ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নাশকতার বিচার হবেই

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

নাশকতার বিচার হবেই

রক্তে অর্জিত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির মর্মমূল ধরে টান দিয়ে যারা ছিন্নভিন্ন করে দিতে চায়, তাদের নখদন্ত উপড়ে ফেলে দেয়ার বিকল্প নেই। বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, শহীদদের সংখ্যাসহ পুরো ইতিহাসকে বিকৃত করে বিতর্ক তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ফায়দা লুটতে চায়, সেই সব পরগাছা উপড়ে ফেলা স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী মানুষের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোন ঘোষণা বা সমঝোতায় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়নি। অনেক জেল-জুলুম, হুলিয়া নির্যাতন, নিপীড়ন, শাসন-শোষণ, ত্রাস, হত্যা, জখম সয়ে সয়ে বাঙালী জাতি ও তার নেতৃবৃন্দ রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে লাল সবুজের পতাকাকে ধারণ করেছেন স্বাধীন ভূখ-ে। সেদিনের পরাজিত শত্রুরা আত্মসমর্পণ ও পালিয়ে গিয়েছিল। এরা নির্বিচারে একাত্তরের পঁচিশে মার্চ রাত থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গণহত্যা চালিয়েছে। এই নরহত্যাকারীদের পুনর্বাসন শুধু নয়, রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এমনকি সরকারের অংশীদার ও ক্ষমতায় বসানো হয়েছে পঁচাত্তর-পরবর্তীকালে, যখন মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত প্রায় সবকিছু ধ্বংস করে পাকিস্তানী ধারায় দেশ পরিচালনা করা হচ্ছিল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বদলে ফেলার প্রচেষ্টাও চলেছে। এর বিরুদ্ধে জনগণের একটা বড় অংশ প্রতিবাদী ছিল। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশ পাকিস্তানী ধারা থেকে ফিরে এলেও রাজাকার পুনর্বাসনকারী ও একাত্তরে পরাজিত যুদ্ধাপরাধীরা মিলেমিশে দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেছে। এদের বিগত তিন বছরের কর্মকা-ে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্রবিরোধী ছিল। এরা দেশে সন্ত্রাসবাদকে যেমন লালন করেছে, সন্ত্রাসী গড়ে তুলেছে, তেমনি জঙ্গীবাদের বিস্তারও ঘটিয়ে চলেছে। তারা ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর দেশজুড়ে নাশকতা চালিয়েছে। নিরীহ নিরপরাধ মানুষসহ শিক্ষিতজনদের হত্যা করেছে। পাকিস্তানী তালেবান স্টাইলে এ দেশেও সন্ত্রাসী তৎপরতা অব্যাহত রেখে জঙ্গীবাদের ঘাঁটি বানাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তারা। তাই পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না। এরা মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কটাক্ষ করে। শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য নাশকতামূলক তৎপরতা তাদের বন্ধ হয়েছে তা নয়। হরতাল-অবরোধ ডেকে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা মেরে, চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে, যানবাহনসহ প্রচুর সম্পদ বিনষ্ট শুধু নয়, দেড় শতাধিক মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে। ব্লগার, মুক্তমনা, বুদ্ধিজীবীদের আগাম ঘোষণা দিয়ে হত্যা করেছে। এদের সব কর্মকা- পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়। এরা স্রেফ সরকারবিরোধী নয়, এরা বাংলাদেশবিরোধীও। এরা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার তত্ত্বাবধানে বিদেশী অর্থে-অস্ত্রে পরিচালিত বলেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্নও তোলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রদত্ত ভাষণে এসব প্রসঙ্গ উত্থাপন করে এসবের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন। আশাবাদী করেছেন, এসব ঘটনার বিচার অবশ্যই হবে। আর তাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এই পদক্ষেপ আরেক মাইলফলক হবে।
×