ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ আরও দুই টার্ম শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চায়

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশ আরও দুই টার্ম শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চায়

৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও পাঁচ লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রম ও জীবনহানির বিনিময়ে আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১০ জানুয়ারি ছিল বাংলাদেশের জাতি-রাষ্ট্রের পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের দুই বছর পার হয়ে তৃতীয় বর্ষে যাত্রা শুরু। দুটি দিবসের মাঝখানে মঙ্গলবার শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত এক ভাষণে (খালেদা জিয়া ও তার দলীয় নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে) বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও ৩০ লাখ শহীদদের নিয়ে কারও কোন কটাক্ষ সহ্য করা হবে না।’ শেখ হাসিনা কারও নাম না নিলেও এটা পরিষ্কার যে তিনি খালেদা জিয়া ও তার বিএনপির উদ্দেশ্যেই এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। খালেদা ক’দিন আগে ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ চাননি’ এমন সব উদ্ভট বক্তব্য প্রদান করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ৩০ লাখ, এটা একটা সেটেলড ইস্যু, এভাবে শহীদদের সংখ্যাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কথা বলে খালেদা আরেকবার প্রমাণ করলেন তিনি বাংলাদেশে পাকিস্তানের এক নম্বর এজেন্ট। খালেদা কখন কথাটি বললেন, যখন একটার পর একটা যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় হচ্ছে, রায় কার্যকর হচ্ছে এবং যার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিন্দা প্রস্তাব হলো এবং পাকিস্তানের সেনারা মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে গণহত্যা কিংবা নারী নির্যাতন করেনি বলে স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর দাবি করল। বলল খালেদা জিয়াকে এজেন্ট বানাবার পর। তার পরই এলো খালেদা জিয়ার বক্তব্য অর্থাৎ তিনি পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সমর্থন দিলেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল, মুক্তিযোদ্ধা বা শহীদ পরিবার এতদিন যে বলেছেন, খালেদা মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন যে কারণে ক্যান্টনমেন্টে আয়েশী জীবনযাপন করেছেন। সেই কথাই আজ প্রমাণিত হলো। খালেদা নিজেই নিজেকে পাকিস্তানপন্থী বলে জাহির করলেন। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যের প্রতিবাদের মাধ্যমে সুদূরপ্রসারী একটা লক্ষ্যও প্রকাশ করলেন। অর্থাৎ আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের বাংলাদেশ। বাঙালী জাতি শেখ হাসিনার কাছে যতখানি আশা করে তার চেয়েও বেশি তিনি আমাদের দিলেন। এই যেমন প্রথমবার ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন। সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরির কোটা, সর্বশেষ মাসে ১০ হাজার টাকা সম্মানী প্রদানÑ এই শেখ হাসিনারই অবদান। এখানেই শেখ হাসিনা অদ্বিতীয়া। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যদি দেশে ফিরে না আসতেন তাহলে অল্প দিনের মধ্যে ভারতীয় সেনা কি ফিরে যেত? যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের কাজ কে করতেন? ঠিক একইভাবে জাতির পিতাকে হত্যার পর শেখ হাসিনা যদি দায়িত্ব না নিতেন তাহলে কি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতো, তাহলে কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা যেত? তাহলে কি আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারতাম? তাহলে কি উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার ধৃষ্টতা আমাদের হতো? পদ্মা সেতু নির্মাণ; সমুদ্রসীমা নির্ধারণ; ছিটমহল সমস্যার সমাধান; বঙ্গবন্ধু সেটেলাইট; ৭ বছর ধরে জিডিপি ৬+ ধরে রাখা এবং একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা; উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে এ অঞ্চলের সকলকে পেছনে ফেলে অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলা; ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার অর্জন; এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে বাঙালী জাতিকে শেখ হাসিনার কাছে যেতে হবে। এত সাহস, এত কর্মস্পৃহা আর কে দেখাতে পারবে, দেখাবার মতো মেধা দূরদর্শিতাই বা আর কার আছে? আর তো কারও নেই। প্রতিপক্ষ একজন অবশ্য আছেন, সে অবয়বে বিদেশী শাড়িতে, মেধায় মননে সাংস্কৃতিক পরিম-লে বড়ই বেমানান। তার বরং রাজনীতি ছেড়ে ঘরে বসে যাওয়াই ভাল। সেখানেও ঝুঁকি আছে। আবারও পেট্রোলবোমা ছুড়বেন না তো? একবার রাজপথ থেকে গুলশান অফিসে ঢুকেছিলেন। জাতি কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছিল। কিন্তু না, পেট্রোলবোমা সাপ্লাই দিতে লাগলেন। মানুষ পেট্রোলবোমার আগুনে দগ্ধ হতে থাকল, শিশু, নারী কেউ রেহাই পেল না। এখনও চোখে ভাসে সমস্ত শরীরে পোড়া ঘা সেই কনা শিশুটির কথা বা বোমায় পুড়ে অঙ্গার হওয়া সেই ভ্যান চালকের কিশোর পুত্রের ছবি। এমনকি নিরীহ গরুও রেহাই পায়নি। আমরা যদি স্বাধীনতার পর থেকে গত ৪৪ বছরে রাষ্ট্র পরিচালনার বয়স কার কত হিসেব করি তবে দেখতে পাব মিলিটারি জিয়ার ৬ বছর + সাত্তারের ৭ মাস + খালেদা জিয়ার ১১ বছর দেড় মাস = ১৭ বছর সাড়ে ৮ মাস + অপর মিলিটারি এরশাদের ৮ বছর ১০ মাস- অর্থাৎ ২৬ বছর সাড়ে ৬ মাস ক্ষমতায় ছিল জিয়া-এরশাদ-খালেদার মিলিটারি ও সেমি মিলিটারি। পক্ষান্তরে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তথা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সিভিল সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন- বঙ্গবন্ধু সাড়ে ৩ + শেখ হাসিনা ১২ = সাড়ে ১৫ বছর। যদি প্রশ্ন করা হয় কার অবদান কি জবাব হবে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্জন বিশাল এবং তুলনাহীন। পক্ষান্তরে এরশাদ ৮ বছর ১০ মাসের তবু কয়েকটি সেতু ও রাস্তা নির্মাণ এবং রাজধানী ঢাকায় কয়েকটি রাস্তা প্রশস্ত করেছেন। জিয়া বা খালেদার এমনি একটি চিহ্ন কি কেউ দেখাতে পারবেন? পারবেন না। জিয়ার কাছ থেকে শোনা গেছে ‘মানি ইজ নো প্রোব্লেম’ বলে সঙ্গে সঙ্গে ‘আই উইল মেক পলিটিক্স ডিপিকাল্ট ফর দ্য পলিটিশিয়ান’ জাতীয় নানা সন্ত্রাসী কথাবার্তা। আর স্ত্রী খালেদার মুখ থেকে কেবল ‘যত উন্নয়ন হয়েছে সব বিএনপি আমলে’, কিন্তু একটির অস্তিত্ব দেখাতে পারবেন না। ‘আওয়ামী লীগ কিছুই করেনি’ জাতীয় যতসব মিথ্যের বেসাতি।’ বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। নির্বোধ আর কাকে বলে? জনগণ সবই দেখছে তবুও ‘আওয়ামী লীগ কিছুই করেনি’ এমন কথা মানুষ মোটেই মেনে নিচ্ছে না। তারা দেখছে, বেশি পেছনে যাওয়ার দরকার নেই, গত ৭ বছরে কি কি হয়েছে, হচ্ছে, জনকল্যাণকামী কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি সব দেশের মানুষ দেখছে, সরাসরি অনুভব করছে খালেদা জিয়া ২০০৬-এ ক্ষমতা থেকে যাওয়ার সময় বিদ্যুত উৎপাদন ছিল মাত্র ৩২০০ মেগাওয়াট, যা এখন ১৪,০০০ মেগাওয়াট এবং এখন আর বিদ্যুতের লোডশেডিং নেই, কালে-কস্মিনে ২-৩ মিনিট বিদ্যুত থাকে না, সেও মেরামতের প্রয়োজনে, বিদ্যুতের অভাবে নয়। অথচ খালেদা জিয়ার আমলে বলা হতো ‘বিদ্যুত কখন আসবে, কখন যাবে বলা হতো না।’ আর এখন বিদ্যুত ‘কখন আসবে’ কথাটিই ওঠে গেছে, যেমন করে ‘দুর্ভিক্ষ’ ‘মঙ্গা’ শব্দাবলী ডিকশনারিতে ঢুকে গেছে- জীবনে নেই। যে কারণে মানুষ এখন বলছেন, শেখ হাসিনা কেবল বর্তমান মেয়াদ নয়, এর পরও অন্তত আরও দুটি মেয়াদ ক্ষমতায় থাকুন, দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কের প্রান্তসীমায় নিয়ে যাওয়ার স্বার্থেই তার ক্ষমতায় থাকা দরকার। শেখ হাসিনা তাঁর বর্তমান মেয়াদের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দিয়েছেন। বেতার-টিভিতে ভাষণটি প্রচারিত হয়েছে, দৈনিকগুলোতে তা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে। তার এই ভাষণ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এখানেও সেই বিএনপির ‘মিথ্যে বচন’। টিভিতে দেখা গেল খালেদা জিয়ার ভারপ্রাপ্ত (নাকি ভারাক্রান্ত) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন- প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ নাকি জাতিকে ‘হতাশ’ করেছে? ভাষণে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ‘সঙ্কট’ নিরসনের কোন দিকনির্দেশনা নেই? বিএনপির কাছ থেকে এ ধরনের কথা শুনতে শুনতে জাতি টায়ার্ড? জাতি বরং দেখছে শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের বিশাল বিশাল স্থাপনা, অনুভব করছে সূচক বৃদ্ধির সুফল, সেখানে খালেদার মহাসচিবের এ ধরনের মিথ্যে বক্তব্য মানুষ গ্রহণ করছে না। বরং তাদের সমালোচনা করছে। তবে হ্যাঁ, রাজাকার-আলবদর এবং পাকিস্তানপন্থী বিএনপিওয়ালাদের কাছে তো স্বাধীন বাংলাদেশের কোন কিছুই ভাল লাগে না, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাদের লেখাপড়ার দৈন্য এতখানি যে, গোয়েবলসের আমল কখন শেষ হয়ে গেছে এ সামান্য কথাটিরও ধারণা নেই খালেদা জিয়া ও তার মিথ্যের মাইকের। তারা জানে না, একটি মিথ্যেকে বার বার বললে এখন আর সত্য হয় না। হাজারবার বললেও নয়। বস্তুত খালেদা এমন সঙ্কটে পড়েছেন যে ক্ষমতায় যেতে না পারলে দুর্নীতির দায়ে পলাতক ছেলে ও ছেলের পরিবারকে যেমন দেশে আনতে পারছেন না, তেমনি দলকেও আর ধরে রাখতে পারছেন না। এ জন্য যে, বিএনপি মানুষ করে দুর্নীতি লুটপাটের মাধ্যমে ভাগ্য গড়ার জন্য। ক্ষমতা নাই, হাওয়া ভবন নেই, তো কিছু নেই। অর্থনৈতিক উন্নয়নের গর্বও দেখাতে পারছে না। বিএনপি নামক দলটি তো সৃষ্টিই হয়েছে ‘মানি ইজ নো প্রোব্লেম’ বলে। এখন ‘নো প্রোব্লেম’ খালেদা জিয়ার কাছেই ‘ইয়েস প্রোব্লেম’ হয়ে গেছে। ফখরুল সাহেবদের ম্যাডাম পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করিয়ে, প্রিসাইডিং অফিসার হত্যা করিয়ে, ৫ শতাধিক স্কুল ঘর (ভোট কেন্দ্র) পুড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘুদের বসতবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে, হাজার যাত্রীবাহী বাস, ট্রেন, টেম্পো, অটোরিক্সা, এমনকি গরুবাহী ট্রাক জ্বালিয়েও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে পারলেন না? বরং দেখা গেল নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনা মহাজোটকে নিয়ে সরকার গঠন করে একটার পর একটা মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে চলেছেন, দুর্লভ সব বিশ্ব স্বীকৃতি নিয়ে আসছেন। বাংলার জনগণও তাই চান। ব্যক্তি নয়, দেশের চেহারা সুন্দর হোকÑ সেটিই তিনি চান। ঢাকা ॥ ১৫ জানুয়ারি ২০১৬ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
×