ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জার্কাতায় আক্রমণের কৌশল প্যারিসে বোমা হামলার অনুরূপ

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ॥ আইএসের টার্গেট

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ॥ আইএসের টার্গেট

সন্দেহভাজন ইসলামিক স্টেট অনুগত জঙ্গীরা বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার কেন্দ্রস্থলে আকস্মিক হামলা চালিয়ে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটায় এবং একটানা বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, এতে পাঁচ হামলাকারী ও দুই বেসামরিক ব্যক্তি নিহত এবং প্রায় জনাবিশেকের বেশি আহত হয়। নিহত বেসামরিক ব্যক্তিদের একজন কানাডীয় ও অন্যজন ইন্দোনেশিয়ার। ইস্তাম্বুল, প্যারিস ও ক্যালিফোর্নিয়ার সানবারডিনোতে ইসলামিক স্টেট সম্পৃক্ত হামলাগুলোর পর দ্রুতই জাকার্তায় রক্তক্ষয়ী ঘটনাটি ঘটল। এটি হলো চরমপন্থী সংগঠনটির বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত হওয়ারই এক আভাস, যদিও মার্কিন নেতৃত্বাধীন এক কোয়ালিশন দলটির সিরিয়া ও ইরাকের অবস্থানগুলোর ওপর বোমাবর্ষণ করে যাচ্ছে। জাকার্তার পুলিশ প্রধান তিতো কারনাভিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, ওই হামলার পিছনে সুনিশ্চিতভাবেই ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হাত ছিল। এক বড় বাণিজ্যিক ও বিপণি এলাকাকে লক্ষ্য করে ওই হামলা চালানো হয় এবং তখন অনেকবার আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয় এবং বন্দুকধারী ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ১৫ মিনিট ধরে গুলিবিনিময় চলে। কর্মকর্তারা বলেন, এসব কৌশল নবেম্বরে প্যারিসে একযোগে চালানো বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণের কৌশলেরই অনুরূপ। আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক বার্তা সংস্থা ঘোষণা করে আইএস যোদ্ধারা ইন্দোনেশিয়ার রাজধানীতে বিদেশী নাগরিক ও তাদের রক্ষায় নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে এক সশস্ত্র হামলা চালায়। আইএস সম্পৃক্ত আরেক বিবৃতিতে বলা হয়, খিলাফতের মুজাহিদরা ক্রসেডার কোয়ালিশনের নাগরিকদের ওপর ওই হামলা চালায়। ঘটনাস্থলের কাছে থাকা জাতিসংঘ কর্মী জেরেমি ডাগলাস টুইটারে তার উদ্বেগ ব্যক্ত করে বলেন, ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এ দ্বীপপুঞ্জে ইসলামিক স্টেট ধাঁচের চরমপন্থীরা শিকড় গাড়ছে বলে ক্রমশ আশঙ্কা দানা বেঁধে উঠছে। সিরিয়া ও ইরাকে লড়াইরত আইএস যোদ্ধাদের মধ্যে প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ ইন্দোনেশীয় নাগরিক রয়েছে বলে মনে করা হয়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার জিহাদীদের নিয়ে গঠিত কার্তিকা নুসানতারা ইউনিট সিরিয়ায় ভূখ- দখলেও সহায়তা করেছিল এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে নতুন নতুন সদস্যকে আকৃষ্ট করতে এর সাফল্যের কথা প্রচার করে থাকে। কারনাভিয়ান মনে করেন, বাহরান নাইম নামের এক ইন্দোনেশীয় নাগরিকই ওই হামলার হোতা এবং সে সিরিয়ার রাকায় অবস্থান করছে। তিনি বলেন, নাইমের লক্ষ্য হলো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আইএস সমর্থক বিভিন্ন দলকে ঐক্যবদ্ধ করা। এটিই ইন্দোনেশিয়ায় আইএসের প্রথম হামলা এবং ২০০৯ সালের পর দেশটিতে সংঘটিত সবচেয়ে ভয়াবহ এরূপ সন্ত্রাসী হামলা। সেই বছর ইসলামপন্থী আত্মঘাতীরা জাকার্তার দুটি বিলাসবহুল হোটেলে বোমা হামলা চালিয়ে সাতজনকে হত্যা করে। ইন্দোনেশিয়ায় মৌলবাদী দলগুলোর তৎপরতার এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সেখানকার বালি দ্বীপে ২০০২ সালে বোমা হামলায় ২শ’য়েরও বেশি লোক নিহত হয়। তাদের মধ্যে অনেক অস্ট্রেলীয় পর্যটকও ছিলেন। আল-কায়েদা সম্পৃক্ত এক সময়কার শক্তিশালী জঙ্গী দল জামাহ ইসলামিয়া শক্তিশালী জঙ্গী দল জামাহ ইসলামিয়া ওই হামলা চালিয়েছিল। তখন থেকে ইন্দোনেশীয় কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাস দমন তৎপরতা জোরদার করে। কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দেয়, এবং জিহাদী লক্ষ্যের প্রতি সহানুভূতিশীল সংগঠন ও প্রকাশনা কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনী ২০ জন সন্দেহভাজন আইএস সমর্থককে গ্রেফতার করে। তবে চরমপন্থী দমনের ক্ষেত্রে দেশটি অন্যান্য দেশের তুলনায় সফল হলেও এতে আত্মসন্তুষ্টির কোন অবকাশ নেই বলে জাকার্তার প্রধান নিরাপত্তা বিশ্লেষক সিডনি জোনস মন্তব্য করেন। তিনি গত বছরের প্যারিস হামলার এক লেখা নিবন্ধে যুক্তি দেখান। তিনি বলেন, এ কথা সত্য যে, প্যারিসের মতো মাত্রায় কোন একযোগে পরিচালিত হামলা জাকার্তা বা বালি এবং ইন্দোনেশিয়ার অন্যত্র ঘটতে যাচ্ছে না। তবে আমরা এখানে আইএসপন্থী দলগুলোর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বিদেশীদের ওপর হামলা চালানোর সিদ্ধান্তের মতো কিছু পরিবর্তন দেখতে পাই। এটি স্পষ্ট আইএসের বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসী তৎপরতার আওতায় জাকার্তাকে অন্তর্ভুক্ত করার কৌশল বলেই মনে হয়। ওয়াশিংটন পোস্ট ও বিবিসি।
×