোন বই পড়া লাগে না। আমি প্রশ্নাকারে এবং সংক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি কথা বলতে চাই। ’৭১ সালে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ঘোষণা শুনেছিলাম। সেই ঘোষণা শুনে আমরা কী বুঝলাম? বুঝলাম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালী সৈন্যদের অনেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়েছেন। প্রশ্ন জাগে- জিয়াউর রহমান যদি ওই ঘোষণা না দিতেন তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধ হতো না? স্বাধীনতার ঘোষণা তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণে আছে। জিয়াউর রহমানের সেই ঘোষণা দেয়ার পরিবেশ, ক্ষেত্র, সুযোগ কে তৈরি করেন? শেখ মুজিব নন কি? জিয়াউর রহমানের ওই ঘোষণাটি ’৬৯-’৭০ সালে হলো না কেন? তখন জিয়াউর রহমান কোথায় ছিলেন? ওই সময় ঘোষণা দিলে দেশবাসী ও বিশ্ববাসী শেখ মুজিবের পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের নামটিও জানতে পারত। তাঁকেও মাথায় তুলে রাখত। ’৬৯-’৭০ সালের দৈনিক পত্রিকাগুলোর হেডলাইন আমি পুনর্প্রকাশের দাবি জানাই। তাহলেই বোঝা যাবে ওই সময় বাংলার মহানায়ক কে ছিলেন? বিএনপি কেন জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এত টানাটানি করছে? জিয়াউর রহমানকে উচ্চপদে না বসালে কি বিএনপি দল থাকবে না? আমি মনে করি বিএনপির সব সময় থাকা উচিত শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে। ’৭০-এর নির্বাচন ছিল স্বাধীনতার সর্বশেষ এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ওই নির্বাচনে শেখ মুজিব পাঁচটি আসন পেলে বিশ্ববাসী কি শেখ মুজিবের দাবির প্রতি সমর্থন জানাত? কখনই না। শেখ মুজিবের ফাঁসি হয়ে যেত। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর নির্বাচনে, ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণআন্দোলন, ’৭০-এর নির্বাচনÑ এসবই শেখ মুজিবের অবদান। তাঁর সমকক্ষ আর কেউ নেই। তাঁর সঙ্গে অন্য কারও তুলনা হতে পারে না। পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টির একক কৃতিত্ব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। কাজেই শেখ মুজিব বাংলাদেশ ও বাঙালী জাতির জনক। আব্দুল জলিল মোড়ল কেশবপুর, যশোর আমার দেখা আক্রান্ত প্যারিস জীবনে কোনদিন ভাবতে পারিনি শিল্প-সাহিত্য ও ফ্যাশন জগতের দেশ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলা হবে! মনে হয় এখন সে দেশে মানবাধিকার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা দুষ্কর হয়ে পড়বে। এই সেদিন ৭ নবেম্বর ২০১৫ তার্কিশ বিমানে করে এবারকার ৩৮তম ইউনেস্কোর সম্মেলনে যোগ দিতে প্যারিসে যাই। সম্মেলনের শেষের দিকে অর্থাৎ ১৭ নবেম্বর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য রাখার কথা ছিল। প্যারিস আক্রান্তের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এ সম্মেলনে যোগ দেয়া বাতিল করা হয়। ১৩ নবেম্বর ২০১৫ প্যারিসের প্লাস দ্য ক্লিসিতে অবস্থিত প্রভাবশালী বাঙালী ব্যবসায়ী ইনু ভাইয়ের কাফে দ্য লুনা রেস্টুরেন্টে ডিনার করছি, পাশাপাশি টিভিতে ফ্রান্স-জার্মানির ফুটবল খেলা দেখতে দেখতে হঠাৎ খবর এলো শহরের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। রাত প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে যে বাসায় থাকি প্যারিস নর্থে সেন্ট ডেনিস এলাকায় যাওয়ার জন্য রেস্টুরেন্ট থেকে দৌড়ে মেট্রোতে যাওয়ার চেষ্টা করি। গোটা প্যারিসে পুলিশের দৌড়াদৌড়ি, সাইরেন, দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য মিনিটের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেল। শুরু হলো যে যেখানে আছে সেখান থেকে বাসায় না হয় নিরাপদে যাওয়ার প্রচেষ্টা। জীবন বাঁচার জন্য ফরাসিদের সঙ্গে আমিও দৌড় দিয়ে মেট্রোতে ওঠার চেষ্টা করি। এরই মধ্যে নগরীতে প্রায় ৮০ হাজার ফুটবল খেলার দর্শকের খেলা শেষে নগরীতে প্রবেশ। ট্রান্সপোর্ট নেই। সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে অনেককে পড়ে গিয়ে আহত হতে দেখলাম। প্রায় কয়েক ঘণ্টা পর আমি নর্থ প্যারিসস্থ সেন্ট ডেনিসে বন্ধু মোহাম্মদ রুহুল আমিনের বাসায় নিরাপদে পৌঁছাতে সক্ষম হই। ইতিমধ্যে প্যারিসে সাময়িক কারফিউ জারি, জরুরী অবস্থা ইত্যাদিতে আরও ঘাবড়ে গেলাম। পরে টিভি দেখে দেখে রাত কাটাই। তবে এত কা- প্যারিস নগরীতে হচ্ছে, ঘরে-বাইরে কোথাও একবারের জন্যও বিদ্যুৎ যেতে দেখিনি। বরং রাস্তায় বিপদগ্রস্ত অনেক মানুষকে সাহায্য করার জন্য এমনকি মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনকে এগিয়ে আসতে দেখে খুশী হলাম। প্যারিস আক্রান্তে শুধু আমি নই গোটা ফরাসীরা ভয় পেয়েছিল ঠিকই, তবে সরকারের কথাবার্তা ও ইউরোপীয় গোষ্ঠীর নিরাপত্তার নিশ্চয়তার পরদিনই প্যারিস নগরীকে আবার জেগে উঠতে দেখি। নিহতদের স্মরণে পরদিন প্যারিসবাসী শহরের মূল কেন্দ্র প্লাস দ্য রিপাবলিকানে ফুল ও মোমবাতি দিয়ে শ্রদ্ধা করতে থাকে। ঘটনার পর পরই ফ্রান্স সরকার সাময়িক কারফিউর পাশাপাশি জরুরী অবস্থা ঘোষণা, দেশের সব সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ দেন। ১৩ নবেম্বরের রাতটি ভয়ঙ্কর রাত হিসেবে প্যারিসবাসীর কাছে কেটেছে। এই হামলায় সবচেয়ে বেশি হতাহত হয় প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কনসার্ট অনুষ্ঠানে। আনন্দপূর্ণ কনসার্টস্থল ভরে যায় লাশের সারিতে। চারদিকে কেবল চিৎকার আর নিরাপদ সাহায্যের আকুতি। ফরাসী সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, প্যারিস কর্তৃপক্ষের তৎপরতার কারণে প্যারিস নগরী আবারও তার সৌন্দর্য ও আকর্ষণ ফিরে পেতে শুরু করেছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্যারিসবাসীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছে সারা বিশ্ব। মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী গেন্ডারিয়া, ঢাকা হলুদ গালিচার কাল ষড়ঋতুর রঙ্গশালার দেশ বাংলাদেশ। ঋতু পরিক্রমায় একেক ঋতু নিয়ে আসে ভিন্ন রকম আবেশ। ঋতুচক্রে হেমন্ত পেরিয়ে এখন শীতকাল। হেমন্তের পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ ও স্নিগ্ধতার পরশ বুলিয়ে খেজুরের রস আর পিঠাপুলির মৌসুম শীতকাল। রাতের শিশিরে তরুলতা বৃক্ষকুল আজ শিশিরসিক্ত। ভোরের আলোয় শিশিরসিক্ত তরুলতাকে ঝিকমিক করে তোলে। প্রকৃতি যেন এখন শীতের রানী। প্রকৃতির এক মনোহারিণী রূপসী কন্যা বাংলাদেশ। অপরূপ সাজে সজ্জিত বাংলা মা। বর্ষায় যেমন প্রকৃতি হয়ে ওঠে জলদেবী আবার হেমন্তে প্রকৃতি হয়ে ওঠে শস্যদায়িনী লক্ষ্মী। রূপসী বাংলার রূপের যেন অন্ত নেই। কবির ভাষায়Ñ ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমার হেরিনু পল্লী জননী।’ প্রকৃতি তার রূপের ডালা সাজিয়ে বাংলাকে মোহনীয় করে তোলে ভিন্ন সাজে। বর্তমান সময়ে বাংলার মাঠে মাঠে এখন শুধুই হলুদের সমারোহ। ভাটি অঞ্চল, চরাঞ্চল যে দিকেই চোখ যায় শুধুই হলুদের হাতছানি। চারদিকে যেন হলুদরঙা বিছানা পাতা। সর্ষেফুলের মোহনীয় রূপ কাকে না আকৃষ্ট করে! ফুলে ফুলে নেচে বেড়ায় মৌমাছি। মৌমাছির গুন গুন শব্দ প্রকৃতিতে এক অন্য রকম আবহ সৃষ্টি করে। শীতের মিঠে-কড়া রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে হলুদের এমন মনোলোভা দৃশ্য বাংলা ছাড়া আর কোথাও কি মেলে? প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোথাও কোথাও চলছে সর্ষেফুলের মধু আহরণের ধুম। বাংলার বিস্তীর্ণ মাঠ আজ হলুদের গালিচায় আবৃত। মৌমাছি গুন গুন সর্ষে ফুলের গায়, চলো মন ঘুরে আসি বাংলার হলুদ আঙ্গিনায়। শ্যামল চৌধুরী মোহনগঞ্জ, নেত্রকোনা
×