ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তদন্ত রিপোর্টের তথ্য

ফ্লাইট ইন্সপেক্টরদের উদাসীনতায় ঘটছে দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬

ফ্লাইট ইন্সপেক্টরদের উদাসীনতায় ঘটছে দুর্ঘটনা

আজাদ সুলায়মান ॥ সিভিল এভিয়েশনের অযোগ্য ও লাইসেন্সবিহীন ফ্লাইট ইন্সপেক্টরদের সীমাহীন অনিয়ম, অরাজকতা, গাফিলতি ও উদাসীনতার দরুন একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। এ চক্রের নানা অপকর্মের করুণ শিকার হচ্ছেন তামান্না রহমানের মতো মেধাবী পাইলটরা। ফ্লাইং ক্লাবের অরাজকতার সর্বশেষ শিকার তামান্না। গত বছর রাজশাহীতে প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় তামান্না ও তার প্রশিক্ষক শাহেদ কামাল নিহত হবার তদন্ত রিপোর্টে এ ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য ওঠে এসেছে। কিন্তু অতীতের আর দশটা দুর্ঘটনার মতোই এটার তদন্ত রিপোর্টও ধামাচাপা দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে সিভিল এভিয়েশনের ফ্লাইট ইন্সপেক্টরদের অযোগ্যতা, অপেশাদারিত্ব, উদাসীনতা ও নানা অনিয়মকেই দায়ী করা হয়। এ ধরনের তথ্য উল্লেখ করায় তদন্ত প্রতিবেদন শুধু ধামাচাপাই দেয়া হয়নি। উল্টো এক তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সিভিল এভিয়েশন থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এদিকে দীর্ঘ নয় মাসেও এ দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তামান্নার পরিবার। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে আরও অধিকতর তদন্তের সুপারিশ থাকলেও সেটাও আমলে নেয়া হচ্ছে না। এতে হতাশ হয়ে নিহত তামান্নার পরিবার বার বার সিভিল এভিয়েশনে ধর্ণা দিলেও তাদের জানতে দেয়া হয়নি- সে দিন কিভাবে কি ঘটেছিল, কারা এ জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সিভিল এভিয়েশনের গাফিলতি ও রহস্যজনক আচরণের দরুন তামান্নার পরিবার এখন আদালতে মামলা ঠুকে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ডাঃ আনিসুর রহমান। চাঞ্চল্যকর এই দুর্ঘটনার নয় মাস পর তামান্নার পরিবারের অভিযোগ-দুর্ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করা দূরে থাক, প্রাথমিক তদন্তে যেটুকু ওঠে এসেছে সেটাও ধামাচাপা দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি সিভিল এভিয়েশন। প্রশিক্ষকের ভুল, উদাসীনতা, ফ্লাইং ক্লাবের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অরাজকতা ও অপেশাদারিত্বের মতো কর্মকা-কে এ দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করার কারণেই সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে অতীতের অন্যান্য বিমান দুর্ঘটনার মতোই এটাও ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জনকণ্ঠকে জানান, এ দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত কখনই আশা করা যায় না। কারণ ফ্লাইং ক্লাবের যে সব কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও লুটপাটের জন্য বার বার এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে, যারা বার বার তদন্ত ধামাচাপা দিচ্ছে তারাই এখনও ঘাপটি মেরে আছেন সিভিল এভিয়েশনে। ফ্লাইট সেফটি রেগুলেশন বিভাগে যে ক’জন ফ্লাইট ইন্সপেক্টর রয়েছেন, তাদের নেই লাইসেন্সের মেয়াদ, নেই শারীরিক যোগ্যতা, দীর্ঘদিন ধরে তারা ফ্লাই করেন না, তাদের বয়সের মেয়াদও শেষ। অথচ তারাই এমন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ঘাপটি মেরে আছে বছরের পর বছর। এ ধরনের অযোগ্য ইন্সট্রাক্টর দিয়ে চালানো হচ্ছে উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের মতো পেশাগত কাজ। তারাই আবার জড়িত ফ্লাইং ক্লাবে। তারা যতদিন এ বিভাগে ঘাপটি মেরে থাকবে ততদিন এ সব দুুর্ঘটনার তদন্ত ধামাচাপাই পড়বে আর একটার পর একটা দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। উল্লেখ্য, গত বছর ১ এপ্রিল দুপুরে রাজশাহীর শাহ মাখদুম বিমানবন্দরের রানওয়েতে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির একটি প্রশিক্ষণ বিমান (সেসনা) বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন প্রশিক্ষণার্থী তামান্না রহমান। সফলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে আগের দিন সলো ফ্লাই করার পরদিনই ‘ফোর্সড ল্যান্ডিং’ প্রশিক্ষণ করতে গিয়েই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান এই প্রতিভাময়ী তরুণী। এ দুর্ঘটনায় ফ্লাইং একাডেমির প্রশিক্ষক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাঈদ কামালও আহত হন। পরে সিঙ্গাপুরে মাসাধিক কালের বেশি সময় চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনিও মারা যান। এ ঘটনার পর স্কোয়াড্রন লিডার প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে সিভিল এভিয়েশন। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- ক্যাপ্টেন এম মোস্তাক আলী, লুৎফুল কবির, আতাউল্লাহ হাশমী ও (কর্নেল অব) আব্দুল খালেক।
×