ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঠানকোট হামলা ॥ নওয়াজের দায় স্বীকার কূটচাল নয় তো!

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

পাঠানকোট হামলা ॥ নওয়াজের দায় স্বীকার কূটচাল নয় তো!

পাঠানকোটে বিমানবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটির ওপর পাক ফিদায়ীর নাটকীয় হামলার পর পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কলম্বো থেকে ফোন করে হামলার দায়ভার পরোক্ষভাবে স্বীকার করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার অঙ্গীকার করেন। তিনি ওই সাংঘাতিক কা-কে কড়া ভাষায় শুধু নিন্দাই করেননি, তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন যারাই এই ঘৃণ্য আক্রমণে জড়িত তিনি তাদের অতিসত্বর নিশ্চিত ও স্পষ্টভাবে খুঁজে বের করে তার যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নেবেন। কোন পাক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এই ধরনের তদন্তের আশ্বাস দেয়া রীতিমতো একটি নজিরবিহীন ঘটনা। ২৬/১১ মুম্বাই হামলা ও দিল্লীর সংসদে পাক ফিদায়ীদের হামলার সময় তদানীন্তন পাক প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ রাজা গিলানি ওই ঘটনাকে কোন পাকিস্তানী জঙ্গীগোষ্ঠীর কাজ বলে মানতে সরাসরি অস্বীকার করেন এবং তদন্তে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার কোন আশ্বাসও দেননি। কিন্তু পাক মিডিয়া যখন অকাট্য প্রমাণ পেশ করল যে, আজমল কাসব হচ্ছে ফরিদকোটের এক দুস্থ পরিবারের ছেলে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন মুম্বাই কা-ে ডেভ হেডলির জড়িত থাকার স্বীকারোক্তি প্রকাশ করল তখন তিনি ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিক চাপে পড়ে ভারতকে আশ্বাস দিলেন যে, তাদের সরকার ভারতের তদন্ত কাজে সহযোগিতা করবে। তারাও প্রথমে পাকিস্তানের অতি প্রচলিত ঢঙে ওইসব কা-কে ভারতীয় সন্ত্রাসীদের কাজ বলে চালাবার চেষ্টা করেছিলেন। মনে হয় এবারও সেই ধারার অন্যথা হবে না। পাকিস্তান তো ইতোমধ্যে ঠিক মুম্বাই কা-ের মতো, বলতে শুরু করেছেÑ ভারত যে সব তথ্য পাঠানকোটে নিহত জঙ্গীদের সম্পর্কে দিয়েছে তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে না যে, পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গীরা ওই কা-ের সঙ্গে কোনভাবে জড়িত। অর্থাৎ তথ্যগুলো সঠিক-বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দিলে পাকিস্তান তদন্ত করে দেখবে। পাকিস্তানের এই অবস্থান মনে করিয়ে দেয় ১৯৯০ সালে নওয়াজ শরিফ ঠিক যেমন সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফের হাতে জিম্মি ছিলেন, আজ ২৬ বছর পরেও তিনি সেই একই অবস্থায় আছেন। সেনাপ্রধানের অনুমতি বা অনুমোদন ছাড়া তার একচুল নড়ার ক্ষমতা নেই। এর অর্থ দাঁড়ায়, গত ক্রিসমাসে নরেন্দ্র মোদি আগ বাড়িয়ে লাহোর সফর করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যে নতুন ধারার সম্পর্ক গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তার বোধহয় অপমৃত্যু ঘটতে চলেছে। শুক্রবার ইসলামাবাদে দুই দেশের বিদেশ সচিবদের যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল তা সম্ভবত স্থগিত থাকবে না পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী হতে চলেছে তা পাকিস্তানের পদক্ষেপের ওপর নির্ভরশীল। দিল্লী নওয়াজ শরিফকে বলেছিল, ভারত পাকিস্তানকে জঙ্গীদের সম্পর্কে যেসব তথ্য দিয়েছিল তা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যথেষ্ট। স্বভাবত প্রশ্ন উঠছে, নওয়াজ শরিফ কেন প্রচলিত প্রথা ভেঙে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিদেশে থাকাকালীন পাঠানকোট কা-ে পাকিস্তানী জঙ্গীদের জড়িত থাকার ভারতীয় অভিযোগ স্বীকার করলেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করলেন এই বলে যে, ভারত জঙ্গীসংক্রান্ত যেসব তথ্য দিয়েছে তার ভিত্তিতে পাকিস্তান তদন্ত করবে। মোদি তার ঐতিহাসিক লাহোর সফরের পরে এহেন পাকিস্তানী বিশ্বাসঘাতকতায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ। তাকে শান্ত ও ঠা-া করতে শরিফ ফোন করেন এবং ভারতের সব অভিযোগ মেনে নিয়ে তার ভিত্তিতে তদন্ত করার অঙ্গীকার করে পুরো ব্যাপারটাকে ঝুলিয়ে দেয়ার এক সুচতুর কূটচাল চালেন। যেটা মোদি ও ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা বুঝে উঠতে পারেননি। নওয়াজের আগ বাড়িয়ে ফোন করা ও আশ্বাসের বার্তা দেয়া ছিল পুরোপুরি এক ফাঁকা আওয়াজের খেল এবং নিছক দ্বিচারিতার এক নাটক। ভারতকে বিভ্রান্ত করতে তিনি মোদির মনে এমন এক ধারণার সৃষ্টি করলেন যে, ১৯৯৯-এ কার্গিলের মতো এবারের ঘটনাটিও ঘটেছে তার অজান্তে। যে কারণে তিনি অখুশি। তিনি খাকি উর্দিওয়ালাদের সঙ্গে কোন সলাপরামর্শ না করেই তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছেন যা পাকিস্তানে এক নজিরহীন ঘটনা। মোদি ও তার নীতিনির্ধারকদের আরও বিভ্রান্ত করতে তিনি এমন এক বার্তা দিলেন যা তাদের চিন্তা-ভাবনাকে আরও তালগোল পাকিয়ে দিল। তিনি এমন ভাষা ও ভঙ্গিতে কথা বললেন, যার মানে দাঁড়ায় তিনি সেনাবাহিনীর হুকুম মেনে চলেন না। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি তাদের দ্বারা পরিচালিত নন। ভারত সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে তিনিই শেষ কথা বলেন। পি-ির জিএইচকিউ নন। তিনি পাকিস্তানকে সর্বময় কর্তা, সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ নন। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় মোদিকে প্রকারান্তরে জানালেন, তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে সেনাবাহিনী বা জঙ্গীদের সৃষ্টি করা কোন প্রতিবন্ধকতা বরদাস্ত করবেন না। সেজন্য দু’দেশের বিদেশ সচিবদের বৈঠক স্থগিত বা বাতিল করা সঠিক কাজ হবে না। তাহলে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চাইছে তারা উৎসাহিত হবে। তিনি মোদির আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফিরেই অসামরিক গোয়েন্দা বিভাগকে (যে দফতরটি সরাসরি তার অধীনে) তদন্তের দায়িত্ব দেন। বিগত প্রধানমন্ত্রীরা হামলা কা-ের তদন্তের ভার সবসময় আইএসআইয়ের হাতে ন্যস্ত করতেন। ফলে তদন্তের নামে প্রহসন হতো। পাঠানকোট হামলার ১২দিন এবং ফোনে মোদিকে দেয়া আশ্বাসের নয়দিন পরেও পাক প্রধানমন্ত্রী তার তদন্তের ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিলেন। গত বুধবার পাক মিডিয়ায় হঠাৎ খবর হলো, মাসুদ আজহার ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তাজ্জব ব্যাপার হলো ইসলামাবাদ সরকারী ভাবে বুধবার রাত পর্যন্ত কিছুই জানায়নি। বিদেশ সচিবদের বৈঠক যাতে ভেস্তে না যায় সে জন্যই কি আজহারদের গ্রেফতার? পাক প্রধানমন্ত্রীকে বুঝতে হবে, শুধু মাসুদ আজহারকে ভারত চাইছে না। দিল্লীও চাইছে লেট নেতা জাকিউর রহমান লাকভি, জামাত উদ দাওয়ার নেতা হাফিজ সাইদ ও মুম্বাইয়ের পাকিস্তানে পালিয়ে থাকা ডন দাউদ ইব্রাহিমের গ্রেফতার এবং তাদের সকলকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া। ভারত চায় মাসুদ আজহারকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হোক। কারণ, সে আইএর উড়াল ৮১৪, জেট হাইজ্যাক করে তার লোকেরা কান্দাহারে নিয়ে যায় এবং বিমানের তিন ভারতীয় যাত্রীকে হত্যা করে। ওই কান্ডের মূল হোতা সেই পরি কল্পনার ছক কষে হাইজ্যাকের ঘটনা ঘটায়। সে ভারতের চোখে এক ফেরারি আসামি যার বিরুদ্ধে সংসদ ভবনে হামলা ও কাশ্মীরে গণহত্যা মামলা পুলিশ আদালতে পেশ করেছে। দিল্লী আরও দেখতে চায় শরিফ মাসুদ আজহারদের গ্রেফতারের ব্যাপারে কতটা আন্তরিক। ২০০২-এ সংসদ ভবনে হামলার পর পাকিস্তান তাকে কয়েকদিনের জন্য গ্রেফতার করে ছেড়ে দেয়। একই জিনিস করা হয়েছিল নেতা লাকভির দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, ‘জঙ্গীরা হলো সেনাবাহিনীর সংযোজিত অংশ। তারা আমাদের লক্ষ্যপূরণে প্রচুর কাজ ও সাহায্য করে।’ সুতরাং মোদি এবং তার নীতিনির্ধারকরা যদি আশা করে থাকেন যে, শরিফ জইশের নেতা মাসুদ আজহার ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের গ্রেফতার করে জেলে পুরে তাদের কঠোর সাজা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তাহলে বিশাল এক ভুল করছেন। পাকিস্তানে ফেরার পরেই সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ নওয়াজকে জানিয়ে দেন যে, পাঠানকোট তদন্তের ভার এক যৌথ কমিটির হাতে দেয়া হোক, যাতে আইএসআইও থাকবে। এই গুরুত্বপূর্ণ তদন্তের কাজ শুধু অসামরিক গোয়েন্দাদের হাতে ছেড়ে দেয়া যায় না। সুতরাং যে প্রশ্নটি ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নওয়াজ শরিফকে এখন জোরেশোরে জিজ্ঞাসা করছে তা হলোÑ তিনি জইশের জঙ্গীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাদের শাস্তি দেয়ার যে আশ্বাস নরেন্দ্র মোদিকে দিয়েছিলেন তা কি তিনি বাস্তবায়িত করতে পারবেন? অর্থাৎ সেনাবাহিনী কী জঙ্গীদের বলি দিয়ে শরিফকে ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে দেবে? অতীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জঙ্গীগোষ্ঠীদের গায়ে কোন আঁচ লাগতে দেয়নি। লাগতে দিলে তো নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি হতো না, অস্তিত্ব বিপদগ্রস্ত হতো। সেনাবাহিনী ছয় দশক ধরে নিজেকে দেশের একমাত্র নিরাপত্তার প্রাচীর ও অতন্দ্র প্রহরী বলে যেভাবে জাহির করেছে, সেই তত্ত্ব তো নিরর্থক এবং অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যেত। ভারতকে জুজু হিসেবে খাড়া করে তার বিরুদ্ধে জিহাদী যুদ্ধের জিগির তুলে সামরিক কর্তারা নিজেদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের প্রায় নিঃশেষিত কোষাগার লুট করে নিজেরা ঝোল টানার যে ধারা গড়ে তুলেছে তার অবলুপ্তি ঘটত। সেই সম্ভাবনা যাতে কোনদিন বাস্তবায়িত না হয় সে চেষ্টায় রাহিলরা সদাই ব্যস্ত। কারণ পাকিস্তানে বাজেটের প্রায় বিশ ভাগ (৮০০ বিলিয়ন রুপী) প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় হয় এবং এর দ্বিগুণের বেশি টাকা বেসামরিক মন্ত্রকের বাজেট থেকে সামরিক বাহিনীর জন্য বরাদ্দ হয়। যেমন বেসামরিক বিমান চলাচলের বাজেট থেকে যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ কেনা হয়। যার জন্য রাহিলের পূর্বসূরি জেনারেল কায়ানিও ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার প্রস্তাব নাকচ করেছিলেন। তিনি জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোকে বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে ভারতের দেয়া সহযেগিতার হাত প্রত্যাখ্যান করেন। মুম্বাই কা-ের পর লস্কর-ই তৈয়বাকে (লেট) আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সব রকমের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন। লেটের বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারি মামলা চললেও তিনি তার কোন অগ্রগতি ঘটতে দেননি। লেট নেতা জাকিউর রহমান লাকভি ও জইশ নেতা মাসুদ আজহারকে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যেতে বলেন। তিনি তাদের ছয় বছর প্রকাশ্যে কোন সভা-সমিতি করতে দেননি। চাপ কমলে ২০১৪ সালে দুজনের পুনরার্বিভাব ঘটে যখন তারা প্রকাশ্যে জ্বালাময়ী ভাষণে হিন্দুদের রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। যদিও আইনত দুটি সংগঠনই পাকিস্তানে বেআইনী, কিন্তু সেনাবাহিনীর আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় তাদের গায়ে কেউ হাত দেয়ার সাহস রাখে না। ১৯৫২ সালে জেনারেল ইসকান্দার মির্জা তৎকালীন পাকিস্তানের গবর্নর জেনারেল গোলাম মহম্মদকে চাপ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ভারত সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে, সামরিক বাহিনীর ভূমিকা থাকা প্রয়োজন বলে মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ হাতিয়ে নেন। তখন থেকেই দেশের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী এক নিয়ামক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই ধারাটি জেনারেল আইয়ুব খান ও জিয়াউল হক আরও শক্তপোক্ত করে। যার ফলে পরবর্তীকালে সব নির্বাচিত সরকার সামরিক বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে। সামরিক কর্তারা খুব ভাল করেই জানেন জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোকে মদদ দেয়া ছাড়া তাদের গতি নেই। গত কয়েক দশক ধরে তারা যেসব সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ও সন্ত্রাসের পরিকাঠামো নিজেদের দেশে ও ভারতীয় উপমহাদেশে গড়ে তুলেছে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি ও কায়েমি স্বার্থের লোভে তাহলে সেগুলোর কী হবে? রাতারাতি সেগুলোকে ভেঙে গুটিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। তাহলে ভারতের বিরুদ্ধে জঙ্গীদের দিয়ে ছায়াযুদ্ধের নীতি পরিহার করতে হবে। আর আফগানিস্তানে বিভিন্ন দেশের সেনা প্রত্যাহারের পর পাকপন্থী জঙ্গীদের দিয়ে দেশটি দখলের পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে। তা করলে পাকিস্তানের ঘোর বিপদ। কারণ ভারত আফগানিস্তানের পুনর্নির্মাণে যেভাবে সেনা অংশীদার করেছে তাতে ভারতের প্রভাব আফগানদের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে। আর কাবুল যে হারে ভারত থেকে অস্ত্রশস্ত্র পাচ্ছে তা পাকিস্তানের শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে উঠেছে। সুতরাং জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোকে পরিত্যাগ করা পাকিস্তানের পক্ষে সম্ভব নয়। তা করলে জঙ্গীরা তাদের বন্দুকের নল সেনাবাহিনীর দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে দেশে এক নজিরহীন অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করবে। ঠিক তালেবান এখন যেভাবে নিশানা করেছে আমেরিকাকে। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, ২০১৪ সালে পেশোয়ারে আর্মি স্কুলে তালেবানি হামলার পর রাহিল শরিফরা চারদিনের মধ্যে অপরাধীদের ধরে কাঠগড়ায় তোলে। কারণ, দোষীদের না ধরলে পাকিস্তানের জনমত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেত। উর্দিওয়ালাদের সঙ্গে তালেবানদের যোগসাজশের কারণেই তাদের ধরা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠত। রাহিলরা জনগণের আস্থা অর্জন করতে ত্বরিত গতিতে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু পাঠানকোট কা-ের ব্যাপারে রাহিলদের কোন তাগিদ বা মাথাব্যথা নেই। এখন দেখার বিষয়, নওয়াজ শরিফ তার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কোন সদর্থক পদক্ষেপ নেন কিনা। এখন পাকিস্তানী মিডিয়া ঢালাওভাবে প্রচার করছে কাশ্মীরের ইউনাইটেড জিহাদ কাউন্সিল নাকি পাঠানকোট কা-ের জন্য দায়ী। বিবেচ্য বিষয় হলো, পাঠানকোট কা-ের পর মোদি ও ভারত পাকিস্তানের প্রতি যে নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে নওয়াজ তার কথা না রাখলে ভারত কী তার নমনীয় নীতি বজায় রাখতে সক্ষম হবে? লেখক : ভারতের পদকপ্রাপ্ত সিনিয়র সাংবাদিক
×